আজ ৭ জানুয়ারি বর্তমান সরকারের দুই বছর পূর্ণ হচ্ছে। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের পর ২০১৯ সালের এই দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা তৃতীয় মেয়াদে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেয় আওয়ামী লীগ সরকার। বিশ্লেষকদের মতে, টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকায় সরকারকে নতুন করে কিছু ভাবতে হয়নি। ধারাবাহিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনায়ই সরকারকে ব্যস্ত থাকতে হয়েছে। এর মধ্যে বহুল আকাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হয়েছে। রাজধানীর যানজট নিরসনে যুগান্তকারী পদক্ষেপের অংশ হিসেবে মেট্রোরেল প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে। দেশের ইতিহাসে জাতীয় প্রবৃদ্ধি অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। গত দুই মেয়াদে সরকার যে উন্নয়নের মহাসড়কে যাত্রা শুরু করেছিল, তা থেকে বিচ্যুতি হয়নি। উন্নয়ন প্রক্রিয়া ও ধারাবাহিকতা অব্যাহত আছে। বলা যায়, সাফল্য, উন্নয়ন ও সম্ভাবনায় শেখ হাসিনার সরকার টানা তৃতীয় মেয়াদের বছরপূর্তি করছে।
বিশ্লেষকরা বলেন, অবাক বিস্ময়ে বিশ্ববাসী আজ বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া দেখছে। অনুকরণ করছে এদেশের সার্বিক উন্নয়নের চিত্র। এখন মানুষ স্বপ্ন দেখে না। বাস্তবতার জয়গান গায়। শেখ হাসিনা চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন। শুরুতে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের জন্য তিনি বিশ্বব্যাংকের সহায়তা চেয়েছিলেন। কাজ শুরুর আগেই অভিযোগ তোলা হয় দুর্নীতির। দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ জাতির পিতার কন্যা কারো আর্থিক সহায়তার চিন্তা বাদ দেন। চ্যালেঞ্জ নিতে জানেন তিনি। ঘোষণা দেন এই প্রকল্প কারো সহায়তা ছাড়াই তিনি সম্পাদন করবেন। করলেনও তাই। পদ্মা সেতু এখন বাংলাদেশের দৃশ্যমান এক বাস্তবতা। দেশের মানুষ এখন অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছেন এই প্রকল্প সমাপ্তির জন্য। দেশের অর্থনীতি রাজনীতির সবচেয়ে বড় মাইলফলকটি কবে উন্মোচিত হবে সেদিকে।
ফারাজী আজমল হোসেন তাঁর এক লেখায় বলেন, সূচনাটা ছিলো অনেক চ্যালেঞ্জের। চারিদিকে প্রতিকূলতা। দেশকে এগিয়ে নেয়ার দৃঢ় প্রত্যয়। অন্যদিকে শুধুই শূন্যতা। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সঙ্কট। বিদেশে তলাবিহীন ঝুড়ির অপবাদ। মাথাপিছু আয়ের ঘাটতি। বিশাল সংখ্যক মানুষের বেকারত্ব। শিক্ষায় এগিয়ে নেয়ার চ্যালেঞ্জ। স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ভগ্নদশা। মেগা প্রকল্পগুলোর বিরুদ্ধে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার ও তা কার্যকরের প্রতিশ্রুতি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করার নির্বাচনী ইশতেহারের ঘোষণা। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের প্রত্যাশা পূরণ। এ সবই করতে হয়েছে মাথা ঠাণ্ডা রেখে। পর্যায়ক্রমে। আর উন্নয়ন অগ্রগতির এই সরণীতে বাংলাদেশ শামিল হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। বাংলাদেশের সাফল্যে তাই বিশ্ব আজ উচ্ছ্বসিত।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ নিরাপদ। তাঁঝর নেতৃত্বেই এখানে উন্নয়নের নতুন যুগের সূচনা হয়েছে। নতুন এক উচ্চতায় সমাসীন হয়েছে প্রিয় বাংলাদেশ। উন্নয়ন অগ্রগতি সম্মান আর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার রোল মডেল একদার দক্ষিণ এশিয়ার দরিদ্রতম দেশ বাংলাদেশ। আর সেই সম্মান অর্জনের চালিকাশক্তি শেখ হাসিনা। জাতির জনকের যোগ্য উত্তরসূরি। উন্নত বিশ্ব আর উন্নয়নশীল বিশ্বের নতুন নেতা। নতুন সম্ভাবনার নাম শেখ হাসিনা।
বাংলানিউজ জানায়, দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে সরকারের আরেক চ্যালেঞ্জিং প্রকল্প দেশের সর্ববৃহৎ এবং প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ কাজ। যা নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শেখ হাসিনা এই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প গ্রহণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পারমাণবিক বিশ্বে পদাপর্ণ করে এবং বিশ্ব পরমাণু ক্লাবের সদস্য পদ লাভ করে। রাশিয়ার প্রযুক্তি ও সার্বিক সহযোগিতায় এক লাখ ১৩শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে দুই ইউনিট বিশিষ্ট এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০২৩ ও ২৪ সালে। এটা সরকারের গত ১২ বছরের সফলতার বড় একটি দিক।
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে দ্রুত এগিয়ে নিতে কৃষি, শিল্প উৎপাদনের পাশাপাশি অবকাঠামো, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ওপরও তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন। রাজধানী এবং রাজধানীর বাইরে বিশেষ করে ব্যবসা বাণিজ্যের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলকে বিবেচনায় নিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে এবং হচ্ছে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং শিল্পায়নের প্রসারেও সারা দেশে একশ’টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হয়েছে।
অর্থনীতিবিদরা বলেন, বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের বিস্ময়। বাড়ছে দেশের জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) পরিমাণ, বাড়ছে অর্থনীতির আকার। পাকিস্তানি দুঃশাসনের হাত থেকে স্বাধীনতা লাভ করার পর মাত্র কয়েক কোটি টাকার বাজেট নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল যে ছোট অর্থনীতির দেশটি, সেই দেশের বাজেট আজ পাঁচ লাখ কোটিকেও ছাড়িয়ে গেছে। ছোট্ট অর্থনীতির দেশটি আজ পরিচিতি পেয়েছে এশিয়ার ‘টাইগার ইকোনমি’ হিসেবে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি এখন বিশ্বের অনেক দেশের জন্যই উদাহরণ। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে বাংলাদেশ এখন নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ। এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার পথে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশ পৌঁছে যাবে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে।