মাহমুদুন্নবী – বাংলা সংগীত জগতে কিংবদন্তি শিল্পী। অনুকরণীয় কণ্ঠশৈলীতে চমৎকার সব গান গেয়ে ষাটের দশকে আধুনিক বাংলা গানে আলোড়ন তুলেছিলেন তিনি। তাঁর গানের আবেদন এ যুগেও অমলিন।
মাহমুদুন্নবীর জন্ম ১৯৪০ সালের ১৬ ডিসেম্বর বর্ধমানের কেতু গ্রামে। দেশবিভাগের পর সপরিবারে তাঁরা তদানীন্তন পূর্ব বাংলায় চলে আসেন এবং খুলনায় স্থায়ী হন। তবে বাবার কর্মক্ষেত্র ফরিদপুরেই কেটেছে মাহমুদুন্নবীর শৈশব ও কৈশোর। ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ অসমাপ্ত রেখেই তিনি বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন। প্রথমে কিছুকাল চট্টগ্রামে, পরে ঢাকায় চলে যান। তাঁর চেতনা আর শিল্পী সত্তা চালিত হয়েছিল সুরের টানে। ঢাকার ইসলামপুরে একজন ওস্তাদের কাছে কিছুকাল গানের তালিম নেন তিনি। এরপর চলে যান করাচি। করাচি বেতার কেন্দ্র থেকেই প্রচারিত হয় তাঁর প্রথম গান ‘পথে যেতে দেখি আমি যারে’। প্রখ্যাত সাহিত্যিক আবু হেনা মোস্তফা কামালের লেখা এই গানটির মাধ্যমেই আধুনিক বাংলা গানের ভুবনে উজ্জ্বল প্রবেশ মাহমুদুন্নবীর। এর অব্যবহিত পরে শিল্পীর আটটি গান নিয়ে আধুনিক গানের একটি লং প্লে রেকর্ড প্রকাশিত হয়। ষাটের দশকের শুরুতে মাহমুদুন্নবী ঢাকায় স্থায়ী হন। এ সময় থেকে ঢাকা বেতারের নিয়মিত শিল্পী হিসেবে তাঁর আত্মপ্রকাশ ঘটে। শিল্পের প্রতি যেমন, তেমনি সমাজের প্রতিও দায়বদ্ধ ছিলেন শিল্পী মাহমুদুন্নবী। ষাটের দশকে পূর্ব বাংলার জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সাথে ছিল তাঁর সম্পৃক্ততা। এ সময় তাঁর গাওয়া গণজাগরণমূলক বেশ কিছু গান মুক্তিকামী মানুষকে স্বাধীনতার স্বপ্নে উদ্বুদ্ধ করে। বাংলা ছায়াছবির অনেক জনপ্রিয় গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। ‘সালাম পৃথিবী’, ‘প্রেমের নাম বেদনা’, ‘আয়নাতে ওই মুখ’, ‘তুমি যে আমার কবিতা’, ‘গানের খাতায় স্বরলিপি লিখে’, ‘ও মেয়ের নাম দেব কী’, ‘আমি ছন্দহারা এক নদীর মতো ছুটে যাই’ – এমনই অনেক কালজয়ী গানের শিল্পী মাহমুদুন্নবী। বাংলা গানের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী সামিনা চৌধুরী এবং ফাহমিদা নবী শিল্পীর সুযোগ্য দুই কন্যা। ১৯৯০ সালের ২০ ডিসেম্বর মাহমুদুন্নবী প্রয়াত হন। শুদ্ধ সংগীতের চর্চা ও বিকাশে আধুনিক বাংলা গানে তিনি একজন স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব।