আধুনিক কবিতার জগতে বিষ্ণু দে অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি হিসেবে খ্যাতিমান। কৃতী শিক্ষাবিদ, মননশীল প্রবন্ধকার ও শিল্পানুরাগী হিসেবে তিনি বিশিষ্ট। প্রগতি লেখক শিল্পী সংঘ, ভারতীয় গণনাট্য সংঘ, সোভিয়েত সুহৃদ সমিতি প্রভৃতি সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন বিষ্ণু দে। বিষ্ণু দে’র জন্ম ১৯০৯ সালের ১৮ জুলাই কলকাতার পটলডাঙায়। কলকাতার সেন্ট পলস কলেজ থেকে বি.এ সম্মান এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে এম.এ করে যোগ দেন অধ্যাপনায়। মাস্টার্সের ছাত্র থাকাকালীন প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘উর্বশী ও আর্টেমিস’। তবে তাঁর কবিখ্যাতি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে ‘চোরাবালি’ কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের পর। কবিতা, প্রবন্ধ, অনুবাদ – সব মিলিয়ে প্রচুর লিখেছেন তিনি। উল্লেখিত দুটো ছাড়াও তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে কাব্যগ্রন্থ: ‘সাত ভাই চম্পা’, ‘তুমি শুধু পঁচিশে বৈশাখ’, ‘সেই অন্ধকার চাই’, ‘উত্তরে থাকো মৌন’; অনূদিত কবিতা: ‘হে বিদেশী ফুল’, ‘সমুদ্রের মৌন’, ‘এলিয়টের কবিতা’, ‘মাও সেতুঙ, আঠারোটি কবিতা’; প্রবন্ধ: ‘রুচি ও প্রগতি’, ‘সাহিত্যের ভবিষ্যৎ’, ‘সাহিত্যের দেশ-বিদেশ, ‘মাইকেল রবীন্দ্রনাথ ও অন্যান্য জিজ্ঞাসা’ ইত্যাদি। বিষ্ণু দে’র রচনা দেশীয় ঐতিহ্য, ইতিহাসবোধ, স্বদেশ, সংস্কৃতি ও সমাজ ভাবনা আশ্রিত। এরই আলোকে বিশ্ব সাহিত্যের বিচিত্র ঐতিহ্যও নিপুণভাবে প্রতিষ্ঠায় প্রয়াসী ছিলেন তিনি। বিশ্ব মানবিকতার উদ্বোধন তাঁর রচনার প্রধান বৈশিষ্ট্য। মার্কসবাদে অগাধ বিশ্বাস ছাপ ফেলেছে তাঁর রচনায়। সব মিলিয়ে বিষ্ণু দে’র সৃষ্টি আধুনিক বাংলা সাহিত্যে সনিষ্ঠ অবদান চিহ্নিত। ‘ইন দ্য সান অ্যান্ড ইন দ্য রেইন’ নামের রচনা সংকলনের জন্য প্রাপ্ত অর্থ বিষ্ণু দে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টিতে দান করেন। সাহিত্য জগতে কৃতী হিসেবে কবি জ্ঞানপীঠ, সোভিয়েত ল্যান্ড প্রভৃতি পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন। ১৯৮২ সালের ৩ ডিসেম্বর বিষ্ণু দে প্রয়াত হন।