আবারো চালক ও মালিকের ডাটাবেজ করার উদ্যোগ নিচ্ছে পুলিশ

টেক্সিতেই যত অপরাধ

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ৭ জানুয়ারি, ২০২১ at ৬:০০ পূর্বাহ্ণ

সিএনজি টেক্সি চুরি ও সিএনজি টেক্সিযোগে ছিনতাই বন্ধে ট্রাফিক পুলিশের নেয়া উদ্যোগ মুখ থুবড়ে পড়েছে। মালিক চালকদের অপরিণামদর্শিতার কারণেই এমনটি হয়েছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। এবারই প্রথম নয়; নগরীর রাস্তায় চলাচলের প্রথম দিন থেকেই বাহনটিকে যাত্রীবান্ধব করার লক্ষ্যে নানাবিধ পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছিল। কিন্তু সকল পরিকল্পনা ক’দিন যেতে না যেতেই মুখ থুবড়ে পড়ে। কখনো ট্রাফিক বিভাগের জনবল সংকটের কারণে, কখনো আবার চালক-মালিকদের নানা অজুহাতে। মিটারে ভাড়া আদায়, নিরাপত্তা গ্রিল সংযোজন, চালকের জন্য নির্দিষ্ট পোশাক বাধ্যতামূলক করা, যাত্রীর সিটের সামনে চালকের ছবিসহ পূর্ণাঙ্গ বিবরণ লেখা কাগজ লেমিনেটিং করে ঝুলিয়ে রাখা, চালকের হাতের ছাপ সংরক্ষণ, রেজিস্ট্রেশন ও ফিটনেস সার্টিফিকেট হালনাগাদ রাখা এবং মালিক চালকের ছবি ও পূর্ণাঙ্গ নাম ঠিকানা সম্বলিত ডাটাবেজ করাসহ নানাবিধ উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনোটিই আজ পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন হয়নি। ডাটাবেজ হালনাগাদের উদ্যোগটিও ব্যর্থ হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী-অপরাধীরা এখন সিএনজি টেক্সি চালক। ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি, মলম ও টানাপার্টির প্রধান থেকে শুরু করে পলাতক আসামিদের অনেকেই আত্মগোপনে থাকার কৌশল হিসেবে বেছে নিয়েছে সিএনজি টেক্সি চালানো। বিভিন্ন ধরনের অপরাধীদের সাথে সিএনজি টেক্সি চালক বিশেষ করে বদলি চালকদের সম্পৃক্ততা উঠে এসেছে পুলিশের একের পর এক অভিযানে।
নগরবাসীর জিজ্ঞাসা পরিবেশবান্ধব সিএনজি টেক্সি কি তবে যাত্রীবান্ধব হবে না? এ প্রশ্নের উত্তর দিলেন সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) শ্যামল কুমার নাথ। গতকাল তিনি আজাদীকে বলেন, সিএনজি টেক্সি নিয়ে আমাদের নিজস্ব কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। সিএনজি টেক্সি অপরাধে ব্যবহৃত হচ্ছে, মিটারে চলছে না, চালক মালিকদের পরিচয়পত্র ঝুলানো থাকে না- এ অভিযোগগুলোর সবকটিই সত্য। ডাটাবেজটার উপর আমরা জোর দিচ্ছি। পাশাপাশি সিএনজি টেক্সিকে যাত্রীবান্ধব কীভাবে করা যায়, সেটাও ভেবে দেখা হচ্ছে। যাত্রীদের সুবিধার্থে যদি সিএনজি টেক্সি না চলে তবে সড়কে এই গাড়িরতো কোনো প্রয়োজন নেই। ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০০৭ সালে সর্বপ্রথম নগরীতে চলাচলরত ১৩ হাজার সিএনজি টেক্সি চালক ও মালিকের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে ডাটাবেজ তৈরির কাজ শুরু করেছিল সিএমপি। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রত্যাশা ছিল এর ফলে একদিকে যাত্রী হয়রানি বন্ধ হবে, অন্যদিকে সিএনজি টেক্সি চুরি ও টেক্সি ব্যবহার করে ছিনতাই রোধ হবে। কিন্তু একাধিকবার সময় বাড়িয়েও সবকটি টেক্সিকে ডাটাবেজের আওতায় আনা যায়নি। দ্বিতীয় বারের উদ্যোগটিও ব্যর্থ হয় একই কারণে।
