হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের প্রয়াত আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফির স্বাভাবিক মৃত্যুকে ‘হত্যাকাণ্ড’ উল্লেখ করে দায়ের করা মামলাটি ‘রাজনৈতিক চক্রান্ত’ ও ‘দেশের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করার দুরভিসন্ধি’ বলে উল্লেখ করেছেন সংগঠনটির বর্তমান আমির আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী। গতকাল বুধবার আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসা মিলনায়তনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এই দাবি করেন।
সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন হেফাজতের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ড. নুরুল আবছার আল আহাজারী। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আল্লামা শাহ আহমদ শফী ছিলেন সর্বস্তরের কওমী আলেমদের অভিভাবক। কিন্তু তার ছেলে (হাটহাজারী বড় মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষাপরিচালক) মাওলানা আনাস মাদানী দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রদের নানাভাবে হয়রানি করে আসছিলেন। তার অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারী কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ হয়ে ছাত্ররা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। বিক্ষুদ্ধ ছাত্ররা তাদের সুনির্দিষ্ট দাবি দাওয়া তৎকালীন মুঈনে মুহতামিম আল্লামা শেখ আহমদের মাধ্যমে আল্লামা শাহ আহমদ শফির নিকট পেশ করে। তিনি এসব বিষয়ে অবহিত হওয়ার পর শূরা বৈঠক আহ্বান করে আনাস মাদানীকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেন এবং ছাত্রদের দাবিগুলো পর্যায়ক্রমে মেনে নেয়ার ঘোষণা দেন। ছাত্রদের দাবিগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ১৯ সেপ্টেম্বর পুনরায় শূরার অধিবেশন আহ্বান করেন। এই ঘোষণার পর মাদরাসায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরে আসে। কিন্তু এর আগেই ১৬ ও ১৭ সেপ্টেম্বরের শূরার সিদ্ধান্তকে অমান্য করে মাওলানা আনাস মাদানী অনির্দিষ্টকালের জন্য মাদরাসা বন্ধ করার পাঁয়তারা করেন। ফলে ছাত্ররা পুনরায় বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে। তখন আল্লামা আহমদ শফি পুনরায় শূরা বৈঠক আহ্বান করেন। বা’দে মাগরিব তিনি সিনিয়র শিক্ষকদের সাথে বৈঠকে বসেন। ছেলের অনিয়মগুলো তার সামনে তুলে ধরা হলে তিনি স্বেচ্ছায় মাদরাসার মহাপরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। পরে শূরা সদস্যগণ তাকে সদরে মুহতামিম মনোনীত করেন। এসময় আল্লামা আহমদ শফির অসুস্থতা বেড়ে গেলে শূরার সদস্য ও সিনিয়র শিক্ষকগণ তাকে হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করেন। প্রথমে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে তিনি ইন্তিকাল করেন। কিন্তু তার মৃত্যু স্বাভাবিকভাবে হলেও একটি কুচক্রি মহল তিনমাস পর সেটাকে অস্বাভাবিক আখ্যা দিয়ে একটি মামলা দায়ের করেছে। অথচ মামলাবাজ এই চক্রটি আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে জিম্মি করে হাটহাজারী মাদরাসায় ব্যক্তিতন্ত্র কায়েম করেছিল। এখন তারা একটি স্বাভাবিক মৃত্যুকে পুঁজি করে আলেম-উলামা ও ছাত্রদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। কিন্তু মামলাটি অবিলম্বে প্রত্যাহার করা না হলে হেফাজত কঠোর কর্মসূচির দিকে যেতে বাধ্য হবে।’
সাংবাদিক সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, আল্লামা মোহাম্মদ ইয়াহইয়া, আল্লামা নোমান ফয়জী, আল্লামা তাজুল ইসলাম, আল্লামা মোহাম্মদ শোয়াইব প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।