আবারো ঊর্ধ্বমুখি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। সংক্রমণ থেকে বাঁচতে ঘন ঘন সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোঁয়া ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার পাশাপাশি মুখে মাস্ক পরার উপর গুরুত্ব দিয়ে আসছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে সাধারণ মানুষ এসব স্বাস্থ্যবিধি মানতে তেমন একটা আগ্রহী নয়। যার কারণে ৩ থেকে ৬ ফুটের সামাজিক/শারীরিক দূরত্ব এখন অনেকটা কিতাবের বিষয়। রাস্তাঘাটে, গণপরিবহনে কিংবা হাট-বাজারের চিত্র যেন আগের মতোই স্বাভাবিক। সাধারণের চলাফেরায় দেশে করোনার অস্তিত্ব বলতে কিছু আছে, এমনটাও বুঝার উপায় নেই। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার এমন হাল দেখে অন্তত মাস্ক পরা নিশ্চিতে জোর দিয়েছেন চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে হলে সঠিক নিয়মে মুখে মাস্ক পরানো নিশ্চিত করাটা জরুরি। কিন্তু সাধারণ মানুষকে মাস্ক পরানোই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। এমন পরিস্থিতিতে দেশব্যাপী চালানো হচ্ছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ থেকে শুরু করে বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিরাও রাস্তায় নামছেন। জনসাধারণকে মাস্ক পরায় সচেতন করছেন তারা। তবে এসময় অনেককেই নিজ হাতে সাধারণ মানুষকে মাস্ক পরিয়ে দিতে দেখা যায়। গণমাধ্যমগুলোতেও এমন ছবি প্রতিদিন ছাপাতে দেখা যায়। তবে এতেও সংক্রমণের ঝুঁকির কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, দূরত্ব বজায় রেখে মাস্ক হাতে সরবরাহ করা যায়। অন্যকে পরিয়ে দিতে হবে, এটি বিজ্ঞানসম্মত নয়। কঙবাজার মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ও মেডিসিনের অধ্যাপক ডা. অনুপম বড়ুয়ার মতে, অন্যের মুখে মাস্ক পরিয়ে দিতে গেলে শারীরিক দূরত্বের বিষয়টি বজায় থাকে না। কন্টাক্টের বিষয় আছে। যা অবশ্যই সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরি করে। একই কথা বলেছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সুযত পাল। তিনি বলেন, সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে অন্তত ৩ থেকে ৬ ফুট শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা জরুরি। মাস্ক পরালেও এই দূরত্ব বজায় রেখে পরাতে হবে। কিন্তু এই দূরত্ব বজায় রেখে মাস্ক পরানো সম্ভব বলে মনে হয় না। তাই একজন যদি অন্যজনকে মাস্ক পরিয়ে দেয়, সেক্ষেত্রে অবশ্যই সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে।
যদিও যিনি মাস্ক পরিয়ে দিচ্ছেন, তিনি নিজে মাস্ক পরা থাকলে ঝুঁকি অনেকটা কম বলে মনে করেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। অবশ্য এ ধরনের কর্মসূচি যারা পালন করছেন, তাদেরও সতর্ক থাকার পরামর্শ সিভিল সার্জনের। তবে সিভিল সার্জনের এ বক্তব্যের সাথে ভিন্নমত পোষণ করেছেন চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, রাস্তায় ঘুরে ঘুরে অনেককেই অন্যের মুখে মাস্ক পরাতে দেখা যায়। যেহেতু একজন একজন করে অনেকের মুখে মাস্ক পরিয়ে দিচ্ছেন, নিজে মাস্ক পরা থাকলেও তিনি কিন্তু ঘুরে ঘুরে অনেকের কন্টাক্টে (সংস্পর্শে) আসছেন। এতে করে তার নিজেরও সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। আর পরবর্তীতে অন্যকে সংক্রমিত করার ঝুঁকি তো থাকছেই। ঝুঁকির কথা চিন্তা করে দূরত্ব বজায় রেখে মাস্ক ডিস্ট্রিবিউট করার পরামর্শ দিয়েছেন মেডিসিনের অধ্যাপক ডা. অনুপম বড়ুয়া ও অধ্যাপক ডা. সুযত পাল।