বিএনপির চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সম্ভাব্য আহ্বায়ক কমিটি থেকে বাদ পড়ছেন- এমন খবরে একজোট হয়েছেন মহানগরের আওতাধীন ১৫টি থানার সাধারণ সম্পাদক। গতকাল মঙ্গলবার দিনভর তারা তিন দফায় বৈঠক করেছেন। এর মধ্যে একটি ছিল কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীমের সঙ্গে। কমিটি গঠনের সাথে জড়িত কেন্দ্রীয় এ নেতার সাথে গোপনীয়ভাবে অনুষ্ঠিত বৈঠকের খবরটি ছড়িয়ে পড়লে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। অবশ্য বৈঠকের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন মাহবুবের রহমান শামীম।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিএনপি নেতা জানান, মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় বিএনপির চট্টগ্রাম মহানগর কমিটি পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ৭১ সদস্যের একটি কমিটির রূপরেখাও তৈরি করা হয়। এতে নগর কমিটির সহ-সভাপতি, যুগ্ম সম্পাদক, ১৫ থানার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কমিটির আকার আরো ছোট করার নির্দেশনা দেন। এর ফলে থানা কমিটির সাধারণ সম্পাদকদের বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
এদিকে বাদ দেয়ার খবরে গতকাল একজোট হয়ে সভা করেন থানা কমিটির সাধারণ সম্পাদকগণ। গতকাল বিকেল সাড়ে ৩টায় প্রথমে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেন। সন্ধ্যা ৬টায় নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্করের সাথে এবং ৭টায় একটি রেস্টুরেন্টে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীমের সাথে। বৈঠকে আহ্বায়ক কমিটিতে তাদের রাখার দাবি জানান সাধারণ সম্পাদকগণ। অবশ্য গতকালকের বৈঠকে বায়েজিদ থানার সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন না বলে জানা গেছে।
বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে মাহবুবের রহমান শামীম দৈনিক আজাদীকে বলেন, কোনো বৈঠক করিনি। কোনো আনুষ্ঠানিক বৈঠকে ছিলাম না। আমি এমনিতেই বন্ধুদের সাথে প্রায় আড্ডা দিই। আজও আড্ডা দিচ্ছিলাম, সেখানে তাদের সঙ্গে দেখা হয়েছে মাত্র। তাদের কি যেন হবে সেখানে দাওয়াত দিয়েছে। নগর কমিটি নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে জনিতে চাইলে তিনি বলেন, কমিটি নিয়ে তাদের সাথে কেন আলোচনা করবো? কমিটি গঠন করবেন ঊর্ধ্বতনরা। কমিটি কি রকম হবে না হবে সেটা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং দলের সিনিয়র নেতারই জানেন।
বৈঠকে উপস্থিত বাকলিয়া থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আফতাবুর রহমান শাহীন দৈনিক আজাদীকে বলেন, নগরের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্করের সাথে বৈঠক করেছিলাম। সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম আমাদের ৭টায় সময় দেন। সামনে কমিটি হবে। আমরা সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনা করেছি। সাথে গেট টুগেদারও হলো। সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন ঢাকায় থাকায় তার সঙ্গে বসতে পারিনি। তবে আমরা ফোনে কথা বলেছি। কমিটির বিষয়ে দলের যেকোনো সিদ্ধান্ত আমরা মেনে নিব।
বৈঠকে মাহবুবের রহমান শামীম কি বলেছেন জানতে চাইলে বাকলিয়া থানার এ সাধারণ সম্পাদক বলেন, তিনি বলেছেন কমিটি ছোট হচ্ছে। কমিটিতে কারা থাকবেন সেটা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপর নির্ভর করবে।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নগর বিএনপির এক নেতা বৈঠকের খবরে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, খুব গোপনীয়ভাবে নগর কমিটি করা হচ্ছে। কমিটিতে কারা থাকবেন বা থাকবেন না সেটা তো কমিটি গঠনে সম্পৃক্তদের ছাড়া বাকিদের জানার কথা না। কিন্তু সেটা ফাঁস হলো কিভাবে? কারা এর সঙ্গে জড়িত?
এদিকে গতকালকের বৈঠকে উপস্থিত সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে কোতোয়ালী থানার জাকির হোসেন, ইপিজেড থানার রোকন উদ্দিন, চান্দগাঁও থানার শরীফ খানের সাথে দৈনিক আজাদীর কথা হয়। তারা বৈঠকের কথা স্বীকার করলেও কমিটি গঠনকে ঘিরে বৈঠক হয়নি বলে দাবি করেছেন। গেট টুগেদার হিসেবে এবং সামনে পিকনিক করার পরিকল্পনা থেকেই বৈঠকে বসেন বলে দাবি করেছেন তারা। শরীফ খান বলেন, পলিটিক্যাল ইস্যু না। এমনি আমরা পাঁচ-ছয়জন বসছিলাম। জাকির হোসেন বলেন, সাংগঠনিক আড্ডা ও চা চক্র ছাড়া আর কিছু না। সামনে আমরা পিকনিক করবো।
নগর বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৬ আগস্ট ডা. শাহাদাতকে সভাপতি, আবুল হাশেম বক্করকে সাধারণ সম্পাদক এবং আবু সুফিয়ানকে সহ-সভাপতি করে নগর বিএনপির তিন সদস্যের কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্র। এর প্রায় ১১ মাস পর ২০১৭ সালের ১০ জুলাই ২৭৫ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়। অবশ্য এর ছয়দিন পর ১৬ জুলাই কমিটিতে আরো একজন সহ-সভাপতি অন্তর্ভুক্ত করে কমিটির আকার হয় ২৭৬ জনে।
এদিকে গত ৯ অক্টোবর স্কাইপের মাধ্যমে নগর বিএনপির ৫৫ জন নেতার সাথে কথা বলেন দুর্নীতি ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিএনপি নেতারা ছিলেন নয়াপল্টনস্থ দলীয় কার্যালয়ে। সেদিন তিনি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় বিএনপির চট্টগ্রাম মহানগর কমিটি পুনর্গঠনে নেতাকর্মীদের আভাস দেন।
এর আগে গত ২১ জানুয়ারিও চট্টগ্রামের শীর্ষ পাঁচ নেতার সাথে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেন তারেক রহমান। সেবারও নগর কমিটি পুনর্গঠনে নির্দেশ দেন তিনি। তখন বিএনপি নেতারা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন পর্যন্ত বর্তমান কমিটির কার্যক্রম বহাল রাখার অনুরোধ করলে তাতে সায় দেন তিনি। তবে নির্বাচনের পর সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি।