নিবেদিত ও বরেণ্য শিক্ষাবিদ এবং বিশিষ্ট ঐতিহাসিক হিসেবে খ্যাতিমান রমেশচন্দ্র মজুমদার। শিক্ষকতার পাশাপাশি ইতিহাস গবেষণায় সম্পৃক্ত থেকেছেন দীর্ঘকাল। বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস, অসাম্প্রদায়িক সংস্কৃতি ও সমন্বয়ধর্মী ঐতিহ্য প্রতিষ্ঠায় প্রয়াসী ছিলেন সনিষ্ঠ এই গবেষক।
রমেশচন্দ্র মজুমদারের জন্ম ১৮৮৮ সালের ৪ ডিসেম্বর ফরিদপুর জেলার খণ্ডপাড়া গ্রামে। ১৯১১ সালে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে এম.এ ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। পরের বছর ‘কুশান আমল’ বিষয়ে গবেষণা করে পি.আর.এস উপাধি পান। ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজে গবেষণার মাধ্যমে কর্মজীবনের সূচনা। পরবর্তীসময়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতাকালীন প্রাচীন ভারতের ওপর গবেষণা করে পি.এইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৩৭ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিযুক্ত হন। ইতিহাস গবেষণা ও ঐতিহাসিক গ্রন্থ রচনায় রমেশচন্দ্র মজুমদার বিরলদৃষ্ট অবদান রেখে গেছেন। আর এই গবেষণার ফসল বিধৃত হয়ে আছে তাঁর রচিত বিভিন্ন গ্রন্থাবলিতে। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য: ‘প্রাচীন ভারতের ইতিহাস’, চার খণ্ডে রচিত ‘বাংলার ইতিহাস’, ‘আরলি হিস্ট্রি অব বেঙ্গল’, তিন খণ্ডের ‘এনসিয়েন্ট ইন্ডিয়ান কলোনিজ ইন দ্য ফার ইস্ট’, ‘হিস্ট্রি অ্যান্ড কালচার অব ইন্ডিয়ান পিপল’, ‘হিস্ট্রি অব ফ্রিডম মুভমেন্ট’ ইত্যাদি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত ‘বাংলার ইতিহাস’ প্রথম খণ্ড এবং ভারতীয় বিদ্যাভবন সিরিজের ‘ইতিহাস গ্রন্থমালা’ সম্পাদনা করেন তিনি। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার থেকে ‘রবীন্দ্র পুরস্কার’, কলকাতা ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ডি.লিট’, এবং বিশ্বভারতী থেকে দেশিকোত্তম উপাধি অর্জন করেন। ১৯৮০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রমেশচন্দ্র মজুমদার প্রয়াত হন।