স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম চট্টগ্রামের উন্নয়ন যেন সমন্বয়হীনতার কারণে বাধাগ্রস্ত না হয়, সেদিকে সজাগ থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। চট্টগ্রাম চেম্বার আয়োজিত ‘চট্টগ্রামের উন্নয়ন, শিল্পায়ন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শনিবার তিনি এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, উন্নয়নে চট্টগ্রাম পিছিয়ে নেই। তবে আমার মনে একটি কষ্ট আছে। সেটা হলো, আপনারা (সেবা সংস্থাগুলো) একসাথে কাজ করেন না। চট্টগ্রামের উন্নয়ন ত্বরান্বিত ও অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, ওয়াসা, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং চট্টগ্রাম চেম্বার অ্যান্ড কমার্সসহ সর্বস্তরের মানুষকে সম্পৃক্ত করার কোনো বিকল্প নেই। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে সমন্বয় করে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করে যেতে হবে। তিনি বলেন, চট্টগ্রামের উন্নয়নে যে সকল প্রকল্প নেওয়া হয়েছে এবং নতুন যেসব প্রকল্প নেওয়া হবে সেগুলো অবশ্যই সমন্বয় করে নিতে হবে। সমন্বয়হীনতার কারণে যেন একই কাজ বিভিন্ন প্রকল্পের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত না হয় সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। চট্টগ্রামের উন্নয়ন মানে সারা দেশের উন্নয়ন। চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হচ্ছে উল্লেখ করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে খুবই আন্তরিক। কিভাবে চট্টগ্রামের আরও উন্নয়ন করা যায়, তা নিয়ে সকলের কাজ করা উচিত। চট্টগ্রামে বে টার্মিনাল প্রস্তুত করার পরিকল্পনা রয়েছে। তৈরি করা হয়েছে আউটার রিং রোড। চসিক প্রশাসক বেশ কিছু ভালো কাজ করেছেন, যা আমাদের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় চট্টগ্রামের উন্নয়ন করা সম্ভব।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের রাজস্ব আয়ের ৮০ শতাংশ হয় চট্টগ্রাম থেকে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ৭০ শতাংশ হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। সুতরাং চট্টগ্রামের উন্নয়ন হলেই উন্নতি হবে বাংলাদেশের। তাই চট্টগ্রামের উন্নয়ন নিয়ে কোনো আপস থাকতে পারে না। চট্টগ্রাম বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কেন্দ্র। বিশ্ব পরিস্থিতিতে মূল্যায়ন করতে গেলে চট্টগ্রামের গুরুত্ব কতটুকু তা আমরা বুঝতে পারি। অর্থনীতির ক্ষেত্রে একটি সমুদ্রবন্দরের গুরুত্ব উপলব্ধি করি। প্রকৃতি থেকে আমরা এটা পেয়েছি। এখন সেটাকে যথাযথভাবে এগিয়ে নিতে হবে। এটাকে যদি সঠিকভাবে ব্যবহার করতে না পারি, তাহলে এর চেয়ে বড় দুর্ভাগ্য আর কিছুই হতে পারে না।
প্রধানমন্ত্রী একটি উন্নত দেশের স্বপ্ন দেখেন। এই স্বপ্ন পূরণের জন্য পথনকশা তৈরি করেছেন। এই নকশার মধ্যে অনেকগুলো বিষয় এসেছে। তাই শুধুমাত্র ঢাকাকেন্দ্রিক উন্নয়ন সীমাবদ্ধ রাখা হবে না। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, সেই রূপসা থেকে পাথুরিয়া-যেখানেই হোক না কেন, মানুষকে তার নিজের অধিকার দেয়া দরকার।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিদ্যমান উন্নয়ন প্রকল্পের বাইরে চট্টগ্রামকে ঘিরে আরও অনেক বেশি উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের সুযোগ আছে। বিশেষ করে দক্ষিণ চট্টগ্রামে রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা। এই সামগ্রিক উন্নয়নকে আরও সুদৃঢ় করতে চট্টগ্রামে অন্তত পাঁচটি ব্যাংকের হেডকোয়ার্টার স্থাপন করা প্রয়োজন। বাণিজ্যিক রাজধানীর অন্যতম শর্ত পূরণ মাসে সম্ভব না হলেও বছরে অন্তত একটি বা দুইটি কেবিনেট মিটিং চট্টগ্রামে আয়োজন করা দরকার।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, ওয়াসা, বিদ্যুৎ, পর্যটন কর্তৃপক্ষ, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়, রেল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তর আলাদা আলাদাভাবে কয়েক হাজার কোটি টাকার অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম মহানগরের দৃশ্যমান উড়ালসেতুর বাস্তবায়ন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এতে সমালোচনা আছে, কিন্তু উপযোগিতার কথা অস্বীকার করা যাবে না। যে যাই বলুক- উড়ালসেতুর উপকার কিন্তু পাচ্ছেন এখন চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষ। সবচেয়ে বড় কথাটি হলো উন্নয়নে সমন্বয়।
এ বিষয়ে আমরা একাধিকবার লেখালেখি করেছি। সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া সেবা সংস্থাগুলোর বিচ্ছিন্ন তৎপরতা সুফল বয়ে আনবে না। তাছাড়া, একটা সংস্থার সঙ্গে যদি অন্য সংস্থার সমন্বয় না থাকে, তাহলে উন্নয়ন বাধাপ্রাপ্ত হবে। একটি সংস্থা সড়ক সংস্কার করবে, অন্যটা এসে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করে দেবে। এ ক্ষেত্রে সরকারকে ঠিক করতে হবে, কিভাবে সমন্বয় সাধন সম্ভব! বিভিন্ন সংস্থার নানামুখী কাজের মধ্যে সমন্বয়ের দায়িত্ব পালনের জন্য একটি কমিটিও থাকা দরকার।