বিশ্বে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ অনেক বেশি ভয়াবহরূপে প্রকাশ পেয়েছে। প্রতিদিন আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা প্রথম দফার চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি হচ্ছে। এ অবস্থায় আশা জাগিয়েছে কয়েকটি টিকা। ফাইজার ও বায়োএনটেকের উদ্ভাবিত টিকা যুক্তরাজ্য অনুমোদন দিয়েছে। টিকা প্রয়োগ শুরু হয়েছে। আশা করা হচ্ছে এটি কার্যকর হিসেবে বিবেচিত হবে। রাশিয়ার তৈরি ‘স্পুৎনিক টিকাও রাশিয়ার অনুমোদন পেয়েছে এবং আগামী সপ্তাহে সাধারণ মানুষের ওপর টিকাটি প্রয়োগ করা হবে। মডর্নার উদ্ভাবিত টিকা এবং অঙফোর্ডের টিকাও খুব শিগগির একাধিক দেশের অনুমোদন পেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চীনের টিকাও চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আশা করা যায়, জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারি নাগাদ বিশ্বব্যাপী টিকার ব্যাপক প্রয়োগ শুরু হবে। বাংলাদেশও চেষ্টা করে যাচ্ছে, দ্রুততম সময়ে টিকা হাতে পেতে। কিন্তু সারা দুনিয়ার চাহিদা মিটিয়ে উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলো খুব দ্রুত বাংলাদেশের সম্পূর্ণ চাহিদা পূরণ করতে পারবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। ফাইজারের টিকা সংরক্ষণ ও পরিবহন করতে হয় মাইনাস৭০ ডিগ্রির সেলসিয়াসে। দামও তুলনামূলক অনেক বেশি। প্রতি ডোজ টিকার দাম পড়বে ৪০ ডলারের কাছাকাছি। তারপরও এই টিকা সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ অন্য কোনো টিকা কবে আমরা হাতে পাব তা অনিশ্চিত। তাই যেটি আগে পাওয়া যায় সেটিই আগে সংগ্রহের উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি এই টিকা সংরক্ষণ ও পরিবহনের উপযোগী স্থাপনা ও ব্যবস্থাপনা দ্রুত গড়ে তুলতে হবে। জানা যায়, মডার্নার টিকার সংরক্ষণ, পরিবহন ও গুদাম ফাইজারের টিকার তুলনায় অনেকটা সুবিধাজনক হবে। তাই মডার্নার টিকা সংগ্রহেও অনুরূপ উদ্যোগ নিতে হবে। রাশিয়ার তৈরি স্পুৎনিক-ভি নিয়ে কিছু সমালোচনা থাকলেও টিকাটির সংরক্ষণ, পরিবহন ও দাম সবই আমাদের জন্য অনেক বেশি উপযোগী। অঙফোর্ডের টিকা সংগ্রহ করাও আমাদের জন্য অনেক সহজ হবে। দুটি টিকারই দাম পড়বে পাঁচ থেকে সাত ডলারের মধ্যে এবং দুইটি সাধারণ ফ্রিজ টেম্পারেচারের সংরক্ষণ ও পরিবহন করা যায়। জানা যায়, রাশিয়ার টিকা বাংলাদেশের উৎপাদনের অনুমতি দিতেও তারা রাজি আছে। আর অঙফোর্ডের টিকা ভারতেও তৈরি হবে। জনপ্রতি দুই ডোজ করে টিকা নেওয়ার প্রয়োজন হবে। সে হিসাবে বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের জন্য ৩৪ কোটি ডোজ টিকা লাগবে। এখন থেকেই জোর তৎপরতা না চালালে এই পরিমাণ টিকা পেতে বাংলাদেশের এক বছরেরও বেশি সময় লেগে যেতে পারে এবং সে জন্য অনেক বেশি মূল্য দিতে হতে পারে। অবশ্য জরুরি প্রয়োজনে সরকার যাতে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে উৎপাদকের কাছ থেকে টিকা কিনতে পারে, সে জন্য অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি প্রয়োজনীয় অনুমোদন দিয়ে রেখেছে। আমরা আশা করি, সম্ভাব্য দ্রুততম সময়েই বাংলাদেশের মানুষ করোনাভাইরাসের টিকা পাবে।