২০০৮ সালের ১ জানুয়ারি থেকে সিএনজি টেক্সি মিটারে চালাতে সিএমপির ট্রাফিক বিভাগ ব্যাপক অভিযান শুরু করে। পরবর্তীতে সিভিল টিম নামানো হয়। চালক স্বল্প দূরত্বে যেতে না চাইলে, যাত্রীর সাথে খারাপ আচরণ করলে, মিটার ছাড়া চলাচলকারী টেক্সি ও চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার দায়িত্ব ছিল সিভিল টিমের। কিছুদিন সুফলতা পেয়েছিলেন নগরবাসী। পরবর্তীতে উদ্যোগটি আর বেশিদূর এগোয়নি। এরপর বিভিন্ন সময় এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়, কিন্তু ক’দিন যেতে না যেতেই থেমে যেতে হয়।
মরার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো সিএনজি টেক্সি অপরাধীদের আস্থার বাহন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে চলন্ত অবস্থায় চালকের মোবাইল ফোন নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু নিষেধ মানা হয়নি এক্ষেত্রেও। সিএনজি টেক্সি ব্যবহার করে অপরাধ সম্পর্কে অনুসন্ধানে দেখা যায়, মালিক থেকে সারাদিনের জন্য টেক্সি ভাড়া নেয় চালক। উক্ত চালক ১০০০ টাকা বা ১৫০০ টাকার বিনিময়ে বদলি চালককে গাড়ি ভাড়া দেয়। ফলে বদলি চালকের ছবি বা তথ্য মালিকের কাছে থাকে না, গাড়িতেও থাকে না। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণে এবং মূল চালকের গাড়ি চালনা নিশ্চিত করতে নগরীতে চলাচলরত টেক্সি চালককে তার বিস্তারিত বিবরণ ও ছবি সম্বলিত আইডি কার্ড সরবরাহ করা হয়েছে। কিন্তু চালকের জীবন বৃত্তান্ত গাড়িতে ঝুলিয়ে রাখার এ নিয়মটিও মানছেন না কোনো চালক।
কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন আজাদীকে বলেন, ১০ ডিসেম্বর থেকে পৃথক অভিযানে ছয় ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা সকলে পেশাদার ছিনতাইকারী। নগরীতে সিএনজি টেক্সি নিয়ে ছিনতাই করে বেড়ায় তারা। কয়েকটি ছিনতাইয়ের পর বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে আত্মগোপন করে। পরে কিছুদিন পর ফের চট্টগ্রামে আসে ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে। এর আগে ২৫ নভেম্বর নগরীর কোতোয়ালী এলাকায় অভিযান চালিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা জালিয়াত চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরাও তাদের অপরাধ কর্মকাণ্ডে সিএনজি টেক্সি ব্যবহার করে। গত ১৭ নভেম্বর বগারবিল ও দেওয়ানবাজার এলাকা থেকে রাকিব, নিপা ও রাশেদ নামে অপর একটি ছিনতাই চক্রের সন্ধান পাওয়া যায়, যারা অপরাধ কর্মকাণ্ডে সিএনজি টেক্সি ব্যবহার করে। ৯ অক্টোবর চান্দগাঁও থানাধীন মৌলভীপুকুর পাড় এলাকায় গণধর্ষণের ঘটনায় তিনজন ধরা পড়ে। পরে তাদের অতীতের অপরাধ কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা কালে দেখা যায়, এরা সবাই রাতে সিএনজি টেক্সি চালক হিসেবে কাজ করে। চালকের আড়ালে মূলত তারা ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত। নগরীর খুলশী এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২৮ সেপ্টেম্বর তিন পেশাদার চোরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে একটি সিএনজি টেক্সি ও বিভিন্ন চোরাই মাল, নগদ টাকা ও চুরি করার সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। নগরীর চান্দগাঁও থানাধীন বাহির সিগন্যাল এলাকা থেকে সিএনজি টেক্সি করে অস্ত্র নিয়ে যাওয়ার সময় ২৭ সেপ্টেম্বর তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ সময় অপরাধ কাজে ব্যবহৃত সিএনজি টেক্সিটি জব্দ করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাতকানিয়ায় দুটি অবৈধ ভাটা গুঁড়িয়ে দিল প্রশাসন
পরবর্তী নিবন্ধহাসপাতাল থেকে বের হয়ে নিখোঁজ চবি শিক্ষার্থী