মেয়েকে ধর্ষণের ঘটনায় বাবার যাবজ্জীবন

ঘটনাটি নৈতিকতার চূড়ান্ত অবক্ষয় : রাষ্ট্রপক্ষ

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ৬ জানুয়ারি, ২০২১ at ৬:৩৬ পূর্বাহ্ণ

ফটিকছড়ির ভূজপুরে নিজের ১২ বছরের মেয়েকে ধর্ষণের ঘটনায় বাবাকে (৪০) যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। গতকাল মঙ্গলবার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মুনসী আব্দুল মজিদ একমাত্র আসামির উপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করেন।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিশেষ পিপি অ্যাডভোকেট খন্দকার আরিফুল আলম গতকাল আজাদীকে বলেন, ট্রাইব্যুনাল এ মামলায় ধর্ষণের ঘটনায় আসামিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করেছেন। অর্থদণ্ড অনাদায়ে আসামিকে আরও তিন মাসের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। একই আসামির বিরুদ্ধে পৃথক ধারায় ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনায় ৫ বছরের কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করেছেন আদালত। এ অর্থদণ্ড অনাদায়ে আসামিকে আরও তিন মাসের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
ট্রাইব্যুনালের পিপি অ্যাডভোকেট খন্দকার আরিফুল আলম বলেন, আসামির এ দুটি সাজা একসাথেই কার্যকর করা হবে। আসামির হাজতবাসের সময় থেকে সাজার মেয়াদ শুরু হবে। মামলা দায়েরের পর থেকে আসামি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে কারাগারে রয়েছে বলে জানান তিনি।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর পাশাপাশি আসামিপক্ষে আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া মামলার বাদী উপস্থিত থাকলেও ভিকটিম অনুপস্থিত ছিল।
মামলার এজহারে জানা যায়, ২০১৯ সালে ১৮ জুন ফটিকছড়ির ভূজপুরে বাসায় কেউ না থাকার সুযোগে মেয়েকে ধর্ষণ করে বাবা। ওই ঘটনার চৌদ্দ দিনের মাথায় পুনরায় ধর্ষণ চেষ্টা চালালে পরিবারের সদস্যদের কাছে বিষয়টি ধরা পড়ে। এ ঘটনায় ওই বছর ৩ জুলাই মেয়েটির মা তার স্বামীর বিরুদ্ধে ভূজপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। এ সময় আসামির বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ৯ (১) ধারায় ধর্ষণ এবং ৯(৪) ‘খ’ উপধারায় ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়। এর আগে ২০১৯ সালে ৩০ সেপ্টেম্বর ভূজপুর থানা পুলিশ বাবাকে একমাত্র আসামি করে অভিযোগপত্র জমা দেয়। পুলিশের অভিযোগপত্রে মোট ১৩ জন সাক্ষী রাখা হয়েছিল। গত বছর ৫ মার্চ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। এসময় রাষ্ট্রপক্ষ ট্রাইব্যুনালে ১১ জন সাক্ষীকে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়। এরমধ্যে দু’জন সাক্ষী হচ্ছেন চিকিৎসক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। বাকিরা সাধারণ সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দেন।
ট্রাইব্যুনালের পিপি বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ এ মামলায় ডাক্তারি পরীক্ষার রিপোর্ট, ভিকটিম ও ভিকটিমের মায়ের জবানবন্দি রেকর্ড গ্রহণসহ ১১ জন সাক্ষীকে ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করার মাধ্যমে আসামির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে।
ঘটনাটি সমাজে চূড়ান্ত নৈতিক অবক্ষয়ের দৃষ্টান্ত : বাবার হাতে মেয়ে ধর্ষণের ঘটনা সমাজ চূড়ান্ত নৈতিক অবক্ষয়ে পৌঁছার একটি দৃষ্টান্ত বলে মনে করছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। এ ধরনের ঘটনা যাতে আর কখনো না ঘটে সেজন্য ট্রাইব্যুনাল আসামিকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলী অ্যাডভোকেট খন্দকার আরিফুল আলম বলেন, মামলার পর একটি সময় এসে বাদীপক্ষ কয়েকবার আপোষনামা দাখিলের মাধ্যমে আসামিকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদনের পাশাপাশি ক্ষমা করে দেয়ার প্রার্থনা করেছিলেন। আসামির জামিনও চাওয়া হয়েছিল। এসময় কান্নাকাটি করাসহ বাদী অনেক আকুতি মিনতি করেছিলেন। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ স্পর্শকাতর এই ঘটনার ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেয়নি। বাদী কয়েক দফা আপোষ করতে চাইলেও রাষ্ট্রপক্ষ তাতে আপত্তি করেছিল।
পিপি বলেন, ইচ্ছার বিরুদ্ধে করা জঘন্যতম এ কাজটিতে ভিকটিম মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আসামির আরও একটা মেয়ে আছে। তার ওপরেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এ ধরনের ঘটনায় রাষ্ট্রপক্ষ কোনো আপোষ করেনি বলে জানান তিনি। রাষ্ট্রপক্ষ মনে করেছে, এ ঘটনায় বাদীর আপোষনামার ভিত্তিতে আসামিকে যদি অব্যাহতি প্রদান করা হত তাহলে সমাজে নেতিবাচক প্রভাব পড়ত।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশুল্কায়ন জটিলতায় ট্যাংকে আটকা ৬০ কোটি টাকার মেরিন ফুয়েল
পরবর্তী নিবন্ধডাস্টবিনে কেন ঠাঁই