যাবজ্জীবন মানে ৩০ বছরের জেল

রায়ে ‘আমৃত্যু কারাদণ্ড’ বললে বাকি জীবন জেলে : আপিল বিভাগ

| বুধবার , ২ ডিসেম্বর, ২০২০ at ৬:০০ পূর্বাহ্ণ

যাবজ্জীবন কারাদণ্ড মানে ৩০ বছরের জেল। তবে আদালত নির্দিষ্ট করে আমৃত্যু কারাদণ্ড বলে দিলে আসামিকে বাকি জীবন জেলেই কাটাতে হবে বলে সিদ্ধান্ত দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। ‘যাবজ্জীবন কারাদণ্ড মানে আমৃত্যু কারাবাস’ আপিল বিভাগেরই এমন রায় ‘অসামঞ্জস্যপূর্ণ’ দাবি করে আসামিপক্ষ যে পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করেছিল, সে আবেদন নিষ্পত্তি করে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সাত বিচারকের ভার্চুয়াল আপিল বেঞ্চ গতকাল মঙ্গলবার এ রায় দিয়েছে।
আবেদনটি সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে নিষ্পত্তি করা হয়েছে জানিয়ে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন সংক্ষিপ্ত রায়ে বলেন, প্রাথমিক অর্থে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মানে হলো, দণ্ডিত ব্যক্তি তার স্বাভাবিক জীবনের বাকি সময় কারাভোগ করবেন। দণ্ডবিধির ৪৫ এবং ৫৩ ধারার সাথে দণ্ডবিধির ৫৫, ৫৭ ধারা এবং ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৫(ক) মিলিয়ে পড়লে যাবজ্জীবনের সাজা কমে ৩০ বছর কারাদণ্ডের সমতুল্য হয়।
তবে আদালত, ট্রাইব্যুনাল অথবা ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে গঠিত ট্রাইব্যুনাল যখন কোনো আসামিকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়, তিনি কার্যবিধির ৩৫(ক) ধারার (রেয়াতি) সুবিধা পাবেন না। রায় ঘোষণার সময় আসামিপক্ষে আদালতে যুক্ত ছিলেন আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন ও আইনজীবী শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। রায়ের পর অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, যাবজ্জীবন মানে আসামিকে সর্বোচ্চ ৩০ বছর সাজা খাটতে হবে। তবে আদালত যদি আমৃত্যু সাজা দেয়, তাহলে সেটাই গণ্য করতে হবে উল্লেখ করে রিভিউ রায় দিয়েছেন আপিল বিভাগ। যাবজ্জীবনে ৩০ বছর-এ নিয়ম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলায় দণ্ডিত আসামিদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না বলেও স্পষ্ট করেন তিনি।
আসামিপক্ষের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, যাবজ্জীবন মানে কতদিন, আসামিকে কতদিন সাজা ভোগ করতে হবে এ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল। আমরা সে ব্যাপারে রিভিউ পিটিশন করে বলেছিলাম, বর্তমান আইনের বিধান অনুযায়ী যাবজ্জীবনে ৩০ বছর হবে। কারণ ৩০ বছর যদি না হয়, তাহলে ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৫(ক)সহ অন্য আইনের বিধানগুলো এবং জেলকোড, সব বাতিল হয়ে যাবে। তিনি বলেন, রায়ে আমরা মোটামুটি সন্তুষ্ট। তবে আমৃত্যু সাজাটা মানবতাবিরোধী এবং আমৃত্যু সাজা যদি থাকে, তাহলে জেলখানায় ওল্ডহোম করতে হবে। একটি মানুষ যখন অত্যন্ত বৃদ্ধ হয়ে যাবে, তখন তার চলাফেরার শক্তি থাকবে না। তখন তার সেবা-শুশ্রুষার বিষয়টিও আদালতকে বিবেচনা করতে হবে। প্রয়োজনবোধে আবার পুনর্বিবেচনার জন্য দ্বিতীয়বার আবেদন করতে পারি।
প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ গত বছর ১১ জুলাই শুনানি শেষে রিভিউ আবেদনটির রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রেখেছিল। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড মানে আমৃত্যু কারাবাস জানিয়ে আপিল বিভাগ যে রায় দিয়েছিল, তা ‘অসামঞ্জস্যপূর্ণ’ দাবি করে ২০১৭ সালে এই রিভিউ আবেদন করে আসামিপক্ষ।

২০০১ সালে সাভারের ব্যবসায়ী জামান হত্যা মামলায় দুই আসামির আপিল শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা নেতৃত্বাধীন চার বিচারকের আপিল বেঞ্চ ওই রায় দেয়। সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশিত হয় ২০১৭ সালের ২৪ এপ্রিল। সেখানে বলা হয়, দণ্ডবিধির ৫৩ ধারা ও ৪৫ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হবে আমৃত্যু কারাবাস। এর ফলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত সবাইকে আমৃত্যু কারাগারে থাকতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালনের নির্দেশ
পরবর্তী নিবন্ধবিজয় দিবসের অনুষ্ঠান এবার উন্মুক্ত স্থানে নয় : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী