চট্টগ্রাম বন্দরে কার্নেট ডি প্যাসেজ বা শুল্কমুক্ত সুবিধায় আসা কোটি কোটি টাকা মূল্যের বিলাসবহুল গাড়ি নিয়ে বিপাকে পড়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। বিএমডব্লিউ, মার্সিডিজ বেঞ্জ, ল্যান্ড ক্রুজার, জাগুয়ার, মিতসুবিশি, টয়োটা এবং লেক্সাস জিপের মতো গাড়িগুলো বিক্রির জন্য গত ২০১৬ সাল থেকে টানা চার বছর নিলামে তোলা হয়। কিন্তু প্রতিবারই বিডাররা (নিলামে অংশগ্রহণকারী) যে দর হাঁকান তা উপযুক্ত নয়; অর্থাৎ ভিত্তিমূল্যের ৬০ শতাংশও দর ওঠেনি। নিলামের শর্ত পূরণ না হওয়ায় প্রতিবারই নিলাম বাতিল করতে বাধ্য হয় কাস্টমস। এরমধ্যে গত বছরের শেষের দিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কার্নেট সুবিধার আটকে পড়া গাড়িগুলো ই-অকশনের মাধ্যমে নিষ্পত্তির জন্য নির্দেশনা দেয়। কিন্তু সেই সময় ই-অকশন চালু করা সম্ভব না হওয়ায় সেই নির্দেশনা বাস্তবায়িত হয়নি। তবে সম্প্রতি চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ কার্নেট সুবিধার গাড়িগুলোর সুষ্ঠু নিষ্পত্তিতে এনবিআরে চিঠি লিখেছে। সেই চিঠিতে কার্নেট গাড়িগুলো ব্যাপক প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে কিছুটা শর্ত শিথিল করে আবারও নিলামে তোলা কিংবা রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যবহার অথবা সম্পূর্ণ ভেঙে স্ক্র্যাপ হিসেবে বিক্রির প্রস্তাব করা হয় বলে কাস্টমস সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, কার্নেট সুবিধার আওতায় ২৪৩টি গাড়ি আমদানি হয়। এরমধ্যে ১২১টি গাড়ি আমদানিকারকরা খালাস করে নিয়ে যান। এছাড়া বাকি ১২২টি গাড়ির মধ্যে একটি গাড়ি কাস্টমসের নথিতে উল্লেখ থাকলেও কন্টেনার নম্বর না থাকায় গাড়ির অবস্থান নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। তবে নথির তথ্যের ভিত্তিতে শিপিং এজেন্ট এবং বন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে গাড়িটির অবস্থান নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে বলে জানান কাস্টমসের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। নিলাম শাখার কর্মকর্তারা বলছেন, কার্নেট সুবিধার বিলাসবহুল গাড়িগুলো গত ২০১০-২০১১ সাল থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে আটকা পড়ে আছে। ইনভেন্ট্রি করে প্রথম দফায় গত ২০১৬ সালের আগস্টে ৮৫টি, দ্বিতীয়বার ২০১৭ সালের মে মাসে ১১৩টি, তৃতীয়বার ২০১৮ সালের মে মাসে ১১১টি গাড়ি এবং সর্বশেষ গত বছরের ১৬ এপ্রিল চতুর্থবারের মতো ২২টি গাড়ি তোলা হয়। কিন্তু প্রতিবারই দামে অসামঞ্জস্য থাকায় দরদাতাদের কাছে গাড়ি বিক্রি করা সম্ভব হয়নি। এমনকি শেষবারের নিলামে মার্সিডিস বেঞ্জ ব্র্যান্ডের মতো হাইপ্রোফাইল গাড়ির দাম উঠে মাত্র সাড়ে ৪৭ লাখ টাকা এবং লেঙাস জিপের দর উঠেছিল ২ লাখ ৮ হাজার টাকা। অন্যদিকে দীর্ঘ সময় গাড়িগুলো পড়ে থাকার কারণে ইঞ্জিনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশের সেলফ টাইমও ফুরিয়ে আসছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো-এই মুহূর্তে অকশন শেডের জন্য এসব গাড়ি বোঝার মতো। তাই গাড়িগুলো নিষ্পত্তির বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হলে অকশন শেডের জায়গাও খালি হবে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম দৈনিক আজাদীকে বলেন, কার্নেট সুবিধায় আসা বিলাসবহুল গাড়িগুলো নিষ্পত্তির জন্য ইতোমধ্যেই আমরা এনবিআরকে চিঠি লিখেছি। আমরা এনবিআরের নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি। নির্দেশনা পেলে কাজ শুরু করে দিবো।
উল্লেখ্য, বিভিন্ন দেশে কার্নেট সুবিধায় গাড়ি আমদানির সুবিধা দেয়া হয়ে থাকে। তবে নির্দিষ্ট সময় পর আবার সেগুলো ফিরিয়ে নিতে হয়। বাংলাদেশে যারা শুল্কমুক্ত এই সুবিধা ব্যবহার করে গাড়ি এনেছেন তাদের বেশির ভাগই প্রবাসী বাংলাদেশী, যাদের দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে। কার্নেট সুবিধায় তারা গাড়ি এনে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে বিক্রি করে দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাই এসব গাড়ি আমদানির ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হলে একসময় আমদানিকারকরা গাড়িগুলো আর খালাস করে নেননি।