বাংলাদেশে শিক্ষার সিংহভাগ বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত। বলা যায় প্রায় ৯৫ ভাগ। সামপ্রতিক বৈশ্বিক করোনা মহামারী প্রাদুর্ভাব সংকটে সরকারি ও বেসরকারি সকল স্কুল, কলেজ ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। ফলে বর্তমানে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে নানামুখী সমস্যা ও সংকট সৃষ্টি হয়েছে। সৃষ্ট সমস্যা ও সংকট সমাধানের জন্য সরকারি ও বেসরকারিভাবে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সকলের চেষ্টাও অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু গত দুই বছর ধরে বেসরকারি উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক পর্যায়ের কলেজসমূহে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ নিয়োগে সৃষ্টি হয়েছে এক ধরনের সংকট। বিদ্যমান এই সমস্যা ও সংকট নিরসনের কোন কার্যকর উদ্যোগ না থাকার ফলে সারাদেশে বেশিরভাগ বেসরকারি কলেজ পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় যোগ্যতাসম্পন্ন দক্ষ অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের শূন্যপদে নিয়োগ দেয়া যাচ্ছে না। অথচ বেসরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদে সৎ, মেধাবী, দক্ষ ও আধুনিক প্রযুক্তিগত জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিদের নিয়োগ দেয়া উচিত। কারণ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা এখন আধুনিক ডিজিটাল রূপান্তরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। করোনা মহামারী প্রাদুর্ভাব শিক্ষায় ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনকে আরো ত্বরান্বিত করেছে। বিশ্বমানের শিক্ষা নিশ্চিত করা এবং ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি-৪ অর্জনে শিক্ষায় ব্যাপক সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণও জরুরি ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করতে হবে। এ জন্য বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনায় যুগোপযোগী পরিবর্তন সাধন প্রয়োজন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সরকারি নীতি নির্ধারক পর্যায়ে যে সিদ্ধান্ত হয় তা বাস্তব সম্মত নয় বলেই প্রতীয়মান হয়েছে। নীতি নির্ধারণ পর্যায়ে প্রায়ই দেখা যায় মাঠ পর্যায়ের শিক্ষা কাঠামো ও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে অনেকের বাস্তব জ্ঞান নেই এমন ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে শিক্ষকদের উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব না থাকায় এই সমস্যার উদ্ভব হয়েছে। যদিও জাতিসংঘের বিশেষায়িত সংস্থা ইউনেস্কোর উদ্যোগে ১৯৬৬ ও ১৯৯৭ সালের প্যারিসে অনুষ্ঠিত আন্তঃসরকার সম্মেলনে ‘শিক্ষকদের অধিকার, মর্যাদা ও করণীয়’ বিষয়ে গৃহীত সুপারিশমালার কয়েকটি ধারা অনুযায়ী শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়, শিক্ষকদের চাকরির শর্তাবলি ও বেতন ভাতা নির্ধারণ এবং শিক্ষা কারিকুলাম নিয়ে যে কোন সরকারি পর্যায়ের সিদ্ধান্ত শিক্ষক সংগঠন সমূহের উপযুক্ত প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ২০১০ সালে জারিকৃত ‘জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা’ প্রণয়নে শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ কমিটির সদস্য ছিলেন বিধায় এই নীতিমালা মোটামুটি গ্রহণযোগ্য ছিল কিন্তু ২০১৮ সালে জারিকৃত জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা প্রণয়নে শিক্ষক সংগঠনের প্রতিনিধিই রাখা হয়নি বা সংগঠন সমূহের সাথে আলোচনাও করা হয়নি। এমনকি শিক্ষা সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের সাথেও কথা হয়নি। পুরোপুরি আমলাতান্ত্রিক সিদ্ধান্তে এই কাঠামো প্রণীত হয়েছে বলে জানা গেছে। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় যা কারো কাম্য নয়। ২০১৮ সালের নীতিমালার কতিপয় ধারা উপধারা নিয়ে শিক্ষক নেতৃবৃন্দ আপত্তি করায় একটি নীতিমালা সংশোধন কমিটি করা হয়েছে সেখানেও উপযুক্ত শিক্ষক সংগঠনের প্রতিনিধি স্থান পায়নি। ২০১৮ সালে জারিকৃত জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী বেসরকারি কলেজে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ নিয়োগে সহকারী অধ্যাপক হওয়ার শর্তারোপ করা হয়েছে, এটার কোন যৌক্তিকতা নেই। কারণ প্রথমত বেসরকারি কলেজে শিক্ষক হিসেবে এন্ট্রি লেভেলের প্রথম পদবি হচ্ছে প্রভাষক। প্রভাষকের পর পদোন্নতি পায় সহকারী অধ্যাপক। কিন্তু সহকারী অধ্যাপকের উপরে কোন পদোন্নতি নেই, আবার কর্মক্ষেত্রে একজন প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপকের মধ্যে কোনো মৌলিক পার্থক্যও নেই। কেননা বেসরকারি কলেজে একজন প্রভাষক যে কাজ করেন, একজন সহকারী অধ্যাপকও সেই একই ধরনের কাজ করে থাকেন অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের পাঠদান, পরীক্ষাগ্রহণ, মূল্যায়ন, প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কাজ একই। সুতরাং আলাদা করে ৩ বছর বা ৫ বছরের সহকারী অধ্যাপক পদের অভিজ্ঞতার গুরুত্ব আছে বলে মনে হয় না। তাই গুটি কয়েক সহকারী অধ্যাপক ছাড়া বাকি প্রভাষকরা যোগ্য, অভিজ্ঞ, মেধাবী ও দক্ষ হওয়া সত্ত্বেও জীবনে সহকারী অধ্যাপক হতে না পারার কারণে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ হতে পারবে না। এই নীতি বৈষম্যমূলক, অমানবিক এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিপন্থী ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না। যা সংবিধানের মূল নীতির সাথে সাংঘর্ষিক।
আবার একই রাষ্ট্রে দু’ধরনের ব্যবস্থা বিদ্যমান অর্থাৎ সরকারি কলেজের শিক্ষকগণ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রতি বছর সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেয়ে যান অথচ সমযোগ্যতা, সমদায়িত্ব ও সমঅভিজ্ঞতা নিয়ে একই কারিকুলামে একই সিলেবাসে পাঠদান, পরীক্ষা গ্রহণ ও মূল্যায়ন করার কাজ করে বেসরকারি শিক্ষকদের সহকারী অধ্যাপকের উপর পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে না। তাও অনুপাত প্রথার কারণে হাজার হাজার প্রভাষকদের ২০/৩০ বছর লাগে। অনেকেই প্রভাষক থেকেই চাকরি থেকে অবসর নিতে হয়। প্রদত্ত অধিকার কেড়ে নেয়ার নজির না থাকলেও সমপ্রতি উচ্চ মাধ্যমিক, মাদ্রাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানে প্রদত্ত সহকারী অধ্যাপক পদ বিলুপ্ত করে একই গ্রেডে সিনিয়র প্রভাষক করার প্রস্তাব করা হয়েছে মর্মে গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। শিক্ষা কাঠামোতে এর চেয়ে বৈষম্য ও অমানবিক ব্যবস্থা আর কি হতে পারে? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, আদর্শ ও অঙ্গীকার বাস্তবায়ন এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য যে সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছেন এই বৈষম্য কি তার সাথে সাংঘর্ষিক নয়? বেসরকারি স্কুল ও কলেজের জন্য ঘোষিত ২০১৮ সালের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা অনুসারে প্রভাষক থেকে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ নিয়োগের সুযোগটি প্রকারান্তরে বন্ধ হয়ে গেছে, যার ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা হুমকির মুখে পড়েছে।
জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা’২০১০ অনুসারে প্রভাষক পদে কলেজে দীর্ঘ ১২ বছর দক্ষতার সাথে শিক্ষকতার পর উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের অধ্যক্ষ ও ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ পদে আবেদনযোগ্য প্রার্থী হতে পারতো। একই নীতিমালা অনুসারে ১৫ বছর শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকলে প্রভাষকরা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ পদে প্রার্থী হতে পারতো। ফলে সারা বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপকের অংশগ্রহণে তীব্র প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সর্বাধিক যোগ্য প্রার্থী অধ্যক্ষ অথবা উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগের জন্য যোগ্য বিবেচিত হতেন। যা জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০১৮ এর মূল প্রজ্ঞাপনেও ছিলো।
দুঃখের বিষয় হলো গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ তারিখ শিক্ষামন্ত্রণালয় থেকে নথি নং ৩৭.০০.০০০০.০৭৪.০৩০.০০১.২০১৭.৫৯ স্মারকে জারি হওয়া ২০১৮ এর জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালার সংশোধিত পরিপত্রে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ নিয়োগের ক্ষেত্রে কুখ্যাত জনবল কাঠামো ১৯৯৫-এর মতো হুবহু শর্তারোপ করা হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন হাজার হাজার যোগ্য প্রার্থী।
২০১৮ সালের জনবল কাঠামো ও এমপিও’র সংশোধিত নীতিমালা অনুযায়ী উচ্চ মাধ্যমিক কলেজে অধ্যক্ষ ও ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ পদে শুধু ৫:২ অনুপাতে পদোন্নতি পাওয়া সহকারী অধ্যাপকের ৩ বছরের অভিজ্ঞতাসহ সর্বমোট ১২ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন প্রার্থীরাই আবেদনের যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন এবং ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ হতে হলে উচ্চমাধ্যমিক কলেজের অধ্যক্ষ অথবা ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ পদে ৩ বছরের অভিজ্ঞতা সহ মোট ১২ বছরের শিক্ষকতায় অভিজ্ঞ প্রার্থীরাই যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।
এমন শর্তের ফলে পূর্বের (২০১০ নীতিমালা অনুসারে) আবেদনযোগ্য প্রার্থী হিসেবে প্রভাষকদের আবেদন করার সুযোগ থেকে চিরতরে বঞ্চিত করা হয়েছে। বেসরকারি কলেজে কোনো প্রভাষক ৫:২ অনুপাত প্রথার কারণে সহজে সহকারী অধ্যাপক হতে পারবে না বিধায় সে যত মেধাবী বা দক্ষতাসম্পন্ন হোক না কেন সারা জীবনে অধ্যক্ষ কিংবা উপাধ্যক্ষ হতে পারবে না আর চাকুরি শেষে প্রায় সবাকেই প্রভাষক পদবি নিয়েই অবসরে যেতে হবে।
উল্লেখ্য সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির প্রধান শর্ত ৮ বছর প্রভাষক পদে অভিজ্ঞতা, যেখানে শিক্ষাগত যোগ্যতা বা পেশাগত উৎকর্ষতা বা এই পদের জন্য কোনো পরীক্ষার ফলাফল কিছুই দেখা হয় না। শুধু ৫:২ (অর্থাৎ ৭ জন প্রভাষকের মধ্যে মাত্র ২ জন) অনুপাতের ভিত্তিতে অটো প্রমোশন (কোন রকম পদোন্নতি পরীক্ষা ছাড়া) প্রাপ্ত হয়। দেখা যায় যেসব কলেজে ৪-৬ জন প্রভাষক আছে সেসব কলেজে ১ জন সহকারী অধ্যাপক আছে। কুখ্যাত ৫:২ অনুপাত প্রথাতো আছেই অন্যদিকে কমিটির সমস্যা ও মামলার বেড়াজালসহ আরো অনেক কারণে কোনো কোনো কলেজে সহকারী অধ্যাপক ১ জনও নেই। ফলে একটি জেলা বা উপজেলায় সহকারী অধ্যাপকের সংখ্যা হাতে গোনা কয়েকজন এবং সারাদেশে খুব অল্প সংখ্যক। এদের মধ্যে অনেকেই অধ্যক্ষ হতে আগ্রহী নয় অথবা শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুতও নয়। এ অল্প সংখ্যক সহকারী অধ্যাপক নিয়ে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ প্রতিযোগিতা হয় না। বরং বেশির ভাগই দুর্নীতি বা স্বজন প্রীতির মাধ্যম নিয়োগ দেয়া হচ্ছে।
বিগত দিনে যেখানে বিপুলসংখ্যক যোগ্য প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপকদের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতার মাধ্যমে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ বাছাই হতো, সেখানে মাত্র অল্পসংখ্যক প্রার্থীদের মধ্যে নিষ্প্রাণ প্রতিযোগিতার ফলে যোগ্য প্রার্থীর অভাব দেখা দিয়েছে। যোগ্য প্রার্থীর অভাবে অনাগ্রহী প্রার্থীদের দ্বারা প্রঙি দেওয়ানো হচ্ছে এবং দুর্নীতি করে টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন কলেজে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ নিয়োগ দেয়া হচ্ছে।
আর যে সব কলেজ স্বচ্ছভাবে যোগ্য অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ নিয়োগ দিতে চাচ্ছে তারা জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮ অনুসারে যোগ্য প্রার্থী না পেয়ে মারাত্মক সংকটে পড়েছে। বার বার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েও নিয়োগ দিতে পারছে না। এতে কলেজের প্রশাসনিক ও ব্যবস্থাপকীয় কর্মকান্ড ও শিক্ষা ক্ষেত্রে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। অনেক ডিগ্রি কলেজ কয়েক বার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েও বিধি অনুযায়ী যোগ্য প্রার্থী না পাওয়ায় অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের শূন্য পদে নিয়োগ দিতে পারছে না। অনাগ্রহী অথবা শারীরিক ও মানসিকভাবে অপ্রস্তুত সহকারী অধ্যাপকদের ভারপ্রাপ্ত হিসেবে অধ্যক্ষ নিয়োগ দিয়ে চালাতে হচ্ছে কলেজ। এতে প্রতিষ্ঠান ও দেশের অনেক বড় ধরনের ক্ষতি হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে শিক্ষা ব্যবস্থায় স্থবিরতা নেমে আসাটা অস্বাভাবিক নয়।
এই সমস্যা সমাধানের জন্য অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে জনবল কাঠামো ২০১০ এবং ২০১৮ (মূল) এর পরিশিষ্ট ‘ঘ’ (ক. বিদ্যালয়:১ এবং খ. কলেজ: ১,২,৩,৪) এর নিয়ম বহাল রাখতে হবে। অর্থাৎ প্রভাষক/সহকারী অধ্যাপক পদে ১২ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকলে ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ ও উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের অধ্যক্ষ এবং প্রভাষক/ সহকারী অধ্যাপক পদে ১৫ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকলে ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে আবেদন করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে প্রতিযোগীতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ নিয়োগ দেয়া হবে অথবা প্রভাষকদের অভিজ্ঞতার ব্যাপ্তি একটু বৃদ্ধি করে উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের অধ্যক্ষ ও ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষের ক্ষেত্রে ৩ বছর বাড়িয়ে ১২ বছরের পরিবর্তে ১৫ বছর করা যেতে পারে আর ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষের জন্যে ৩ বছর বাড়িয়ে ১৮ বছর করা যেতে পারে। মোট কথা হচ্ছে অভিজ্ঞ প্রভাষকদের অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ পদে আবেদনের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে।
এই প্রস্তাবের সাথে বিকল্প হিসেবে জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০১৮ সংশোধন কল্পে বাংলাদেশের প্রাচীন শিক্ষক সংগঠন বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি-বাকশিস গত ২৬ জুলাই ২০২০ তারিখে প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা উপমন্ত্রী ও শিক্ষা সচিব সমীপে প্রদত্ত ১১ দফা প্রস্তাব অনুযায়ী বেসরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক পদোন্নতিতে ৫ঃ২ অনুপাত প্রথা বিলুপ্ত করে ৮ বছর পর সহকারি অধ্যাপক পদে পদোন্নতি প্রদান এবং সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন পূর্বক সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দিয়ে বেসরকারি কলেজে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ পদে সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপক পদ থেকেও অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ নিয়োগের জন্য প্রার্থী বাচাই করা যায়। এতে সবাই আবেদনের সুযোগ পাবে। বাড়বে প্রতিযোগিতা, কমবে দুর্নীতি, প্রতিষ্ঠিত হবে মেধা ও দক্ষতা। ফলে শিক্ষার মান যেমনি বৃদ্ধি পাবে তেমনি দ্রুত দেশের অগ্রগতি সাধিত হবে। শিক্ষকতা পেশায় মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে এর কোন বিকল্প নেই।
গত কয়েক বছর যাবৎ শিক্ষকদের প্রাচীন ও অভিজ্ঞ শিক্ষক সংগঠন বাকশিস, বাশিসসহ শিক্ষক সংগঠন সমূহ এবং শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ বেসরকারি স্কুল,কলেজসহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের জন্য জাতীয় শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যায়ন কর্তৃপক্ষ (ঘঞজঈঅ) অথবা জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ এর বিধান অনুযায়ী ‘বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ কমিশন’ এর ব্যবস্থাপনায় প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগের জন্য দাবি জানিয়েছে। শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করা এবং এসডিজি-৪ অর্জনের লক্ষ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনায় উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান প্রধান নিয়োগে এই প্রস্তাবটিও অতীব গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে সরকার দ্রুত বিবেচনায় নিতে পারে।
লেখক : সহ-সভাপতি, কেন্দ্রীয় কমিটি ও সাধারণ সম্পাদক
চট্টগ্রাম জেলা কমিটি, বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি-বাকশিস