মনছুরাবাদে আরেকটি পুকুর ভরাটের প্রস্তুতি

১৫দিনে ভরাট হয়েছে তিনটি শতবর্ষী পুকুর

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ৪ জানুয়ারি, ২০২১ at ৬:৪২ পূর্বাহ্ণ

নগরীতে একে একে হারিয়ে যাচ্ছে জলাধার। একশ্রেণির ভূমিপুত্রদের দৌড়াত্ম্যে একসময় হয়তো শ্মশান হয়ে উঠবে বাণিজ্যিক রাজধানীর তকমাধারী শহরটি। তারই চিত্র ফুটে উঠছে নগরীর মনছুরাবাদে। যেখানে গত ১৫দিনে ভরাট হয়েছে তিনটি শতবর্ষী পুকুর। আরো একটি ভরাটের প্রস্তুতি নিয়েছে প্রভাবশালীরা। তবে পুকুর ভরাট নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর মাঝে মধ্যে জরিমানা করে দায় সারলেও ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ এসবের দায় নেয় না।
জানা যায়, প্রায় ৭০ লাখ বাসিন্দার নগরী চট্টগ্রাম। চট্টগ্রামে বিগত কয়েক দশকে ভরাট হয়েছে অসংখ্য পুকুর। সঙ্গত কারণে চট্টগ্রাম মহানগরীতে কমে আসছে জলাধার। এতে যেমনটি পরিবেশ বিপর্যস্ত হচ্ছে, তেমনি অতিমাত্রায় অগ্নিঝুঁকিতে পড়ছে জনবসতিগুলো। বিশেষ করে জলাধার সংকটে অগ্নিদুর্ঘটনায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হয় ফায়ার সার্ভিসকে। রোববার বিকেলে সরেজমিন জানা গেছে, মনছুরাবাদ খান সাহেব আবদুল হাকিম মিয়া সড়কের মিয়া বাড়িতে গুরা পুকুরটি ভরাট করছেন প্রভাবশালীরা। পুকুরটির তিনদিক বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘেরাও করে ভরাট চলছে। ড্রামট্রাকে পুরনো দালান ভাঙা কংকর দিয়ে পুরো পুকুরটি ভরাট করা হচ্ছে। পাশেই রয়েছে হাজী ইদ্রিস মিয়া তাহফিজুল কুরআন মাদ্রাসা ও এতিমখানা নামের ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। স্থানীয়দের মতে, প্রায় ৮ শতকের পুকুরটি ভরাট করা হচ্ছে। গত ১৫ দিনের মধ্যে আরো দুটি পুকুর ভরাট করেছে চক্রটি। তন্মধ্যে বোমবারি পুকুরটি প্রায় ২৪ শতকের। অন্যদিকে ভাডার পুকুরটির আয়তন প্রায় ১৪ শতক। এছাড়া আফছালি পুকুর নামের আরেকটি পুকুর ভরাটের প্রস্তুতিও রয়েছে বলে জানা গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, ‘বোমবারি পুকুর ভরাট করেছেন ইকবাল সফি, ফেরদৌস মিয়া। ভাডার পুকুরটিও ভরাট করেছেন ইকবাল সফি। গুরা পুকুর ভরাট করছেন ফেরদৌস মিয়া, টিপু মিয়া, ইব্রাহিম মিয়া ও ইকবাল মিয়া। তিনি বলেন, ‘পুরো মনছুরাবাদ জুড়ে ৩৫ হাজার বস্তি ও কলোনী বাসা রয়েছে। পুকুরগুলো ভরাট হয়ে গেলে আগুন নিভানোর কোন পানি পাওয়া যাবে না। গত ১৫ দিনে দুটি ভরাট করা হয়েছে। এখন আরেকটি ভরাট চলছে।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডীন অধ্যাপক এবিএম আবু নোমান রোববার সন্ধ্যায় দৈনিক আজাদীকে বলেন, আইনে কোন পুকুর ভরাটের সুযোগ নেই। পুকুর ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করাও নিষিদ্ধ। শতবর্ষী এসব পুকুর কিংবা জলাধার ভরাট হলে পরিবেশের ভারমাস্য নষ্ট হবে। নগরীর সৌন্দর্য বিলীন হবে। তিনি বলেন, শহরকে অগ্নিকাণ্ড কিংবা অন্যান্য প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করে জলাধারগুলো। কোন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে ফায়ার সার্ভিস নিজেদের গাড়ির পানি দিয়ে বড় দুর্ঘটনা মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে স্থানীয় জলাধারগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এসব জলাধার হারিয়ে গেলে ভবিষ্যতে অগ্নিঝুঁকিতে আরো বেশি ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা তৈরি হবে। এসব জলাধার রক্ষায় পরিবেশ অধিদপ্তরের পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও কঠোর এবং কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
এবিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগরের উপ-পরিচালক মিয়া মাহমুদুল হক দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘মনছুরাবাদ এলাকায় যেসব পুকুর ভরাটের অভিযোগ উঠেছে, আমরা পুকুর ভরাটের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবো।

পূর্ববর্তী নিবন্ধগুলজার মোড়ে চশমা দোকানে হামলা
পরবর্তী নিবন্ধসুপ্রিম কোর্টে মীর নাছিরের জামিন