বাংলাদেশে সুস্থধারার সৃজনশীল চলচ্চিত্র নির্মাণ ও বিকাশে যেসব বরেণ্য ব্যক্তি পথিকৃতের ভূমিকা রেখেছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম আলমগীর কবির। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি ছিলেন নির্ভীক যোদ্ধা। পরাধীন দেশেও যুক্ত ছিলেন বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলন সংগ্রামে। আজ প্রাগ্রসর এই শিল্পীর ৮০তম জন্মবার্ষিকী।
আলমগীর কবিরের জন্ম ১৯৩৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর রাঙামাটি জেলায়। পৈত্রিক নিবাস বরিশাল। ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল ও ঢাকা কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে যথাক্রমে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এসসি অনার্স পাস করে উচ্চ শিক্ষার জন্য তিনি চলে যান লন্ডনে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি পাঠ নেন প্রকৌশল, সাংবাদিকতা ও চলচ্চিত্র বিষয়ে। ১৯৬৩ সালে ফিরে আসেন দেশে। পরাধীন বাংলায় তখন চলছে স্বাধীকার আন্দোলন। আলমগীর যুক্ত হন তাতে। জাতীয়তাবাদী আন্দোলন সংগ্রামে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে আইয়ুব সরকারের অধীনে তাঁকে তিন মাসের জেল খাটতে হয়। ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ইংরেজিতে সংবাদ পাঠ করতেন তিনি। সাংবাদিকতা করেছেন সাপ্তাহিক হলিডে পত্রিকায়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বাংলাদেশে পাকিস্তানি গণহত্যা, ধ্বংসযজ্ঞ প্রভৃতির ওপর ভিত্তি করে নির্মিত প্রামাণ্য চিত্র, মুক্তিযুদ্ধের অসামান্য দলিল ‘স্টপ জেনোসাইড’-এর চিত্রনাট্য ও ধারাভাষ্যে বিশিষ্ট কথাশিল্পী ও চলচ্চিত্র পরিচালক, শহীদ বুদ্ধিজীবী জহির রায়হানের সাথে কাজ করেছেন তিনি। এছাড়া এককভাবে নির্মাণ করেছেন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘লিবারেশন ফাইটার্স’। আলমগীর কবির নির্মিত পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে: ‘সীমানা পেরিয়ে’, ‘ধীরে বহে মেঘনা’, ‘রূপালী সৈকতে’, ‘সূর্যকন্যা’, ‘পরিণীতা’, ‘মোহনা’, ‘মণিকাঞ্চন’ প্রভৃতি।
‘কালচার ইন বাংলাদেশ’, ‘শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন’, ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে’ আলমগীর কবিরের তৈরি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। তাঁর প্রতিটি সৃষ্টিই মননশীলতায় ঋদ্ধ। কাল ও পরিবেশের বিমূর্ত অভিব্যক্তি শিল্পসম্মতভাবে ফুটে উঠেছে তাঁর কাজে। আর এসবের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায় অক্লান্ত পরিশ্রমী, সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ এক শিল্পীর মেধা ও মনন। ১৯৮৯ সালের ২০ জানুয়ারি সড়ক দুর্ঘটনায় মর্মান্তিকভাবে প্রয়াত হন প্রথিতযশা এই শিল্পী।