পৌষের আগমনে কনকনে শীতের প্রকোপ শুরু। বিশ্ব আজ করোনা মহামারীর তাণ্ডবে বিপর্যস্ত। শীত আসতেই করোনা আরও শক্তিশালী হয়ে ছিনিয়ে নিচ্ছে অসংখ্য মানব প্রাণ, পরিবারে এক এক সদস্য হচ্ছে বিচ্ছিন্ন। প্রকৃতির বিচারে সাজাপ্রাপ্ত মানবজাতির জীবনদশা দেখে এক ঘটনা মনে পড়ে গেলো। শীতের সময়টা ২০০২, স্নাতকের ছাত্র আমি। শীতে কলকাতার পৌষ ও বইমেলা খুবই বিখ্যাত। মাসব্যাপী মেলার উদ্বোধনীতে বন্ধুদের সাথে প্রবেশ। খানিক বেড়ানো, বই কেনা, খাওয়া আর বিখ্যাত শিল্পীদের গানের সুরে মন মাতালাম। অনুষ্ঠানের বিরতিতে হঠাৎ চোখ পড়ল একটি বইয়ের স্টলের সামনে, চেয়ারে বসা আশিউর্ধ এক বৃদ্ধা। অন্যকিছু না ভেবেই আসরে মন দিলাম। রাত প্রায় ১২ টা অনুষ্ঠান শেষে বের হওয়ার সময় দেখলাম সেই বৃদ্ধা, এখনো বসে আছে। কৌতূহলে বন্ধুদের নিয়ে স্টলে জিজ্ঞেস করলাম, ছেলে বৌমা নাতি উনাকে পরে নেবে বলে বসিয়ে যায়। কিন্তু তারা কেউ এখনো আসেনি নিতে। ছেলের ঠিকানা, নাম্বার জানা নেই অসহায় বৃদ্ধার। ফ্যাল ফ্যাল চোখে আকাঙ্ক্ষা, ছেলে আসার অপেক্ষা। খানিক পরে যে যার মত বেড়িয়ে আসি। দুদিন পর ভোরে পত্রিকায় দেখলাম সেই বৃদ্ধার ছবিসহ শিরোনাম। ছেলে না আসায় সারারাত শীতে কাঁপা বৃদ্ধার দায়িত্ব নেয় মেলা কমিটির সদস্য। পরে আরও জানি অক্ষম বৃদ্ধাকে ঘরে ঠাঁই দিতে অপারগ একমাত্র ছেলের। এই করোনা সময় ভাবছি সেই ছেলের কথা হয়ত নিজের সামান্য সুখের জন্য বৃদ্ধ মাকে ছেড়ে আসে অজানা ঠিকানায়, আজ মানুষ ছলনা করে কে, কাকে পরিবার থেকে বিতাড়িত করবে? মানুষ আজ প্রকৃতির বিচারে অনিচ্ছায় পৃথিবী থেকে বিদায় নিচ্ছে। বর্তমান করোনা মানুষের ভুলের সাজা কি? সেটা শিখিয়ে দিচ্ছে মানবজাতিকে।