একজন নির্লোভ, নির্মোহ, নিরহংকারী, সৎ, নিষ্ঠাবান, বিনয়ী, আস্থাশীল ও দক্ষ সংগঠক যে দিক থেকেই বিবেচনা করা হোক না কেন; নিবিড় পর্যালোচনায় যে কোন বিবেচনায় প্রয়াত আশীষ বড়ুয়া অনবদ্য ও অসাধারণ একজন মানুষ ছিলেন। মানব সেবায় নিয়োজিত দীর্ঘ কন্টক পথ পাড়ি দিয়ে সাংগঠনিক পথ পরিক্রমায় দলের প্রতি আনুগত্যতার এক উজ্জ্বল অনুপম দৃষ্টান্ত রয়েছে মানবিক সংগঠক আশীষ বড়ুয়া। লেখক আশীষ বড়ুয়া তাঁর লিখনি জীবনে আপন সমাজের কথা ভেবেছেন। সেই কথা গুলো তিনি তুলে ধরেছেন নিখুঁত লিখনির মাধ্যমে। তার বিশ্বাস ছিল এই বাংলাদেশ একদিন সমস্ত বাধা দূর করে আপন মহীমায় মাথা তুলে দাঁড়াবে। আশীষ বড়ুয়া রাষ্ট্রচিন্তার দিকে মনোনিবেশ করলে দেখা যায়, তার রাষ্ট্র চিন্তা ছিল সুদূর প্রসারি।আজ আমাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের দিকে তাকালে দেখা যায় তার রাষ্ট্র চিন্তা কতটা কার্যকর ছিল। তিনি সমাজের বিভিন্ন সংকট নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। সেই সংকট উত্তরণের জন্য তিনি লিখেছেন বিজ্ঞের মত। তার লেখায় ফুটিয়ে তুলতেন, হাস্য-রসাত্নক ও গদ্যে সাহিত্যের অপরূপ সৌন্দর্যতায়। যেখানে আশীষ বড়ুয়া আপন মনের সমস্ত কাব্যিক রস, কাব্যের নির্মাণ শৈলী ও উন্নত চিন্তার মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতেন। আশীষ বড়ুয়া তাঁর লিখনিতে আজীবন সমাজকে বুঝাতে চেয়েছেন, সমাজের ন্যায় নীতি, বিজ্ঞান মনষ্ক চিন্তা ও সুন্দর মানসিকতার দৃষ্টান্ত কিভাবে তৈরি করা যায়। তার সাথে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন ধর্মীয় গোড়ামী ও সঠিক ধর্মীয় জীবনের পার্থক্য কি? তিনি সঠিক শিক্ষার প্রতি মানুষকে অর্থ ও সময় বিনিয়োগে সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে বলেছেন।একজন মানুষকে যে সকল গুণাবলী আদর্শ সংগঠক ও একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পারে তার সব গুণাবলী রয়েছে তাঁর মধ্যে। তাঁর সান্নিধ্যে যারা গিয়েছেন তারাই মুগ্ধ হয়েছিলেন কোন না কোনভাবে।কর্মী বান্ধব ও সংগঠনের প্রতি তিনি ছিলেন অবিচল আস্থাশীল, সৎ ও নিষ্ঠাবান। তিনি ছিলেন অন্য সবার চেয়ে আলাদা। তাইতো সময়ের সাথে আশীষ বড়ুয়া হয়ে উঠেছিলেন মেধা ও মননশীল সংগঠকের একজন ধারক ও বাহক। এসব গুণাবলীই তাঁকে ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিয়ে গিয়েছিল। আত্মপ্রচার বিমুখ আশীষ বড়ুয়া হতে পারেন আগামীর তরুণ প্রজন্মের সংগঠকের জন্য আদর্শ। একটি সুন্দর সমাজব্যবস্থা বিনির্মাণে দৃঢ় অঙ্গীকার বদ্ধ মানবিক সংগঠক আশীষ বড়ুয়া। আদর্শ, নৈতিকতা, সামাজিক দায়বদ্ধতা ও শেকড় সন্ধানী মানসিকতায় তিনি অনন্য। জনগণের প্রতি অপরিসীম দায়বদ্ধতা থেকে শেকড়সন্ধানী এই সমাজসেবী দেশের যেকোনো দুর্যোগে ছুঁটে যান সাধারণ জনগণের সুখ-দুঃখে পাশে দাঁড়াতে ভুলে যান নি। একটা মানুষের সঙ্গে চলে যায় গোটা একটি পৃথিবী। কথাটি লিখেছেন সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। আসলে সব মানুষই জীবনে নিজ নিজ ক্ষেত্র গড়ে তোলে আপন আপন ভূবন। আর যার কর্মে কীর্তিতে, মেধায়, মননে, স্নেহ, ভালবাসায় ও সখ্যতায় অনন্য স্বাক্ষর রেখে যায়। তারা সারা জীবন ধরে তৈরী করে এক একটি বিচিত্র ও বর্ণিল অনন্য পৃথিবী। তেমনি কর্মে কীর্তিতে সংগঠক আশীষ বড়ুয়া ছিলেন একজন নিরলস কর্মী। তাই তাঁর অকাল মৃত্যুতে আমরা হারিয়েছি একজন সমাজ সাংগঠনিক ব্যক্তিত্বকে। সকলের মানসপটে আশীষ বড়ুয়া চির জাগরুক হয়ে থাকবে।