সেনাবাহিনীর মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় সাবেক ওসি প্রদীপ দাসকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করায় টেকনাফের ভুক্তভোগীরা স্বস্তি প্রকাশ করেছে। গতকাল কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম তামান্না ফারার আদালতে র্যাব এই অভিযোগপত্র জমা দেয়। ভুক্তভোগী টেকনাফ পুরান পল্লান পাড়ার বেলুজা ও আমিনা খাতুন জানান, আজ (গতকাল) টিভির খবরে দেখেছি, সাবেক ওসি প্রদীপসহ তার সহযোগীর বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে র্যাব। এতে আমরা খুশি। প্রদীপ টেকনাফের অনেক মানুষকে হত্যা করেছে। সিনহা হত্যা তা-ই প্রমাণ করে। তার মতো অপরাধীর ফাঁসি হওয়া দরকার। আমরা তার কঠিন শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
তারা জানান, গত ৫ জুলাই দিনেদুপুরে টেকনাফ থানা পুলিশের এএসআই নাজিমের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘরে ঢুকে আমিসহ ঘরের লোকজনকে মারধর করে। এরপর আলমারি ভেঙে স্বর্ণালংকার, দেড় লাখ নগদ টাকা ও জায়গা জমির কাগজপত্র লুট করে। এ সময় তাদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে টেনে হিঁচড়ে পরিবারের সদস্য কবির আহমদসহ তাদেরকে থানায় নিয়ে মারধর করে। পরে তাদের ছেড়ে দেওয়ার নামে দুই লাখ টাকা ঘুষ নেয় নাজিম। তবে ১শ পিস ইয়াবা দিয়ে কারাগারে চালান দেয়। দেড় মাস কারাভোগ শেষে আমরা দুজন জামিনে বেরিয়ে এলেও এখনও কারাভোগ করছে পরিবারের আরেক সদস্য কবির। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চেয়ে সরকারের কাছে বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
আরেক ভুক্তভোগী ফরিদা বেগম কাজল জানান, এমন কোনো অপরাধ নেই প্রদীপ করেনি। এখনো আমাকে তার দেওয়া মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে হয়। কোনো অপরাধ না করেও আমি অপরাধী হলাম। তার চেয়ে কষ্ট কী আর হতে পারে। এখন ভিক্ষার টাকায় মামলা চালাতে হচ্ছে। সরকারের কাছে এ মামলা প্রত্যাহারের দাবি করছি।
তিনি জানান, চলতি বছরের শুরুতে মাদক চোরাচালানের অভিযোগে আমি, ভাই আবদুর রহমান এবং স্বামী আবদুল কাদেরকে আটক করেছিল ওসি প্রদীপ। দুদিন থানার তিনতলার একটি কক্ষে আলাদা করে আমাদের ওপর নির্যাতন চালায়। এ সময় আমাকে চোখ-মুখ বেঁধে মারধর করে। পরদিন ৩শ পিস ইয়াবা দিয়ে কঙবাজার কারাগারে পাঠায়। তবে বাঁচতে পারেননি কাজলের ভাই আবদুর রহমান এবং স্বামী আবদুর কাদের। পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত হন তারা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ইয়াবা ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসীর ট্যাগ লাগিয়ে নিরীহ লোকজনকে থানায় ধরে নিয়ে এসে মোটা অংকের অর্থের জন্য চাপ দিত ‘ওসির টিম’। যারা টাকা দিতে পারত না তাদের ‘ক্রসফায়ার’ দেওয়া হতো।