বেতন পরিশোধে একদিনেই হাজারো ছাত্রী-অভিভাবক

সিদ্ধান্তটি সুবিবেচনাপ্রসূত হয়নি : জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ।। খাস্তগীর স্কুল

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ৮ ডিসেম্বর, ২০২০ at ৬:২৬ পূর্বাহ্ণ

করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার কথা চিন্তা করে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে সরকার। উদ্দেশ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যাতে ছাত্র-ছাত্রীদের ভিড় না হয় এবং করোনা সংক্রমণ থেকে যাতে তাদের মুক্ত রাখা যায়। মাঝখানে কিছুদিন কমলেও বর্তমানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হার ফের উর্ধ্বমুখী। দেশব্যাপী করোনা আক্রান্তের সংখ্যাও দিনদিন বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে স্কুলের সব ক্লাসের ছাত্রীদের বেতন একদিনে আদায় করেছে নগরীর ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। বেতন পরিশোধে গতকাল সকাল থেকে হাজারো অভিভাবক-ছাত্রীকে স্কুলে জড়ো হতে দেখা গেছে।
একাধিক অভিভাবকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সোমবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টার মধ্যে স্কুলের বেতন পরিশোধ করতে আগেই নোটিশ দেয় স্কুল কর্তৃপক্ষ। ফোন করেও বিষয়টি ছাত্রী-অভিভাবকদের জানানো হয়। স্কুলের নির্দেশনা অনুসারে তারা বেতন পরিশোধ করতে এসেছেন। যদিও স্কুলে এসে অভিভাবক-ছাত্রীদের বড়সড় ভিড় দেখে অনেকের চোখ কপালে উঠে। কম হলেও হাজারের বেশি অভিভাবক-ছাত্রী জড়ো হয়েছেন স্কুল প্রাঙ্গণে। এত ভিড়ের মাঝে বেতন পরিশোধ করতে হবে, বিষয়টি কল্পনাও করেননি অনেক অভিভাবক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক বলেন, এখানে এসে দেখছি প্রচুর ভিড়। পরে জানতে পারলাম- সব ক্লাসের বেতন একদিনেই নিচ্ছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। যার কারণে এতটা ভিড়। সব ক্লাসের বেতন একদিনে আদায় না করে এক ক্লাসের বেতন একদিনে নেয়া হলে এমন ভিড় সহজেই এড়ানো যেতো বলে অভিমত ওই অভিভাবকের। একদিনে সব ক্লাসের বেতন আদায়ের কথা স্বীকার করেছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শাহিদা আক্তার। তার দাবি- কেবল মর্র্নিং শিফটের (প্রাতঃশাখার) ছাত্রীদের বেতন পরিশোধের নির্ধারিত সময় ছিল গতকাল সোমবার। এই এক শিফটে ৫ম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রী সংখ্যা প্রায় এক হাজার। বেতন পরিশোধে অভিভাবকদের আসতে নির্দেশনা দেয়া হয় জানিয়ে প্রধান শিক্ষিকা শাহিদা আক্তার বলেন, আমরা শুধু অভিভাবকদের আসতে বলেছিলাম। কিন্তু মা কিংবা বাবার সাথে অনেক ছাত্রীও চলে এসেছে। যদিও প্রতিটি ক্লাসের জন্য আলাদা লাইন করে স্বাস্থ্য বিধি মেনে বেতন নেয়া হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। আর অ্যাসাইনমেন্টের ক্ষেত্রেও একই দিনে বেশ কয়টি ক্লাসের শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট জমা নেয়া হয় বলে জানান প্রধান শিক্ষিকা। স্কুলের ক্যাম্পাস বড় হওয়ায় স্বাস্থ্য বিধি মেনেই এসব কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয় বলে দাবি তার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা নাসিরাবাদ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদুল আলম হোসাইনী আজাদীকে বলেন, শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের সুরক্ষার কথা বিবেচনায় নিয়ে অ্যাসাইনমেন্ট জমাদানের ক্ষেত্রেও একদিনে এক ক্লাসের শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট জমা নেয়ার নির্দেশনা রয়েছে। যাতে বেশি সংখ্যক অভিভাবক বা শিক্ষার্থীকে একই সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জড়ো হতে না হয়। বেতন আদায়ের ক্ষেত্রেও ক্লাস ভিত্তিক আলাদা দিনে সময় নির্ধারণ করা যেত। সেটি না করে একদিনেই সব ক্লাসের বেতন আদায়ের সিদ্ধান্তটি সুবিবেচনাপ্রসূত হয়নি বলে মন্তব্য করেন ভারপ্রাপ্ত জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।
একই মন্তব্য মাউশির আঞ্চলিক উপ-পরিচালকের দায়িত্বে থাকা কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষক দেবব্রত দাশের। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য বিধি মেনেই অ্যাসাইনমেন্ট জমাদান কিংবা বেতন আদায়ের নির্দেশনা রয়েছে। মোটকথা শিক্ষার্থী কিংবা অভিভাবক কেউ যাতে স্কুলে এসে ঝুঁকিতে না পড়েন। কিন্তু একদিনে একই সাথে সব ক্লাসের শিক্ষার্থীর বেতন আদায় করা হলে স্বাস্থ্য বিধি মানা কতটা সম্ভব, তা ওই স্কুল কর্তৃপক্ষই ভালো বলতে পারবে।
দৃষ্টি আর্কষণ করা হলে বিষয়টি নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকারো মাস্ক মুখে কারো থুতনিতে
পরবর্তী নিবন্ধপাহাড়তলীতে রিকশাচালক খুন