ইংরেজি নববর্ষ ২০২১ উদযাপনের আনন্দে বাধা হতে পারেনি ‘কোভিড-১৯’। নববর্ষের প্রথম দিনে উপচেপড়া ভিড় জমেছে বিনোদন স্পটগুলোতে। পতেঙ্গা সৈকত, ফ’য়স লেক চিড়িয়াখানা, কনকর্ড সী ওয়ার্ল্ড, আগ্রাবাদ জাম্বুরি ফিল্ড ছাড়াও ভ্রমণ পিপাসুরা ভিড় জমিয়েছেন বায়েজিদ লিংক রোড এবং শাহ আমানত ব্রিজেও। তাছাড়া পারকি বিচেও ভিড় জমে লোকজনের। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধির বালাই ছিল না। তবে চিড়িয়াখানা ও সী ওয়ার্ল্ডে মাস্কবিহীন প্রবেশে কড়াকড়ি ছিল।
২০২০ সালটি ছিল জনজীবনে সবচেয়ে বিষাদ ও সংকটের বছর। বিশেষ করে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সারা বিশ্ব স্থবির হয়ে পড়ে। একে একে বন্ধ হয়ে যায় শিল্প কারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, অফিস, আদালত, গণপরিবহন। বন্ধ হয়ে যায় হোটেল রেস্তোঁরাও। বিশ্বের দেশে দেশে হানা দেয় আর্থিক মন্দা। সংকুচিত হয়ে আসায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয় পর্যটন খাত। এখনো বন্ধ রয়েছে বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। করোনার প্রথম ধাপের সংক্রমণ শেষে স্বাস্থ্যবিধি ঘোষণা করে অফিস আদালত খোলার সুযোগ দেওয়া হয়। এখন দ্বিতীয় ধাপে ছড়াচ্ছে করোনা ভাইরাস। বর্তমানে টিকা আসার খবরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে পুরো বিশ্ব।
এদিকে করোনা ভাইরাসের কারণে বাংলাদেশে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় উৎসব রমজানের ঈদ কেটেছিল ঘরে বসেই। নতুন জামার আনন্দ ছিল না ঈদে। পরবর্তীতে কোরবানির ঈদে কিছুটা স্বাভাবিকতা থাকলেও অন্য বছরের চেয়ে ভিন্নতা ছিল। করোনা ভাইরাস মরণঘাতী হলেও ক্ষুধার তাড়া মানুষকে বাধ্য করেছে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে। বিগত দুয়েক মাস ধরে প্রায় স্বাভাবিক হতে শুরু করে জনজীবন। সরগরম হয়ে উঠে বাজার, মার্কেট। স্বাস্থ্যবিধি মানাতে সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া হয় নানান পদক্ষেপ। মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চলে হোটেল, রেস্তোঁরা, বাজার, মার্কেটসহ জনবহুল এলাকাগুলোতে।
সবকিছুকে ছাড়িয়ে পুরোনো বছরের জীর্ণতা ও করোনার বিষ ছাড়িয়ে একটি সুন্দর বছরের আশায় নববর্ষও পালিত হয়েছে অনেকটা অনাড়ম্বরভাবেই। ২০২১ সালের প্রথম দিনে আনন্দ ভাগাভাগিতে করোনা বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। নতুন বছরের প্রথম দিন শুক্রবার সরকারি ছুটির দিন হওয়াতে আনন্দ ভাগাভাগির সুযোগ ছিল বেশি। শুক্রবার বিকেলে অনেকে পরিবার পরিজন নিয়ে গেছেনে বিনোদন স্পটগুলোতে। সকালে কিছুটা জনসমাগম কিছুটা কম থাকলেও বিকেল তিনটার পর থেকে বিনোদন স্পটগুলো লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। বিশেষত পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে সব বয়েসীরা গেছেন আনন্দ ভাগাভাগিতে। স্ব-পরিবারে কিংবা বন্ধুদের সাথে বেড়াতে গিয়েছেন অনেকে। কোথাও কোথাও বিড়ম্বনা বাড়িয়েছে ট্রাক পিকআপে বিকট আওয়াজের সাউন্ড সিস্টেম বাজিয়ে কম বয়েসি কিশোর তরুণদের উচ্ছৃক্সখলতা।
শুক্রবার বিকেলে পরিবার নিয়ে পতেঙ্গা বিচে বেড়াতে গিয়েছেন কামরুল আহসান। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এ কর্মকর্তা বলেন, করোনার কারণে অনেক দিন পরিবার নিয়ে ঘরের বাইরে যাওয়া হয় না। আজ শুক্রবারের পাশাপাশি নববর্ষের প্রথম দিন হওয়াতে সাহস করেই বেরিয়ে পড়েছি। আমি, আমার স্ত্রী ও ছোট্ট সন্তান তিনজনেই মাস্ক পরে এসেছি। এখানে বেশিরভাগ মানুষের মুখে মাস্ক নেই। এটা কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ।
গতকাল ফ’য়সলেক চিড়িয়াখানা ও কনকর্ড সী ওয়ার্ল্ডেও মানুষের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। ঘরোয়া বিনোদনকেন্দ্রগুলোর মধ্যে এই দুই প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি মানতে দর্শনার্থীদের অনুরোধ করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ডা. শাহাদাত হোসেন শুভ দৈনিক আজাদীকে বলেন, নববর্ষের প্রথম দিন চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় ১১ হাজার ৪শ দর্শনার্থী এসেছে। করোনা প্রাদুর্ভাব শুরুর পর থেকে একদিনে দর্শনার্থীর রেকর্ড এটি। তবে আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনেই দর্শনার্থীদের প্রবেশের ব্যবস্থা করেছি। মাস্ক ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
অন্যদিকে ফ’য়স লেক ও সী ওয়ার্ল্ডের ডেপুটি ম্যানেজার (মার্কেটিং) বিশ্বজিৎ ঘোষ দৈনিক আজাদীকে বলেন, করোনাকালীন গত ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে আশানুরুপ দর্শনার্থী ছিল। এরপর শুক্রবার নববর্ষের প্রথমদিন রেকর্ড সংখ্যক দর্শনার্থী এসেছে। করোনা সংক্রমণরোধে আমরা স্বাস্থ্যবিধির প্রতি বেশি সতর্কতা নিয়েছি। দর্শনার্থীদের প্রবেশের সময় হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেওয়া হচ্ছে। যাদের মাস্ক থাকছে না, তাদের মাস্ক দেওয়া হচ্ছে। মাস্ক পরার জন্য সচেতনতাও চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি ভেতরে বেশ কয়েকটি স্পটে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
এদিনে সোয়া পাঁচটার দিকে নগরীর প্রবেশদ্বার শাহ আমানত সেতুতেও ভীড় ছিল। বিশেষ করে কিশোর তরুণদের উপস্থিতি ছিল বেশি। বাইক ও ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়েও সেতুতে বেড়াতে গেছেন অনেকে। এই স্পটটিতে স্বাস্থ্যবিধির বালাই ছিলনা বললেই চলে। সূর্যাস্তের আগে পিকআপে বিকট শব্দে সাউন্ড সিস্টেম চালিয়ে একদল উঠতি বয়েসি কিশোর তরুণদের দৃষ্টিকটু অঙ্গভঙ্গি বিড়ম্বনা বাড়িয়েছে অন্য দর্শনার্থীদের।