বিদ্যুতে কমিয়ে গ্যাসের সরবরাহ সার কারখানায়

চট্টগ্রামে এলএনজি সরবরাহ নেমেছে অর্ধেকে।। সিইউএফএল চালু, আজ ইউরিয়া উৎপাদন শুরু

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১৯ ডিসেম্বর, ২০২০ at ৫:২৮ অপরাহ্ণ

বিশ্ববাজারে এলএনজির দাম বাড়ার প্রভাব পড়েছে দেশের গ্যাস সরবরাহে। আবার কৃষিতে সারের সরবরাহ ঠিক রাখতে অলস সার কারখানাগুলো সচল করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে চট্টগ্রামে গ্যাস নির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সরবরাহ কমিয়ে সার কারখানায় সরবরাহ শুরু করেছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি. (কেজিডিসিএল)। এতে রাউজান ৪২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুই ইউনিট বন্ধ হয়ে গেলেও চালু হয়েছে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা চট্টগ্রাম ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল)। ইতোমধ্যে এমোনিয়া উৎপাদন শুরু হলেও আজ (শনিবার) বিকেলে ইউরিয়া উৎপাদন শুরুর প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ।
কেজিডিসিএল সূত্রে জানা যায়, আবাসিক, বাণিজ্যিক, শিল্পখাত মিলিয়ে চট্টগ্রামে গ্যাসের গ্রাহক রয়েছে ৬ লাখের বেশি। তন্মধ্যে আবাসিক গ্রাহক ৫ লাখ ৯৮ হাজারের কাছাকাছি। শিল্প গ্রাহক রয়েছে ১১২৭, বাণিজ্যিক গ্রাহক ২৮৬২, ক্যাপটিভ পাওয়ার ১৯০, সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশন ৭০টি, বিদ্যুৎকেন্দ্র ৫টি ও সার কারখানা রয়েছে ৪টি। সবমিলিয়ে চট্টগ্রামে প্রতিদিন গ্যাসের চাহিদা থাকে ৪৮০-৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এলএনজি আমদানির আগে চাহিদার বিপরীতে মাত্র ২০০ মিলিয়ন ঘনফুটের কম গ্যাস পেত চট্টগ্রামের গ্রাহকরা।
জানা গেছে, দেশে গ্যাসের সংকট কাটাতে এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানির উদ্যোগ নেয় সরকার। সব প্রক্রিয়া শেষে ২০১৮ সালের ১৪ আগস্ট জাহাজ থেকে এফএসআরইউ’র (ফ্লোটিং স্টোরেজ এন্ড রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট অর্থাৎ এলএনজি মজুত ও পুনরায় গ্যাসে রূপান্তর করার ভাসমান টার্মিনাল) মাধ্যমে ট্রান্সমিশন লাইনে গ্যাস সরবরাহ দিতে সক্ষম হয় পেট্রোবাংলা। আমদানিকৃত এলএনজি থেকে এ পর্যন্ত দৈনিক সর্বোচ্চ ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দিতে সক্ষম হচ্ছে রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (আরপিজিসিএল)। এলএনজি আমদানির পর চট্টগ্রামে ৩৫০ মিলিয়ন ঘনফুট পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ দেয় পেট্রোবাংলা। তবে সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম আশংকাজনকহারে বাড়তে থাকলেও আমদানি কমানোর পাশাপাশি গ্যাসে রেশনিং করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এতে কর্ণফুলী গ্যাসের জন্য ২৬৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বর্তমানে জাতীয় গ্রিডে দৈনিক ৪৫০-৪৬২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দেওয়া হচ্ছে আমদানিকৃত এলএনজি থেকে। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে কৃষিতে সারের চাহিদার কথা মাথায় রেখে বন্ধ সার কারখানাগুলো চালুর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ফলশ্রুতিতে চট্টগ্রামের সিইউএফএল চালু করা হয়। ইতোমধ্যে রাষ্ট্রীয় সার কারখানাটিতে চাহিদা মাফিক গ্যাস সরবরাহ শুরু করেছে কর্ণফুলী গ্যাস। সার কারখানার জন্য অতিরিক্ত গ্যাসও বরাদ্দ দিয়েছে পেট্রোবাংলা। বর্তমানে ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুটের কমবেশি গ্যাস পাচ্ছে কর্ণফুলী গ্যাস।
এদিকে রেশনিংয়ের কারণে চট্টগ্রামে উৎপাদন বন্ধ রেখেছে রাউজান তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ২১০ মেগাওয়াটের দুই ইউনিট, শিকলবাহা ১৫০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্লান্টও। গ্যাসের সরবরাহ কমেছে শিকলবাহা ২২৫ মেগাওয়াট রিসাইকেল পাওয়ার প্লান্টেও। তবে অন্যান্য বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুৎ দিয়ে চট্টগ্রামে সরবরাহ স্বাভাবিক রেখেছে পিডিবি।
এ বিষয়ে কথা হলে রাউজান তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) জসিম উদ্দিন ভুইয়া দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘মেনটেনেন্সের কারণে আমাদের একটি ইউনিট বেশ কিছুদিন ধরে বন্ধ থাকলেও একটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন স্বাভাবিক ছিল। চলতি মাসের শুরু থেকে গ্যাস সংকটের কারণে সক্ষম ইউনিটটিও বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এখন আমাদের দুই ইউনিটই বন্ধ রাখা হয়েছে।’
চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের (সিইউএফএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) আবদুল রহিম দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘আমরা গত ১৬ ডিসেম্বর রাত থেকে এমোনিয়া উৎপাদন শুরু করেছি। এখন সার উৎপাদনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। সবকিছু ঠিক থাকলে শনিবার সন্ধ্যা কিংবা রোববার সকালের মধ্যে পুরোদমে ইউরিয়া উৎপাদন শুরু করতে পারবো।’ তিনি বলেন, ‘জাতীয় গ্রিড থেকে নিয়মিত গ্যাস না পাওয়ার কারণে প্লান্ট বন্ধ রাখতে হয়। এখন যতটুকু পাই তন্মধ্যে সামর্থের সবটুকু ব্যবহার করা হয় না। আমাদের প্লান্টের সক্ষমতা দৈনিক ১৭শ’ মেট্রিক টন হলেও বর্তমানে আমরা প্রতিদিন ১৩-১৪শ’ মেট্রিক টন সার উৎপাদন করতে পারবো।’
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেজিডিসিএলের এক কর্মকর্তা বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম বেড়েছে। এতে আমদানি কমিয়ে গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাসের রেশনিং করা হচ্ছে। যে কারণে কর্ণফুলী গ্যাসের জন্য ২৬৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস বরাদ্দ রাখা হয়। এই সিদ্ধান্ত যখন নেওয়া হয় তখন সিইউএফএল বন্ধ ছিল। এখন সরকার সার উৎপাদনে অগ্রাধিকার দেওয়ার কারণে সিইউএফএল চালু হয়েছে। যে কারণে তাদের চাহিদা মোতাবেক দৈনিক প্রায় ৪০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে। সবমিলিয়ে বর্তমানে এলএনজি থেকে ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমানের দিকটা খেয়াল রাখতে হবে
পরবর্তী নিবন্ধএবার কুষ্টিয়ায় বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙচুর