কালজয়ী কৃতীমানব মহিউদ্দিন চৌধুরী স্মরণে

ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী | মঙ্গলবার , ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০ at ৫:৫০ পূর্বাহ্ণ

শুধু চট্টগ্রাম নয়, বাংলাদেশে নিখাদ দেশপ্রেমিক মহান মুক্তিযুদ্ধের অবিনাশী চেতনা ও মুক্তির মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক প্রেরণায় ঋদ্ধ এক চিরঞ্জীব অবিসংবাদিত রাজনীতিক-সামাজিক ব্যক্তিত্ব প্রয়াত আলহাজ্ব এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। ধার্মিকতা-অসাম্প্রদায়িকতা-মানবিকতায় পরিশুদ্ধ ক্ষণজন্মা এই প্রবাদ পুরুষের প্রয়াণ দিবসে তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদনের লক্ষ্যে স্বল্পপরিসরে এই নিবন্ধের উপস্থাপন। জাতীয় কবি নজরুলের ‘সত্য-কবি’ কবিতার পংক্তি উচ্চারণে দেশের আপামর শোষিত-বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কন্ঠে কন্ঠ মিলিয়ে সমস্বরে উচ্চারণ করতে চাই – ‘অসত্য যত রহিল পড়িয়া, সত্য সে গেল চ’লে/ বীরের মতন মরণ-কারারে চরণের তলে দ’লে।/ যে-ভোরের তারা অরুণ-রবির উদয়-তোরণ-দোরে/ ঘোষিল বিজয়-কিরণ-শঙ্খ-আরাব প্রথম ভোরে,/ রবির ললাট চুম্বিল যার প্রথম রশ্মি-টীকা,/বাদলের বায়ে নিভে গেল হায় দীপ্ত তাহারি শিখা !/ মধ্য গগনে স্তব্ধ নিশীথ, বিশ্ব চেতন-হারা,/ নিবিড় তিমির, আকাশ ভাঙিয়া ঝরিছে আকুল-ধারা,/ গ্রহ শশী তারা কেউ জেগে নাই, নিভে গেছে সব বাতি,/ হাঁক দিয়া ফেরে ঝড়-তুফানের উতরোল মাতামাতি !’
চট্টলবীর মহিউদ্দিন চৌধুরীর নিগূঢ় শূন্যতা এই করোনাকালীন দুঃসময়ে করুণ সামাজিক বাস্তবতায় নতুন করে চট্টগ্রামবাসীর মতো আমারও উপলব্ধিতে কড়া নাড়ছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিন ভাই ছিলেন আপাদমস্তক একজন সংগ্রামী। আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তায় অভিষিক্ত মহিউদ্দিন ভাইকে ঘিরে অনেক কবি-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবী-পেশাজীবী বিভিন্ন কবিতা-রচনা-প্রকাশনা গ্রন্থিত করেছেন। প্রয়াত কবি বন্ধু ত্রিদিব দস্তিদারের ‘বাতিঘর’ কবিতায় তিনি নিবেদন করেছেন – ‘আমার পাহাড়, সমুদ্র, কর্ণফুলী, জালালাবাদ/ বীর প্রসবিনী চট্টগ্রাম এবং মহিউদ্দিন।/ চট্টগ্রাম, তোমাকে ভালোবেসে যে মানুষটি আজ/ বাংলাদেশের মানচিত্রে ফোটালো/ অবিস্মরণীয় গোলাপ-অধ্যায়/ কর্মের সার্বজনীন হৃদয়/ তার হাত ধরে আমরা আজও/জেগে উঠি বার বার/ সময়ের ধারালো সংকেতে/ বাতিঘরের উজ্জ্বল আলোতে।’ যথার্থ অর্থেই এই চট্টলমানস ছিলেন চট্টগ্রামবাসীর সকল সুখ-দু:খের সারথী, উন্নয়নের প্রতিবাদী পথিকৃত এবং চট্টগ্রাম অনুন্নয়নের ক্রোধ ও কান্নার তড়িদ্বীক্ষণ বাদ্যযন্ত্র। হ্যামিলনের বংশিবাদকের মতো অকাতরে মানবধর্মকে জয় করে চট্টগ্রামবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করার অকৃত্রিম বন্ধু ও যোদ্ধা।
সম্ভ্রান্ত মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেয়া মহিউদ্দিন চৌধুরী ছিলেন বৈচিত্র্যময় জীবনপ্রবাহের প্রথাগত ধারায় নয়; সাবলীল ত্যাগের মহিমায় কিংবদন্তীর উপমায় ভাস্বর। নীতি-আদর্শ বিচ্যুত না হয়ে একই ধারায় গণমানুষের দুঃখ-দুর্দশা, দুর্ভোগ-হতাশা, দ্রোহ-বিদ্রোহ, ক্ষোভ-যন্ত্রণার সমাহারে চট্টগ্রামবাসীর অধিকার আদায়ের সংগ্রামে পরাভূত না হওয়া এক নির্ভীক সমরনেতা। বর্ণচোরা-অনুপ্রবেশকারী-প্রতারক-ছলচাতুরী ও শঠতার মিথ্যা অভিনয় শৈলীতে পারঙ্গমতাকে তীব্র ধিক্কার এবং ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে সৎ-সততা-সত্যবাদিতায় প্রকর্ষ মানুষগুলোকে সাথে নিয়ে চট্টগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। তিনবার একসাথে হজব্রত পালনের মাধ্যমে ধার্মিক এক মহিউদ্দিন-চরিতকে আবিষ্কারের কিছুটা সুযোগ হয়েছিল। একই সাথে অন্য সকল ধর্মের প্রতি প্রগাঢ় শ্রদ্ধাবোধ-ধর্মাবলম্বীদের নানামুখী সঙ্কট উত্তরণে প্রখর চিন্তক এবং মানবিক-অসাম্প্রদায়িক সমাজ প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর নৈর্ব্যত্তিক-বস্তুনিষ্ঠ-সত্যনিষ্ঠ ধারণায় ছিলেন পরিপুষ্ট।
১৯৭০ সাল মার্চ-এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ফলাফলের জন্য অপেক্ষারত অবস্থায় তাঁর সাথে আমার প্রথম পরিচয়। চট্টগ্রামের তৎকালীন উঁচুমার্গের অভিজাত এলাকা লাভলেইন আবেদিন কলোনিতে ছিল আমার পরিবারের বসবাস। বাসার অতি সন্নিকটে আবেদিন কলোনির স্বত্বাধিকারী শহীদ কৃতী রাজনীতিক-ক্রীড়াবিদ-ব্যাংকার শামসুল আবেদিন চৌধুরীর পিতা পরম শ্রদ্ধেয় প্রয়াত জয়নুল আবেদিন চৌধুরী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আবেদিন প্রেস। তখন চট্টগ্রামে হাতে গোনা কয়েকটি প্রেসের মধ্যে এটি ছিল অন্যতম ও সুপরিচিত। প্রেসের ম্যানেজার ছিলেন মহিউদ্দিন ভাইয়ের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধু বিশিষ্ট কবি-কথা সাহিত্যিক-বুদ্ধিদীপ্ত ছাত্রনেতা হেনা ইসলাম। বন্ধুত্বের সুবাদে স্বল্পব্যয়-বিনা বা বাকি খরচে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধির ও অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে প্রকাশিত-প্রচারিত নানামুখী পুস্তিকা-পোস্টার-লিফলেট ছাপানোর কাজে ব্যতিব্যস্ত শ্রদ্ধেয় মহিউদ্দিন ভাই প্রায় সময় প্রেসে যাতায়াত করতেন।
ছাত্র রাজনীতি-কবিতা-সাহিত্য-সংস্কৃতি সংযোগের কারণে প্রয়াত হেনা ইসলামের সাথে আমার বন্ধুত্ব মহিউদ্দিন ভাইয়ের সাথে প্রগাঢ় সম্পর্ক স্থাপনে প্রচণ্ড সহায়ক ছিল। সেই সময়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামে প্রায় বিক্ষোভ-প্রতিবাদ সমাবেশ-মিছিল-জনসভা অনুষ্ঠিত হতো। বঙ্গবন্ধুর একনিষ্ঠ অনুসারী হিসেবে মহিউদ্দিন ভাইয়ের অকুতোভয় পদচারণা ছিল অবর্ণনীয় দু:খ-দুর্দশায় ভরপুর। তখন বেলা বারটায় স্বল্প টিকেট মূল্যের চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা যাওয়ার প্রধান বাহন ছিল গ্রীনএ্যারো ট্রেন। প্রেসে ছাপা বিভিন্ন প্রচারপত্র ঢাকার জনসভায় বিলি করার জন্য সামগ্রিক প্রস্তুতি গ্রহণে বিলম্বের কারণে চট্টগ্রাম রেল স্টেশনে পৌঁছুতে বিশাল প্রচারপত্রের বান্ডেল কাঁধে নিয়ে মহিউদ্দিন ভাই দৌড়াতে শুরু করলেন। এহেন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে আমার পকেটে মজুদ থাকা বারোটি টাকা আমি মহিউদ্দিন ভাইয়ের হাতে দিয়ে রিকশাযোগে স্টেশনে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করি।
প্রিয় মহিউদ্দিন ভাই গালভরা হাসিতে দুষ্টুমি মিশ্রিত হাতে আমার মুখে হাতটা বুলিয়ে দিয়ে টাকা গ্রহণ না করে দৌড়ে স্টেশনে পৌঁছুনোর জন্য পদযাত্রা শুরু করেন। পিছন থেকে তাকিয়ে থাকা আমি পরম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় এই মহান ছাত্রনেতার দেশমুক্তির প্রতিশ্রুতিতে অভিভূত হয়ে পড়লাম। আরো আশ্চার্যের ঘটনা হচ্ছে; সামান্য পথ পেরোতেই উনার পায়ে স্পঞ্জের স্যান্ডেলের ফিতাটা ছিঁড়ে গেল। ন্যূনতম দ্বিধাবোধ না করে সঠিক সময়ে ট্রেন ধরার লক্ষ্যে স্যান্ডেলজোড়া পাশের ড্রেনে ছুঁড়ে ফেলে ইট পাথরে অত্যন্ত অমসৃণ রাস্তা ভেঙে উনি খালি পায়ে দৌড়াতে লাগলেন। এই দৃশ্য আমার জীবনে এক অপরিমেয় আদর্শিক চেতনার উজ্জ্বীবন ঘটিয়েছে। ১৯৭০ সালে সম্ভবত জুন মাসে আমাদের এসএসসির ফলাফল প্রকাশের পর লেটারসহ প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়ে সত্তর সালের আগস্ট মাসে চট্টগ্রাম কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হই।
একই এলাকায় বসবাসকারী বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস’র বড়ভাই আহমদ খালেদ কায়সার, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং খ্যাতিমান আওয়ামী লীগ নেতা দানু ভাইয়ের ছোটভাই কাজী এহেতেশাম, বন্ধু কিবরিয়া, হান্নান, আনোয়ারসহ অনেকেই একই সাথে ছাত্র রাজনীতি এবং সাহিত্য-সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী ‘সবুজ আমরা জাগব’ সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে সত্তরের নির্বাচন থেকে শুরু করে ২৬ মার্চ পর্যন্ত বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামের কঠিন সময়ে মহিউদ্দিন ভাই, ইউসুফ ভাই, জালাল ভাই, দানু ভাই, বোরহান ভাই এবং বর্তমান চসিক মেয়রপ্রার্থী রেজাউল ভাইসহ অনেক তুখোড় ছাত্রনেতাদের সাথে পরিচয় এবং সখ্যতা গড়ে ওঠে। আমরা চট্টগ্রাম কলেজে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ইউসুফ ভাই, জালাল ভাই, দানু ভাইয়ের সাথে অধিকমাত্রায় সম্পৃক্ত হলেও দানু ভাই ও বোরহান ভাইয়ের মাধ্যমে প্রায় সময় সন্ধ্যায় সিটি কলেজে মহিউদ্দিন ভাইয়ের সাথে আমাদের সাক্ষাৎ এবং আলাপ আলোচনা নিয়মিত অনুষ্ঠিত হতো।
স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক কর্মযজ্ঞে অংশগ্রহণ এবং মহিউদ্দিন ভাইয়ের নেতৃত্বে আস্থাভাজন ও স্নেহধন্য হওয়ার বিষয়ে তাঁর মহাপ্রয়াণ দিন পর্যন্ত বিস্তারিত বর্ণনা করতে হলে কয়েক খন্ড বিশাল পুস্তক প্রণীত হবে। আজকের দিনে শুধু উল্লেখযোগ্য দুই একটি ঘটনার স্মৃতিচারণ করতে চাই। চট্টগ্রাম বন্দরকে ঘিরে যে একটি অশুভ চক্রের নিকৃষ্ট ষড়যন্ত্র হয়েছিল; সে সময় স্বয়ং বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মহিউদ্দিন ভাইয়ের সাথে সে ব্যাপারে লবিং করতে এসেছিলেন। তার আগেই প্রাণপ্রিয় নেতা মহিউদ্দিন ভাই প্রয়াত আরেক তুখোড় শ্রদ্ধেয় নেতা এডভোকেট আবুল কালাম আজাদকে বন্দর ও সিডিএর প্রাক্তন চেয়ারম্যান প্রয়াত ইঞ্জিনিয়ার মাহমুদ উল ইসলাম চৌধুরী ও আমার সাথে যোগাযোগ করে তাঁর সাথে বৈঠকের ব্যবস্থা করতে বলেন।
এরই আলোকে প্রিয় মহিউদ্দিন ভাইয়ের বাসায় মিলিত হয়ে ‘বন্দর বাঁচাও, চট্টগ্রাম বাঁচাও’ আন্দোলন পরিচালনা করার জন্য ইঞ্জিনিয়ার মাহমুদ উল ইসলাম চৌধুরীকে আহবায়ক, আমাকে প্রথম যুগ্ম আহবায়ক, প্রয়াত অধ্যাপিকা সালমা চৌধুরীকে দ্বিতীয় যুগ্ম আহবায়ক এবং পেশাজীবী নেতা সাংবাদিক হেলাল উদ্দিন চৌধুরীকে সদস্য সচিব করে কমিটি গঠিত হয়। এই কমিটির মাধ্যমে কর্ণফুলি নদীর মোহনায় গভীর সমুদ্র বন্দর প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে সংগ্রামের প্রাক্কালে মহিউদ্দিন ভাই ও মাহমুদ উল ইসলাম চৌধুরীকে পৃথকভাবে বড় অঙ্কের অর্থ দিয়ে তাঁদের স্তব্ধ করার বিষয়ে বিপুল জনশ্রুতি রয়েছে। কোন ধরনের লোভ-লাভ বা ষড়যন্ত্রের কাছে মাথা নত না করে বন্দরের তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী অত্যন্ত সজ্জন ব্যক্তি প্রয়াত সুলতান মাহমুদ ভাই বহুবার আমাদের সাথে গোপন সভায় মিলিত হয়ন। তাঁর এক প্রিয় সহকর্মীর সহযোগিতায় নতুন বন্দর প্রতিষ্ঠা হলে চট্টগ্রাম বন্দরের অস্তিত্ব কীভাবে বিলুপ্ত হয়ে যাবে, সেসব বিষয়ে বিস্তারিত লিখে ম্যাপসহ পুস্তিকা রচনায় তাঁর সহায়তা চিরস্মরণীয়। দেশের বাজেট প্রণয়নে অন্যতম অবদান রাখার ক্ষেত্রে বন্দরের ভূমিকা অব্যাহত এবং চট্টগ্রামের উন্নয়ন সচলে নির্লোভ-নির্মোহ মহিউদ্দিন ভাইয়ের আন্দোলনের সেই ফসল পুরো বাংলাদেশ প্রতিক্ষণেই অনুধাবন করতে পারছে।
দেশের সামগ্রিক অগ্রগতি এগিয়ে নেওয়ার স্বার্থে এই আন্দোলনকে জোরদার করে আদালতের মাধ্যমে কথিত সংস্থার বিরুদ্ধে আমরা জয়ী হই। বাদী পক্ষের প্রধান ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার মাহমুদ উল ইসলাম চৌধুরী এবং গং হিসেবে আমরা সকলে ছিলাম সহযোগী। কিন্তু নেপথ্যের প্রধান নায়ক ছিলেন চট্টলবীর এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। দেশের সর্বোচ্চ প্রথিতযশা আইনজীবী ড. কামাল হোসেন এবং তাঁর সহকারী হিসেবে মহিউদ্দিন ভাইয়ের অত্যন্ত প্রিয় আইনজীবী প্রয়াত হরিসাধন দেব ব্রহ্মন’র প্রজ্ঞা ও মেধার প্রতিফলনে অভূতপূর্ব কার্যকর যুক্তি-তর্কে আইনি লড়াইয়ে প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করা হয়। চট্টগ্রাম বন্দর রক্ষার এই আত্মপ্রত্যয়ী যুদ্ধে জয়ী হয়ে মহিউদ্দিন ভাইয়ের নেতৃত্বের বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতা বর্তমান দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থান নির্ধারণে কী পরিমাণ অবদান রেখেছে; সচেতন যে কেউ অন্তর্দৃষ্টিতে পর্যালোচনা করলেই তা অতি সহজে অনুমিত হবে। পরবর্তীতে এ সম্পর্কে বিস্তারিত লেখার প্রবল আগ্রহ রয়েছে।
এছাড়া প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, হরিজন সম্প্রদায়কে সেবক নামাকরণ ও চসিক গ্যাজেটভুক্তকরণ, জাপানের কোবে নগরীর তত্ত্বাবধানে ‘অয়িক’র সাথে চুক্তি সম্পাদন, জাপানের প্রদেশ গভর্নর কর্তৃক সোনার চাবি প্রদানের বিষয়, শ্রদ্ধেয় নেতা জলিল সাহেবের ৩০ এপ্রিল ডেটলাইন আন্দোলন, ৯১ ঘূর্ণিঝড়ে মৃতপ্রায় রোগীদের সেবাপ্রদানে মুসলিম হলে অস্থায়ী হাসপাতাল স্থাপন, সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক জনসংখ্যা জরিপ সম্পাদন, পর পর তিনবার মেয়র নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও জয়লাভ, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সকল আন্দোলন সংগ্রামের নেপথ্যে নেতৃত্ব প্রদানসহ বহু ঘটনার সাথে তাঁর সাথে আমার প্রত্যক্ষ যোগাযোগ-পরামর্শ বিনিময় এবং সকল গুরুত্বপূর্ণ কাজে ইঞ্জিনিয়ার মাহমুদ উল ইসলাম চৌধুরীসহ আমাদের কর্মযজ্ঞ ছিল প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য। এমনকি ২৭ বছর যিনি ১লা ডিসেম্বর আউটার স্টেডিয়ামে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয়মেলা উদ্বোধন করতেন, অসুস্থতার কারণে আমাকে দিয়েই সেই উদ্বোধনী পর্ব সম্পন্ন করার মধ্য দিয়েই আমার প্রতি তাঁর অপরিসীম এবং অসাধারণ স্নেহ-ভালোবাসার বহি:প্রকাশে আমাকে যে চিরঋণী করে রেখেছেন; আমৃত্যু আমি তা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণে রাখব। চট্টগ্রাম ও সমগ্র দেশবাসী তাঁকে হৃদয়ের গভীরে ধারণ করে মহান স্রষ্টার দরবারে তাঁর আত্মার শান্তির জন্য নিয়মিত দোয়া প্রার্থনা আমাদের সকলের অগ্রগণ্য প্রতিশ্রুতির গভীরতম স্তম্ভ হিসেবেই বিবেচিত। আবারো তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে এখানেই শেষ করছি।

লেখক: শিক্ষাবিদ, সমাজ-অপরাধবিজ্ঞানী,
সাবেক উপাচার্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্মৃতিতে অম্লান এক কিংবদন্তি : অবিস্মরণীয় ব্যক্তিত্বে কর্মবীর মহিউদ্দিন চৌধুরী
পরবর্তী নিবন্ধ৯৯ টাকায় দেখা যাবে সিনেমা!