আমরা এখন সত্যি আইন না মানার তালে আছি। এই দেখুন না, সরকারের আইনে আছে, প্রকাশ্যে ধূমপান করলে ৫০ টাকা জরিমানা। কিন্তু এটাকে কেউ তোয়াক্কা করছি না। প্রশাসন সেদিকে নজর দিচ্ছেন না। মাঝে মাঝে এমনও দেখা যায় আইনের রক্ষাকারী সদস্যদের রাস্তায় প্রকাশ্যে ধূমপানরত। নিজেই এ অন্যায়টি নিশ্চিন্তে করে যাচ্ছেন। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের এমন আচরণে সাধারণ জনগণ আইন না মানার উৎসাহ পাচ্ছে। আমরা যারা বড়, তারা সাধারণত ছোটদের মাধ্যমে পান, সিগারেট এগুলো আনতে অভ্যস্ত, তাতে ছোটরা এবিষয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠে। আমরা যদি এটা না করি তাহলে আস্তে আস্তে ধূমপায়ীদের সংখ্যা হ্রাস পাবে। পলিথিন ব্যবহারের কথা আসুন, আমরা কতটুকুই মানছি। আমরা চটের থলে ব্যবহার করলে একদিকে অর্থের দিকে লাভবান হব অন্যদিকে পরিবেশ দূষণ থেকে রক্ষা পাবে দেশ। ভেজালের কথা ধরুন, কি না হচ্ছে সকল খাদ্যদ্রব্যে বলুন, জীবন রক্ষাকারী ঔষধ থেকে শুরু করে, প্রসাধনী সামগ্রীসহ কি নেই আমাদের ভেজালের তালিকায়। নিরাপদ সড়ক চাই – এই স্লোগান আমাদের খুব প্রিয়। কিছুদিন আগে ছাত্র -যুবসমাজ দেখিয়ে দিল কিভাবে শৃঙ্খলার মাধ্যমে চললে দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব, আমরা যদি চালক ও জনগণ ট্রাফিক আইন মেনে চলি তাহলে দুর্ঘটনা অনেকাংশে হ্রাস পাবে। চট্টগ্রামে পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তার এর সহধর্মিণী মিতু হত্যার পর মোটরসাইকেলে দুজনের অধিক যাত্রী হলে হেলমেট পরা বাধ্যতামূলক ছিল। কিন্তু এখন দেশবাসী কি দেখছেন? দুজন কেন তিনজনও নিচ্ছেন। কারোও হেলমেটের বালাই নেই। আমরা জানি ঘুষখোর, চোরাকারবারি, মাদকাসক্ত ব্যক্তি আমাদের জাতীয় শত্রু, কিন্তু আপনারা নিজেই বলুন না, এদের সাথে আমাদের সম্পর্ক কেমন? আমরা কারণে অকারণে প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে ঘুষ দিচ্ছি বা নিচ্ছি। এতে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম কি শিখছে? আমরা যাদের কথা চিন্তা করে আমরা জেনে না জেনে একাজে যুক্ত হচ্ছি তাদের কাছে আমাদের দিন দিন গ্রহণযোগ্যতা কেমন? তারা কি সত্যিকার অর্থে আমাদেরকে সম্মানের চোখে দেখছে? নাকি আড়ালে আবডালে আমাকে নিয়ে সমালোচনায় মুখরিত করছে এলাকা। আজকে ধর্ষকদের বিরুদ্ধে আইন হয়েছে, কিন্তু ধর্ষণ কি বন্ধ হচ্ছে, বরং আনুপাতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা ধর্ষকদের নানারকম সহযোগিতা না করে এদের সামাজিকভাবে বয়কট করি। অন্ততপক্ষে আমরা যারা আইনজীবী, সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, অন্যান্য শ্রেণির লোক, আমরা তো পারি তাদের সহযোগিতা না করে, তাদের ভুলগুলো আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে। তাহলে আর একজন এরকম গর্হিত কাজ করতে বিরত থাকবে বা উৎসাহ হারাবে। আজ ধর্ষণ কভিড ১৯ থেকে মারাত্মক মহামারিতে পরিণত হয়েছে। আজ তার লাগাম ধরতে না পারলে পরবর্তীতে তা কোথায় গিয়ে দাড়াবে, তা একমাত্র মহান সৃষ্টিকর্তা ছাড়া কেউ জানবে না। কভিড ১৯ প্রতিরোধে মাস্ক ও স্যানিটেশন ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। করোনাকালে বাঁচার জন্য এই দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাতাসের সাথে যে জীবাণু সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। মাস্ক ও হ্যান্ড স্যাটিটেশন ব্যবহারে তা পুরোপুরি না হলেও অনেকাংশে সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব। আমরা ঘর থেকে বের হলে কি দেখছি? আমি বা আমার সাথে যারা আছেন তাদের কারো মাস্ক নেই। যানবাহন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান,ব্যাংক, সরকারি অফিস, আদালত পাড়া, সব জায়গায় সরকারের নির্ধারিত “ঘঙ গঅঝক ঘঙ ঊঘঞজণ ” মেনে চলি, তাহলে এই মরণব্যাধি প্রতিরোধ করা সম্ভব। জীবন রক্ষাকারী ঔষধ কোম্পানীগুলো অধিক মুনাফা পাওয়ার আশায় প্রয়োজনীয় ক্যামিকেল কম ব্যবহার করে অধিক ক্ষতিকর ক্যামিক্যাল বেশি ব্যবহার করে আমাদের মৃত্যুর দিকে ধাবিত করছে । অন্ততপক্ষে নিজের ও পরিবারের সুস্থ থাকার কথা ভেবে আমরা এই আইনটি তো মানতে পারি। আসলে প্রচলিত আইনকে সম্মান জানানো আমাদের প্রত্যেক সচেতন নাগরিকের কর্তব্য। তাই আসুন আমরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে দেশের কাজে আত্মনিয়োগ করি। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে উৎসাহিত করি।
লেখক : শিক্ষক, শিশুসাহিত্যিক