আমরা নাস্তা খাই যেভাবে

রফিক আহমদ খান | বৃহস্পতিবার , ৭ জানুয়ারি, ২০২১ at ৬:১৬ পূর্বাহ্ণ

রেস্তোরাঁয় ওয়েটারকে বললাম, ‘ওনাকে (সাথের জনকে দেখিয়ে) সিঙ্গারা-চমুচা দেন, আর আমাকে শুধু একটা সিঙ্গারা দেন। পরে চা দিয়েন দুইটা।’ ওয়েটার চটজলদি গিয়ে দুইজনের জন্য দুই প্লেটে নাস্তা নিয়ে এলো। দুই প্লেটেই একটা করে সিঙ্গারা, চমুচা ও দুইটা করে পিঁয়াজু দিল। ওয়েটারকে বললাম, ‘ আমাকে শুধু সিঙ্গারা দিতে বলেছি, এতো কিছু কেন দিলেন?’ ওয়েটার বললেন, ‘আপনি যা-খাবেন খান, সমস্যা নেই।’ আমি অবাক! ওয়েটারের দৃষ্টিতে সমস্যা নেই, কারণ আমি যা খাব তার দাম ধরবে বাকি খাবার ফেরত নিবে। কথা হচ্ছে আমাদের দেশে রেস্তোরাঁর মালিক-কর্মচারীরা যেটাকে কোনো সমস্যাই মনে করছেন না, প্রকৃতপক্ষে সেটাই এক বড় ধরনের সমস্যা আমাদের জন্য। আমাদের অসুখ-বিসুখের অন্যতম একটি কারণ হয়ত এটি। কারণ এই খাবার ফেরত নেওয়ার মাধ্যমে আমরা মূলত ঝুটা খাবার খাচ্ছি, অপরিষ্কার খাবার খাচ্ছি। সকালে যখন রেস্তোরাঁয় সিঙ্গারা-চমুচা-পিয়াজু-ডালপুরি বানায় তখন থেকে পরবর্তী কয়েক ঘন্টা কাস্টমারেরা এ-খাবারগুলো খান। একজন কাস্টমার চমুচা চাইলে তাকে সিঙ্গারা-চমুচা দুটোই দেন ওয়েটার। কেউ-কেউ দুটোই খান। কেউ-কেউ একটা খান, আরেকটা ফেরত নেন ওয়েটার। ওয়েটার সেটা হাত দিয়ে ধরে একবার প্লেটে দিয়েছেন, ফেরত নেওয়ার সময় আবার হাতে ধরে রাখছেন স্টকে। আরেকজন কাস্টমারের কাছ থেকেও খাবার ফেরত এনে হাতে ধরে স্টকে রাখছেন। অনেক সময় কাস্টমারও এটা খাবেন নাকি ওটা খাবেন ভেবে দুটোই ধরে দেখেন। একটা খেয়ে আরেকটা ফেরত দেন। এভাবে খাবার ধরতে-ধরতে প্রতিটা সিঙ্গারা-চমুচা কতোজনে আর কতবার যে হাতে ধরা হয় হিসাব নেই। এ-রকম কাণ্ড পৃথিবীর কোনো দেশে নেই। আমাদের দেশে রোগ-বালাই বেশি হওয়ার অন্যতম একটি কারণ হতে পারে এটি। আমাদের এই অভ্যাসের পরিবর্তন হওয়া দরকার। এ-জন্য দেশের সব রেস্তোরাঁয় খাবার নেওয়ার-দেওয়ার জন্য চিমটি ব্যবহার করা প্রয়োজন। ওয়েটার সরাসরি হাত দিয়ে ধরে নাস্তা প্লেটে নিবেন না। চিমটি দিয়ে নিবেন। আর কাস্টমার যা চাইবেন তা-ই দিবেন। তবে আমাকেও (কাস্টমার) খেয়াল রাখতে হবে নাস্তা সামনে আসার পর যেটা খাব না মনে হচ্ছে সেটা ছোঁবো না, ধরবো না। রেস্তোরাঁর মালিক-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে সচেতন করতে হবে। আগামীর উন্নত বাংলাদেশে মানুষের শরীর-স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে – এমন প্রত্যাশা করতেই পারি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনির্মোহ সৈয়দ আশরাফ
পরবর্তী নিবন্ধজনগণের কল্যাণ