আবদুল জব্বার খান – বিশিষ্ট চলচ্চিত্র নির্মাতা, অভিনেতা, নাট্যকার ও চলচ্চিত্র পরিচালক। বাংলাদেশে প্রথম চলচ্চিত্র নির্মাণের কৃতিত্ব তাঁর। বলা হয়ে থাকে, আবদুল জব্বার খান বাংলাদেশের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের পথিকৃৎ। তাঁর সম্মানে এফডিসিতে আবদুল জব্বার খান পাঠাগার নামে একটি পাঠাগার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
আবদুল জব্বার খানের জন্ম ১৯১৬ সালে মুন্সিগঞ্জের মসদগাঁও গ্রামে। শৈশব থেকেই অভিনয়ের প্রতি ছিল দুর্বার আকর্ষণ। স্কুলের ছাত্রাবস্থায় মঞ্চনাটক করতেন। ‘সতীর্থ’, ‘বিল্বমঙ্গল’, ‘সোহরাব রোস্তম’, ‘বেহুলা’, ‘সমাজপতি’ প্রভৃতি মঞ্চনাটকে অভিনয় করে ব্যাপক প্রশংসিত হন, অর্জন করেন সম্মাননা। ১৯৪১ সালে আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল থেকে ডিপ্লোমা করে চাকরিতে যোগ দেন। পাশাপাশি চলতে থাকে নাট্যচর্চা। এরই ধারাবাহিকতায় গঠন করেন ‘কমলাপুর ড্রামাটিক অ্যাসোসিয়েশন’। এই সংগঠন থেকেই ‘প্রতিজ্ঞা’, ‘জাগালো দেশ’, ‘টিপু সুলতান’, ‘বঙ্গে বর্গী’, ‘ঈশা খাঁ’, ‘ডাকাত’ প্রভৃতি নাটক মঞ্চস্থ হয়। পরবর্তী সময় ‘ডাকাত’ নাটক অবলম্বনে বাংলাদেশের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’ তৈরি করে খ্যাতিমান হয়ে ওঠেন আবদুল জব্বার খান। এই চলচ্চিত্রে নিজে অভিনয় করেছেন।
চলচ্চিত্র বিষয়ক বেশ কিছু সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন তিনি। প্রতিষ্ঠা করেছেন চলচ্চিত্র নির্মাণ সংস্থা পপুলার স্টুডিও। আবদুল জব্বার খান পরিচালিত অন্যান্য চলচ্চিত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য: ‘জোয়ার এলা’, ‘বাঁশরী’, ‘কাঁচ কাটা হীরে’, ‘খেলারাম’, ‘উজালা’, এবং উর্দু ছবি ‘নাচঘর’। চলচ্চিত্র শিল্পে বিশেষ অবদানের জন্য একাধিক পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন তিনি। এসবের মধ্যে রয়েছে: বাচসাস পুরস্কার, এফডিসি রজত জয়ন্তী পদক, হীরালাল সেন স্মৃতি পুরস্কার, উত্তরণ পদক, বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন স্বর্ণপদক, ফিল্ম আর্কাইভ সম্মাননা প্রতীক, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সম্মাননা পদক, রেইনবো ফিল্ম সোসাইটি সম্মান পদক প্রভৃতি। ১৯৯৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর চলচ্চিত্রপ্রেমী প্রথিতযশা এই শিল্পী প্রয়াত হন।