নতুন করোনা ঘিরে উদ্বেগ

৭০ শতাংশ বেশি বিপজ্জনক, দ্রুত ছড়ায় ইউরোপ থেকে বিচ্ছিন্ন ব্রিটেন

আজাদী ডেস্ক | মঙ্গলবার , ২২ ডিসেম্বর, ২০২০ at ৬:১৪ পূর্বাহ্ণ

করোনাভাইরাসের নতুন যে প্রজাতি ব্রিটেনে হানা দিয়েছে, তা আগেরটির চেয়ে ৭০ শতাংশ বেশি বিপজ্জনক বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তার পরই নতুন করে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে গোটা বিশ্বে। শুধু ভারত নয়, কানাডা, সৌদি আরব এবং ইউরোপের একাধিক দেশও ইতিমধ্যে ব্রিটেনের সঙ্গে বিমান সংযোগ সাময়িক বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আবার ব্রিটেনের পাশাপাশি ইতালি ও অস্ট্রেলিয়ায়ও করোনার ওই নতুন প্রজাতির সন্ধান মিলেছে বলে জানা গেছে।
ব্রিটেনের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বে একটি নতুন ধরনের এবং অধিক সংক্রামক করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ যুক্তরাজ্যের ক্ষেত্রে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। স্থানীয় সময় গত রাত ১১টা থেকে ফ্রান্স ৪৮ ঘণ্টার জন্য ব্রিটেনের সাথে তাদের সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। এর ফলে ব্রিটেনের ইংলিশ চ্যানেলের তীরবর্তী ডোভারের ফেরি ও টানেল দিয়ে পার হয়ে সকল গাড়ি ও ট্রাকের ফ্রান্সে ঢোকা বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে দুই প্রান্তেই অসংখ্য গাড়ি ও ট্রাক আটকা পড়েছে। খবর বিবিসি বাংলা ও বিভিন্ন সংবাদ সংস্থার। জার্মানি, ইতালি, বেলজিয়াম, আয়ারল্যান্ড, তুরস্ক ও কানাডা ইতিমধ্যে যুক্তরাজ্যের সাথে বিমান চলাচল স্থগিত করেছে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলোর নেতারা গতকাল এক বৈঠকে ব্রিটেনের সাথে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার নানা দিক নিয়ে আলোচনা করবেন। ভারতও যুক্তরাজ্য থেকে আসা বিমানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়েছে শেয়ারবাজারে। তাছাড়া ডলারের বিপরীতে ব্রিটিশ পাউন্ডের দামেও পতন ঘটেছে।
নতুন বৈশিষ্ট্যের এক করোনাভাইরাস লন্ডন এবং দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডে দ্রুত ছড়াচ্ছে বলে কয়েক দিন আগে জানান ব্রিটিশ স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। এ নিয়ে মারাত্মক উদ্বেগের পটভূমিতে গতকাল হঠাৎ করে লন্ডন এবং দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডের বিরাট অংশ জুড়ে কঠোর লকডাউন জারি করা হয়।
নতুন এই ভাইরাস কেমন : ব্রিটিশ গবেষকরা লন্ডন এবং আশেপাশের অঞ্চলে যে ভাইরাসের বিস্তার দেখছেন সেটিকে তারা নিউ ভ্যারিয়েন্ট, অর্থাৎ নতুন বৈশিষ্ট্যের ভাইরাস বলে বর্ণনা করছেন। তবে এটি যে আগেরটির চেয়ে অনেক বেশি প্রাণঘাতী বা মারাত্মক, সেরকম প্রমাণ তারা এখনো পাননি। এটিকে মোকাবেলার ক্ষেত্রে করোনার টিকা যে ভিন্ন ফল দিতে পারে এমন কথাও তারা বলছেন না।
করোনা মহামারি শুরুর পর থেকেই বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, অন্য যেকোনো ভাইরাসের মতো করোনাভাইরাসের এই নতুন ভাইরাসটিও মিউটেশনের মাধ্যমে পরিবর্তিত হতে পারে। তার বৈশিষ্ট্য এবং আচরণে পরিবর্তন ঘটতে পারে। লন্ডন এবং আশেপাশের অঞ্চলে ভাইরাসটি নতুন করোনার এরকম এক পরিবর্তিত রূপ বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
অতি সহজে ও দ্রুত : নতুন ভাইরাসটি অনেক বেশি সহজে এবং দ্রুত ছড়াচ্ছে। আগেরটির তুলনায় এই ভাইরাস ৭০ শতাংশ বেশি হারে ছড়াচ্ছে। ব্রিটিশ সরকারকে যে শুক্রবার আচমকা আবারও কঠোর লকডাউন জারি করতে হলো, তার পেছনে এটাই কারণ। এটি সরকারের মধ্যে যথেষ্ট উদ্বেগ তৈরি করেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, এই নতুন বৈশিষ্ট্যের করোনাভাইরাস এখন নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক এবং অস্ট্রেলিয়ায়ও পাওয়া গেছে। সংস্থাটি বলছে, এ নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন এবং ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।
ব্রিটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক স্বীকার করেছেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিল বলেই এই কঠোর বিধিনিষেধ জারি করতে হয়েছে। তিনি এমন ইঙ্গিতও দেন, এবারের কঠোর লকডাউন দুই মাস ধরে চলতে পারে।
ক্রিসমাসের মাত্র এক সপ্তাহ আগে নেয়া সরকারের এই পদক্ষেপ থেকে বোঝা যায়, সরকার পরিস্থিতিকে খুবই উদ্বেগজনক বলে মনে করছে। এ বছরের শুরুতে যে ধরনের কঠোর লকডাউন ইউরোপে দেখা গিয়েছিল, এখন লন্ডন এবং আশেপাশের এলাকা আবার কার্যত সেরকম লকডাউনের আওতায় এল।
তিনটি কারণে করোনাভাইরাসের নতুন এই ভ্যারিয়ান্টটি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। ১. এটি ভাইরাসের অন্য সংস্করণগুলোকে প্রতিস্থাপিত করছে। ২. এটির বিভাজন বা রূপান্তর ভাইরাসের কিছু অংশে পরিবর্তন আনে, যা গুরুত্বপূর্ণ। ৩. এসব বিভাজনের মধ্যে বেশ কিছু ল্যাবে পরীক্ষার পর দেখা গেছে, এগুলো মানুষের দেহের কোষকে সংক্রমিত করার ভাইরাসের যে সক্ষমতা তা বাড়ায়। এসব বৈশিষ্ট্য ভাইরাসটিকে সহজে ছড়িয়ে পড়ার সক্ষমতা দেয়।
সেপ্টেম্বরে প্রথম ভাইরাসের এই নতুন ধরনটি শনাক্ত করা হয়। নভেম্বরের দিকে লন্ডনে আক্রান্তদের মধ্যে চার ভাগের এক ভাগ ছিল নতুন বৈশিষ্ট্যের এই ভাইরাসের শিকার। আর ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত এটি দুই-তৃতীয়াংশে পৌঁছায়।
ধারণা করা হচ্ছে, ভাইরাসের এই স্ট্রেইনটি যুক্তরাজ্যে কোনো একজন রোগীর দেহে আবির্ভূত হয়েছে কিংবা এমন একটি দেশ থেকে এসেছে যেখানে ভাইরাসটিকে পর্যবেক্ষণ করার মতো তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। এটি যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় পাওয়া যাচ্ছে। চীনের উহানে যে ভাইরাসটি প্রথমে শনাক্ত করা হয়েছিল, সেটির সাথে বিশ্বের অন্যান্য স্থানে থাকা ভাইরাসের কোনো মিল নেই। ডি৬১৪জি নামে ভাইরাসটি গত ফেব্রুয়ারিতে ইউরোপে ধরা পড়ে। এটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কাছাকাছি এই বৈশিষ্ট্যের। এ২২২ভি নামে আরেকটি ভাইরাসের স্ট্রেইনও ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। স্পেনে গ্রীষ্মকালীন ছুটির সময় এটি বেশি ছড়িয়ে পড়ে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিদ্যুৎ ভবনে ঠিকাদারকে প্রবেশে বাধা সন্ত্রাসী হামলায় আহত তিন
পরবর্তী নিবন্ধসার্কিট হাউজে আ. লীগ এমপিদের রুদ্ধদ্বার বৈঠক