ফের তলানিতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি

| রবিবার , ২৯ নভেম্বর, ২০২০ at ১১:০৫ পূর্বাহ্ণ

কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে প্রণোদনায় ভর করে বাড়তে থাকা বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি ফের আবার তলানিতে নেমে এসেছে। কমতে কমতে গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে দেশের নিয়োগ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান নিয়ামক বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি আট দশমিক ৬১ শতাংশে নেমে এসেছিল। প্রণোদনা ঋণে ভর করে এই প্রবৃদ্ধি বাড়তে শুরু করেছিল। ব্যাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল নয় দশমিক ২০ শতাংশ। অগাস্টে তা বেড়ে নয় দশমিক ৩৬ শতাংশে উঠে। সেপ্টেম্বরে তা আরও বেড়ে নয় দশমিক ৪৮ শতাংশ হয়। অক্টোবরে এই প্রবৃদ্ধি এক শতাংশ পয়েন্ট কমে আবার আট দশমিক ৬১ শতাংশে নেমে এসেছে। অর্থনীতির গবেষক ও ব্যাংকাররা বলেছেন, কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলায় সরকার সোয়া লাখ কোটির টাকার যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল, সেগুলোর বাস্তবায়নে গতি আসায় বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বেড়েছিল। এখন প্রণোদনা ঋণ তেমন বিতরণ না হওয়ায় এই প্রবৃদ্ধি ফের সেই তলানিতে নেমে এসেছে। খবর বিডিনিউজের।
বাংলাদেশ ব্যাংক বৃহস্পতিবার যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের চতুর্থ মাস অক্টোবর শেষে বেসরকারি খাতে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ১৪ হাজার ৩২২ কোটি ৪০ লাখ টাকা, যা গত বছরের অক্টোবরের চেয়ে আট দশমিক ৬১ শতাংশ বেশি। ২০১৯ সালের অক্টোবর শেষে বেসরকারি খাতে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ১০ লাখ ২৫ হাজার ৯৫৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা। সরকারি খাতেও ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি কমেছে। অক্টোবর শেষে সরকারি খাতে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৯১ হাজার ৬০৭ কোটি টাকা, যা গত বছরের অক্টোবরের চেয়ে ২৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেশি। সেপ্টেম্বরে এই প্রবৃদ্ধি ছিল ৩৫ দশমিক ৩১ শতাংশ। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে সরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি ছিল ৫৯ দশমিক ৯২ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, টানা প্রায় ১০ বছর বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি দুই অঙ্ক বা ১০ শতাংশের উপরে ছিল। তবে ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরের পর গত বছরের নভেম্বর মাসে প্রথমবারের মতো তা নয় দশমিক ৮৭ শতাংশে নেমে আসে। ধারাবাহিকভাবে এই প্রবৃদ্ধি কমতে কমতে গত এপ্রিলে নয় শতাংশের নিচে নেমে আসে। ওই মাসে বেসরকারি ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি আট দশমিক ৮২ শতাংশে নেমে যায়। গত জুনে তা আরও কমে আট দশমিক ৬১ শতাংশে নেমে আসে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলায় সরকার প্রায় সোয়া লাখ কোটির টাকার যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল, সেগুলোর বাস্তবায়নে গতি আসায় গত কয়েক মাস বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বেড়েছিল। কিন্তু অক্টোবরে প্রণোদনার ঋণ তেমন বিতরণ হয়নি। বড় উদ্যোক্তাদের জন্য ৩৩ হাজার কোটি টাকার যে প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়েছিল, তার প্রায় পুরোটা সেপ্টেম্বরের মধ্যেই শেষ হয়ে গেছে। ছোটদের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার তহবিলের ঋণ খুব একটা বিতরণ করেনি ব্যাংকগুলো। অন্য প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণও খুব একটা বিতরণ হয়নি। এছাড়া এই কয় মাসে প্রণোদনার বাইরে অন্য কোনো ঋণ বিতরণ হয়নি। এ সব কারণেই অক্টোবরে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ আবার কমে এসেছে বলে মনে করেন আহসান মনসুর। তার ভাষায়, ‘বিষয়টি উদ্বেগের বলে আমি মনে করি। মহামারীর ধাক্কা আস্তে আস্তে কাটতে শুরু করেছিল। রেমিটেন্সের পাশাপাশি রপ্তানি আয় বাড়তে শুরু করেছিল। আমদানিও বাড়ছিল। কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারীর প্রাদুর্ভাব আবার বাড়তে থাকায় সব হিসাব-নিকাশ পাল্টে যাচ্ছে। ফের সংকট আসছে মনে হচ্ছে।’ ২০০৭-০৮ মেয়াদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘বিনিয়োগ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান নিয়ামক হচ্ছে বেসরকারি ঋণ। সেই ঋণ যদি না বাড়ে তাহলে দেশে বিনিয়োগ বাড়বে না। আর বিনিয়োগ না বাড়লে কর্মসংস্থান হবে না। অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার হবে না। কাঙ্ক্ষিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে না। বেশ কিছুদিন ধরে দেশে বিনিয়োগে স্থবিরতা চলছে। করোনাভাইরাসের কারণে তা আরও নাজুক হয়েছিল। ভালো খবর ছিল যে, অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল। কিন্তু সেটা আবার হোঁচট খেলো মনে হচ্ছে। বেসরকারি ঋণপ্রবাহে যে গতি এসেছিল, সেটাও ধাক্কা খেয়েছে। সবকিছুই অনিশ্চিত এখন। কি যে হবে-নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না কিছুই।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধবন্ধ হয়ে যাচ্ছে উইন্ডোস সেভেনে ক্রোম ব্রাউজিং সেবা
পরবর্তী নিবন্ধকদমতলীতে হোসেনুজ্জামান চেয়ারম্যান আন্তঃ ফুটবল টুর্নামেন্ট সম্পন্ন