চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) বিভিন্ন বিভাগের সম্মান শেষ বর্ষের স্থগিত পরীক্ষাসমূহ আগামী ৩ ডিসেম্বরের মধ্যে গ্রহণের দাবি জানিয়েছে সম্মিলিত শিক্ষার্থী সংসদ, চবি। তাদের অভিযোগ পরীক্ষা না নেয়ার জন্য প্রশাসন বিভিন্নভাবে ‘নয়-ছয়’ বুঝ দিচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
এদিকে সম্মান পরীক্ষা শেষ না হওয়ায় বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় অংশ নিতে পারছেন না বলে জানান তারা।
এসময় আগামী ৩ ডিসেম্বরের মধ্যে পরীক্ষা গ্রহণের কার্যকরী পদক্ষেপ না নিলে ৬ ডিসেম্বর থেকে আমরণ অনশনের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা গ্রহণের দাবিও জানান তারা।
আজ মঙ্গলবার (১ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে এগারোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্ট সংলগ্ন একটি দোকানের সামনে ফেসবুক লাইভে এসে এসব দাবি জানান সংগঠনটির মুখপাত্র ও চবি আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফোরকানুল আলম।
এসময় উপস্থিত ছিলেন সম্মিলিত শিক্ষার্থী সংসদের সদস্য ও বিভিন্ন বিভাগের বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা। পরে গণমাধ্যমে প্রকাশের জন্য প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠান তারা।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত দুই মাস ধরে একাধিকবার মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রদান ও অবস্থান কর্মসূচির পর গত ১৫ নভেম্বর একাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠকে স্থগিত পরীক্ষা গ্রহণের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় কিন্তু এ সিদ্ধান্তের ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও কোনো সাড়া না পেয়ে ২৫ নভেম্বর আবার প্রক্টর অফিসের মাধ্যমে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন তারা। এরপর ২৯ নভেম্বর গঠিত স্থগিত পরীক্ষা বিষয়ক কমিটির প্রথম সভায় লিখিত পরীক্ষা না নিয়ে প্রথমে মৌখিক ও ব্যবহারিক পরীক্ষাগুলো নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এরপর পরিস্থিতি বুঝে পর্যায়ক্রমে স্থগিতকৃত পরীক্ষাসমূহ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানানো হয়।
কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তে অসন্তোষ এবং ‘ছেলে ভোলানো খেলা’ জানিয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, শুধু মৌখিক আর ব্যবহারিক নয়, স্বাস্থ্যবিধি মেনে লিখিত পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে অবকাঠামোগত কোনো সমস্যা নেই। সুতরাং স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নিতে আপত্তি কোথায়! পরীক্ষা না হওয়ায় নানাবিধ সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা বলেন, স্নাতক সম্মান শেষ না হওয়ায় আমরা বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষা তো দূরের কথা আবেদনও করতে পারছি না।
পরীক্ষার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ না নিলে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আগামী ৩ ডিসেম্বরের মধ্যে স্থগিতকৃত পরীক্ষাসমূহ নেয়ার ব্যাপারে যদি তারিখ ঘোষণা পূর্বক সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা না আসে তাহলে আগামী ৬ ডিসেম্বর থেকে আমরা আমরণ অনশনে যাব।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর এস এম মনিরুল হাসান ও প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) ড. আতিকুর রহমান বলেন, “পরীক্ষার ব্যাপারে আমরা ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সকল ডিন এ ব্যাপারে একমত হয়েছেন। খুব শীঘ্রই আমরা পরীক্ষা শুরু করব। তাহলে শিক্ষার্থীরা কেন অনশনে যাবে!”
তারা বলেন, “সরকার ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করেছে। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ও কিন্তু পরীক্ষা নিচ্ছে না। আবার দেশে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ হচ্ছে। তারপরও আমরা শিক্ষার্থীদের স্বার্থ বিবেচনা করে বৈঠক করে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বর্তমান পরিস্থিতিতে কীভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নেয়া যায় সেই বিষয়ে আমাদের চিন্তা করার সময় দিতে হবে। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে আসার পর কোনো অঘটন ঘটলে দায়ী কে থাকবে? শিক্ষার্থীরা আবেগ দিয়ে দেখলেতো হবে না। পরিস্থিতি বিবেচনা করতে হবে। আমরা তাদের কথা দিচ্ছি পরীক্ষা খুব শীঘ্রই গ্রহণ করা হবে। ইতোমধ্যে বৈঠক করে আমরা সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি।”