আইনজীবী অন্তর্ভুক্তির পরীক্ষায় ‘হট্টগোল ভাঙচুর’

| রবিবার , ২০ ডিসেম্বর, ২০২০ at ১০:৩৩ পূর্বাহ্ণ

হট্টগোল, ভাঙচুর এবং বর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ‘আইনজীবী অন্তর্ভুক্তি’ পরীক্ষা। গতকাল শনিবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত এ পরীক্ষা হয়। তবে কোনো কেন্দ্রে পরীক্ষা হয়নি, আবার কোনো কেন্দ্রে সময় বাড়িয়ে বেলা ২টা পর্যন্ত পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। পরীক্ষায় অংশ নেন প্রায় ১৩ হাজার জন পরীক্ষার্থী। সকালে ‘প্রশ্নপত্র কঠিন হয়েছে’ এমন অভিযোগ তুলে মোহাম্মদপুর ও পুরান ঢাকার কয়েকটি কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা বর্জন করে। তবে কেন্দ্রে হট্টগোল, পরীক্ষা বর্জন বা পরীক্ষা না দিতে বাধ্য করানোর ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি বার কাউন্সিলের সচিব রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, শুনেছি মোহাম্মদপুরের একটি কেন্দ্রে হট্টগোল হয়েছে। এর বেশি কিছু আপাতত বলতে পারব না। খবর বিডিনিউজের।
পদাধিকার বলে বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, যারা পরীক্ষা দিতে চেয়েছে কিন্তু পারেনি তাদের ব্যাপারে পরে বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারলে আমরা ব্যবস্থা নেব। যারা পরীক্ষা দিতে পারেনি তারা কি বাধ্য হয়ে দিতে পারেনি, নাকি ইচ্ছা করে দেয়নি, তা বুঝেশুনে ব্যবস্থা নিতে হবে।
লক্ষ্মীবাজারের ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষা দিয়েছেন এমন একজন নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর ৫ মিনিটের মাথায় পরীক্ষার্থীরা কেন্দ্রের গেট ভেঙে প্রশ্ন, খাতা নিয়ে কেন্দ্র থেকে বের হয়ে যায়। পুলিশ তখন একেবারেই নীরব ছিল। আধাঘণ্টার ওপরে এভাবে ছিল। পরে টিমসহ ম্যাজিস্ট্রেট আসলে কিছু পরীক্ষার্থী কেন্দ্রে ঢোকে। এই পরীক্ষার্থীর অভিযোগ, পরীক্ষা দিতেই এসেছিল সবাই। কিন্তু অযৌক্তিক, ভিত্তিহীন এবং বার কাউন্সিলের ইতিহাসে নজিরবিহীন প্রশ্নবিদ্ধ প্রশ্ন হয়েছে। মানদণ্ড বজায় রেখে এ প্রশ্নপত্র করা হয়নি।
একই অভিযোগ করেন সরকারি মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী জাকের হোসেন। তিনি বলেন, প্রশ্নপত্র পাওয়ার পর পরই পরীক্ষার্থীরা হইচই শুরু করে। প্রশ্নটা একেবারেই ব্যতিক্রম হয়েছে। গতানুগতিক যে প্রশ্ন করে আসছে বার কাউন্সিল, সেরকম প্রশ্ন এবার হয়নি। এক পর্যায়ে কিছু শিক্ষার্থী এসে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে পরীক্ষার্থীদের খাতা কেড়ে নিতে শুরু করে। দরজা-জানালা ভাঙচুর শুরু করে তারা। প্রশ্নপত্র, খাতা মাঠে ফেলে দেয়। কেউ কেউ স্বেচ্ছায়ও ফেলে দিয়েছে। সাড়ে ১০টা পর্যন্ত চলে এ পরিস্থিতি। সেসময় ম্যাজিস্ট্রেট, পরীক্ষা নেওয়ার দায়িত্বে থাকা শিক্ষকরা নিজেদের নিরাপত্তার জন্য একটা রুমে আশ্রয় নিয়েছিলেন। জাকের বলেন, বেলা ১১টার দিকে কেন্দ্র নিয়ন্ত্রক ঘোষণা দেন পরীক্ষা হবে না। বাসায় চলে যেতে বলেন পরীক্ষার্থীদের। ঘোষণা দেওয়ার পরও যখন কিছু পরীক্ষার্থী বের হচ্ছিল না, তাদের পুলিশ এসে পিটিয়ে বের করে দেয়। সাড়ে ১১টার মধ্যে গোটা কেন্দ্র খালি করে ফেলা হয়। এরপর আর পরীক্ষাই হয়নি।
বার কাউন্সিলের পরীক্ষায় নৈরাজ্য নিয়ে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল। চারটি ছবি দিয়ে তিনি লিখেছেন, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের এডভোকেট তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষায় নজিরবিহীন নৈরাজ্যের কারণে মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজ ও সায়েন্স ল্যাবরেটরি কেন্দ্রের পরীক্ষার্থীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। এই অরাজকতায় আমি ব্যথিত ও ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।
উল্লেখ্য, গত ২৬ সেপ্টেম্বর এ পরীক্ষা নেওয়ার কথা ছিল। তার আগেই গত ২০ সেপ্টেম্বর নোটিস দিয়ে বার কাউন্সিল জানায়, করোনা পরিস্থিতির কারণে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সে নোটিসেই ১৯ ডিসেম্বর পরীক্ষার নতুন তারিখ ঘোষণা করে বার কাউন্সিল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবঙ্গবন্ধুর ৬ দফা : বাঙালি জাতির ম্যাগনাকার্টা
পরবর্তী নিবন্ধশাহজালালে ফের ২৫০ কেজির জিপি বোমা