মাঠ সংকটের কারণে ধুলার মাঠে ফুটবল কিংবা ক্রিকেট খেলার দৃশ্য প্রায়শই দেখা যায়। কিন্তু এমন ধুলার মাঠে হকি খেলাটা খুব একটা দেখা যায় না। এমনিতেই হকি খুব পরিচ্ছন্ন জায়গায় খেলতে হয়। কারণ ছোট বলের খেলা বলে বলের নিয়ন্ত্রণ কিংবা স্কিল ধরে রাখতে হকির মাঠ হতে হয় পরিচ্ছন্ন এবং একেবারেই মসৃন। সে কারণে হকি খেলতে হয় টার্ফে। কিন্তু চট্টগ্রামে বলতে গেলে হকি অবহেলিত একটি খেলা। যেনতেনভাবে কোনো মতে খেলতে পারলেই যেন হল। চট্টগ্রামে এখনো পর্যন্ত হকির কোনো মাঠ গড়ে ওঠেনি। চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার মত প্রতিষ্ঠান হকি খেলার আয়োজন করে এলোমেলো ঘাসের মাঠে। তবে অন্য সব খেলার মত চট্টগ্রামে দু’একটি হকি প্রশিক্ষণ একাডেমি থাকলেও সেগুলো তাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করে ঘাস কিংবা বালির মাঠে। যা মোটেও হকি শেখার উপযোগী নয়।
গত কিছুদিন ধরে নগরীর নেভাল টু খ্যাত অভয়মিত্র ঘাট এলাকায় বেশ কিছু ছেলে হকি খেলছে বালির মাঠে। যা হকি খেলার উপযোগী তো নয়ই উল্টো ক্ষতির কারণ। চট্টগ্রাম মহানগর হকি একাডেমি নামক একটি হকি প্রশিক্ষণ একাডেমি তাদের ছাত্রদের এই বালির মাঠে হকি শেখাচ্ছে। শুধু শেখানো নয়, এরই মধ্যে একাডেমির ছাত্রদের নিয়ে একটি টুর্নামেন্টও আয়োজন করে ফেলেছে একাডেমিটি। একাডেমির আহ্বায়ক রনি দাশ জানালেন আসলে তাদের খেলার কোনো মাঠ নেই। কোথায় গিয়ে খেলবে তারা। তাই নিজেরা নেভাল টু এলাকার একটি জায়গাকে মাঠে পরিণত করে হকি খেলছে। তিনি নিজেও জানেন এই মাঠে হকি খেলা বা শেখা কোনো মতেই সম্ভব নয়। কিন্তু একেবারে অপারগ হয়েই সেখানে খেলতে হচ্ছে। যদিও তারা গত কয়দিন ধরে বাকলিয়া স্টেডিয়ামে তাদের অনুশীলন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। সেটিও হকি খেলার জন্য একেবারেই অনুপযুক্ত বলে জানান তিনি। তার প্রশ্ন কোথায় যাব আমরা। তার একাডেমিতে ৮০ জন ছাত্র থাকলেও নিয়মিত অনুশীলন করে প্রায় ৩০ জনের মত। স্কুল এবং কলেজের ছাত্ররা এই একাডেমিতে অনুশীলন করে। কিন্তু তাদের অনুশীলন করার মত কোনো মাঠ নেই। তাই আজ এখানে তো কাল ওখানে গিয়ে অনুশীলনের চেষ্টা করে। অনেকটা যাযাবরের মত। সামনে ময়মনসিংহে একটি টুর্নামেন্ট খেলতে যাবে মহানগর একাডেমির দুটি দল। মূলত সে টুর্নামেন্টকে সামনে রেখেই এখন চলছে তাদের প্রস্তুতি।
রনি দাশ জানান, তার একাডেমির যেসব কোচ রয়েছেন তারা নানা সময় জেলা লিগে খেলেছেন। কিন্তু তাদের প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও মাঠের অভাবে হকি অনুশীলনটা করতে হচ্ছে বালি কিংবা ঘাসের মাঠে। যেখান থেকে ছাত্রদের তেমন কিছু শেখার আছে বলেও মনে করেন না রনি। এদিকে সাবেক হকি খেলোয়াড় সাইফুল আলম বাবু এ ধরনের হকি শেখাকে প্রহসন বলে উল্লেখ করেন। পাশাপাশি তিনি স্বীকারও করেন কোথায় খেলবে হকি খেলোয়াড়রা। বালি কিংবা ঘাসের মাঠে ফুটবল কিংবা ক্রিকেট খেলা যাবে কিন্তু হকি কখনোই নয়। কারণ বালির মাঠে হকির বল আটকে যাবে। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম হকিতে পিছিয়ে থাকার একমাত্র কারণ মাঠের অভাব। এমনকি এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের যে মাঠে প্রথম বিভাগ হকি লিগ হয় তাও হকি খেলার উপযোগী নয়। তারপরও বাধ্য হয়ে কোনোমতে লিগ সম্পন্ন করতে হচ্ছে। তিনি জানান, চট্টগ্রামে হকির একটি টার্ফের দাবি দীর্ঘদিন ধরে করা হলেও এখনো তা আলোর মুখ দেখেনি।
হকি খেলায় ছোট একটি বলকে স্টিকের মাথা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। যে কারণে বল যত বেশি দ্রুত দৌড়াবে তত খেলোয়াড়দের স্কিল বাড়বে। কিন্তু বালি কিংবা ঘাসের মাঠে বল মোটেও দৌঁড়াবে না। অপরদিকে এই শীতের দিনে বালির মাঠে হকি কিংবা অন্য কোনো খেলা শিখতে গিয়ে উল্টো বিভিন্ন রোগ বালাইয়ের শিকার হচ্ছে শিশু-কিশোররা। ফলে একদিকে যেমন খেলা শেখার স্বপ্নটা থেকে যাচ্ছে অপূর্ণ তেমনি শ্বাসকষ্ট কিংবা অন্য একাধিক রোগের শিকারও হচ্ছে। ফলে খেলা শেখাতো দূরের থাক নিজের স্বাস্থ্য ঠিক রাখাটাও কঠিন হয়ে পড়ছে শিশু কিশোরদের। বর্তমানে চট্টগ্রাম শহরে মূলত হকি শেখানো হয় মিউনিসিপ্যাল মডেল হাই স্কুল মাঠে। কিন্তু সেটিও হকি শেখার জন্য উপযুক্ত নয় বলেই জানালেন সংশ্লিষ্টরা।