হেফাজতে ইসলামের আমীর জুনাইদ বাবুনগরী বলেছেন, “আল্লাহর কসম, কেউ যদি আমার আব্বার ভাস্কর্য বসায়, আমি সর্বপ্রথম সেই ভাস্কর্য টেনে হিঁচড়ে ফেলে দেব। যেকোনো দল ভাস্কর্য বসাবে, আমার আব্বার ভাস্কর্যও যদি স্থাপন করা হয়, সেটা শরিয়ত সম্মত হবে না। টেনে হিঁচড়ে ফেলে দেব।”
আজ শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) রাতে হাটহাজারীর পার্বতী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আল আমিন সংস্থা আয়োজিত তিন দিনের তাফসীরুল কুরআন মাহফিলের সমাপনী দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিডিনিউজ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যের বিরোধিতাকারী হেফাজত ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের এই মাহফিলে অন্যতম প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখার কথা ছিল কিন্তু দু’দিন ধরে যুবলীগ-ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগসহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিরোধের মুখে মামুনুল হক চট্টগ্রামে আসেননি।
তবে ঐ মাহফিল থেকেই ভাস্কর্যবিরোধী বক্তব্য দেন হেফাজতের আমীর জুনাইদ বাবুনগরী।
তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মদিনার সনদে দেশ চলবে। প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। মদিনার সনদে যদি দেশ চলে, ইসলামবিরোধী কোনো কাজ হতে পারবে না। ইনশাল্লাহ প্রধানমন্ত্রী (ভাস্কর্য বসাতে) দেবে না, দেবে না। মদিনার সনদে যদি দেশ চলে, কোনো ভাস্কর্য থাকতে পারে না। মদিনায় কি কোনো ভাস্কর্য আছে?”
বাবুনগরী বলেন, “ভাস্কর্য-এটা শরিয়তসম্মত নয়। কোনো পার্টি বা নেতার নাম বলছি না, যার ভাস্কর্য হোক না কেন।”
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বাবুনগরী বলেন, “বঙ্গবন্ধুকে অন্তর থেকে ভালোবাসি। আপনার আব্বা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, আমরা উনাকে শ্রদ্ধা করি। এই বঙ্গবন্ধুকে কারা মেরেছে? কোনো মাদ্রাসার ছাত্র? কোনো আলেম ওলামা? না, না। এই বঙ্গবন্ধুকে মেরে ফেলেছে বঙ্গবন্ধুর মানুষরা। আপনাকে সতর্ক করছি। আপনার ঘাড়ে যেসব নাস্তিকরা বসে আছে, তারাই আপনার ক্ষতি করবে, তারাই আপনাকে মেরে ফেলবে। আমরা আপনার দুশমন নই। আমরা দেশের শান্তি শৃঙ্খলা চাই।”
গত ১৩ নভেম্বর ঢাকার গেণ্ডারিয়ার ধূপখোলার মাঠে ‘তৌহিদী জনতা ঐক্যপরিষদের’ ব্যানারে এক সমাবেশ থেকে মুজিববর্ষ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করা হয়।
একই দিনে রাজধানীর বিএমএ অডিটরিয়ামে বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিস ঢাকা মহানগরীর উদ্যোগে শানে রিসালাত কনফারেন্সে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ও বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা মামুনুল হকও প্রকাশ্যে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করেন।
ঐ বক্তব্যের পর সরকার বা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তেমন কোনো জোরালো প্রতিবাদ দেখা না যাওয়ায় জোটসঙ্গীরাই এর সমালোচনা করেন।
জাসদের এক বিবৃতিতে সেই সময় বলা হয়, “সুপ্রিম কোর্টের সামনে স্থাপিত ভাস্কর্য স্থানান্তরিত করার মধ্য দিয়ে ধর্ম ব্যবসায়ীদের ‘আশকারা’ দেওয়ার ফলেই আজ এই অপশক্তি বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করার দুঃসাহস দেখাতে পারছে।”
জাতির পিতার ভাস্কর্য অপসারণের দাবি যারা তুলেছে, সেই মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ না নিলে দেশ ও জাতির ‘সমূহ বিপর্যয়ের’ আশঙ্কা প্রকাশ করা হয় একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির পক্ষ থেকে।
এরপর ১৫ নভেম্বর চট্টগ্রামে এক অনুষ্ঠানে শিক্ষা উপমন্ত্রী ও চট্টগ্রাম-৯ আসনের সাংসদ মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, “বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতাকারীরা ক্ষমা না চাইলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
‘মৌলবাদী গোষ্ঠীকে’ বেশি বাড়াবাড়ি না করতে হুঁশিয়ার করে নওফেল বলেছিলেন, “বেশি বাড়াবাড়ি করলে ঘাড় মটকাতে সময় লাগবে না।”
আজ শুক্রবার রাতে হাটহাজারীর মাহফিল থেকে সরকারের কাছে চার দফা দাবি তুলে ধরেন হেফাজত আমির জুনাইদ বাবুনগরী।
বাংলাদেশে ইসকনের কার্যক্রম বন্ধ করা, কাদিয়ানীদের সরকারিভাবে ‘অমুসলিম’ ঘোষণা করা, দূতাবাস বন্ধ করে ফ্রান্সের দূতকে বহিষ্কার করা এবং ফ্রান্সের বিরুদ্ধে সংসদে নিন্দা প্রস্তাব পাস করার দাবি রয়েছে সেখানে।
বাবুনগরী বলেন, “দেশ চলবে মদিনার সনদে। এই কথায় আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে একমত। নব্বই ভাগ মুসলমানের দেশ মদিনার সনদে চলবে। রাশিয়া, আমেরিকা, ভারত, চীনের সনদে চলতে পারবে না। আওয়ামী লীগ বিএনপির লড়াই নাই। ঈদের নামাজের কাতারে তারা পাশাপাশি দাঁড়ায়। আওয়ামী লীগ বিএনপির মাঝখানে আত্মীয়তার সম্পর্ক আছে। বর্তমান বাংলাদেশ আর সারাবিশ্বে কঠিন লড়াই আস্তিক আর নাস্তিকের।”
২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকার মতিঝিলে দিনভর তাণ্ডব চালানো হেফাজতে ইসলামকে ‘সর্ম্পূণ অরাজনৈতিক সংগঠন’ হিসেবে দাবি করে সংগঠনটির শীর্ষ নেতা বলেন, “এখনো হক কথা বললে গ্রেপ্তার করে কি না, সমস্যা নাই গ্রেপ্তার করুক। রিমান্ডে নিক, ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিক, আমাদের হক কথা বলতে হবে।”
হাটহাজারী মাদ্রাসার অদূরে তিন দিনব্যাপী ওই মাহফিলের আয়োজক ‘আল আমিন সংস্থা’ নামের একটি সংগঠন হলেও মূলত হেফাজত সংশ্লিষ্টরাই এই সংগঠনের সাথে জড়িত।
২০০৫ সাল থেকে হাটহাজারীতে সংস্থাটি প্রতি শীতকালে মাহফিল আয়োজন করে বলে অনুষ্ঠান থেকে দাবি করা হয়।