ফুটবল বিশ্ব হঠাৎ করেই নির্বাক হয়ে গেল গত বুধবার রাতে। ফুটবল যেন হারিয়ে ফেলল তার রং। আর বিশ্বময় কোটি কোটি ভক্ত হারিয়ে ফেল তাদের প্রিয় ফুটবল ঈশ্বরকে। দিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা। ফুটবলের এমন এক শিল্পি, যিনি হেসেছেনতো ফুটবল বিশ্ব হেসেছে। আর কেঁদেছেনতো সারা বিশ্বে যেন অশ্রুর বন্যা। অন্তত ১৯৮৬, ১৯৯০ এবং ১৯৯৪ তারই সাক্ষ্য বহন করে। ৮৬ সালে তার হাসিতে যেন আকাশ ছোঁয়া খুশির ফোয়ারা। আর ৯০ তে পুরো বিশ্ব যেন বিবর্ণ। রোমের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে সেদিন ফাইনালের শেষ বাঁশি বাজার সাথে সাথে বিশ্বে কত ভক্তের জীবনের শেষ বাঁশি বেজে গেছে তার কোন হিসেব নেই। আর ৯৪ তে নাইজেরিয়োর বিপক্ষে ম্যাচটি যে ফুটবল ঈশ্বরের ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ হয়ে যাবে কে জানতো। ড্রাগসের ছোবলে ফুটবলের সাথে বিচ্ছেদ ঘটে গেল ম্যারাডোনার। আবার বিশ্বজুড়ে কান্নার রোল। এরপর মাঠে দিয়েগো ম্যারাডোনার বাঁ পায়ের সে জাদু আর নেই। কিন্তু ফুটবল ঈশ্বরের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, আবেগ, অনুভুতি কোন কিছুতে ভাটা পড়েনি এতটুকুও। যেন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছিল । মাঠ ছাড়ার পর অনেক তারকা ফুটবলার হারিয়ে গেছে একেবারে তেমন নজির একেবারে ভুরি ভুরি। কিন্তু দিয়েগো ম্যারাডোনা যতদিন বেঁচে ছিলেন তার সাথে ছিল কোটি কোটি ভক্তের শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ।
৬০ বছর বয়সে পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে গেলেন ফুটবলের ঈশ্বর। সাথে সাথে পৃথিবী জুড়ে যেন স্বজন হারানোর বিলাপ। তার শহর, তার দেশ কিংবা প্রতিবেশী দেশের মানুষ যেমন কাঁদছে তেমনি কাঁদছে সাত সমুদ্র তের নদীর এপার ওপারে যারা আছে তারাও। হাজার হাজার মাইল দুরে থেকে এতটুকু ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হননি দিয়েগো ম্যারাডোনা। তবে ভাগ্যবান আজেীন্টনার মানুষ। তারা অন্তত কাছে গিয়ে প্রিয় তারকাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে পারছেন। কিংবদন্তির মরদেহ সর্বস্তরের মানুষের জন্য আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্সের গরভর্মেন্ট হাউজের সামনে রাখা হয়েছে। সেখানে হাজারো মানুষ ‘ফুটবল ঈশ্বরের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন। ম্যারাডোনার কফিন আর্জেন্টিনার জাতীয় পতাকায় মোড়ানো হয়েছে। কফিনের ওপর বোকা জুনিয়র্সের ১০ নম্বর জার্সি রাখা হয়েছে।
ম্যারাডোনার কফিনের সামনে দাঁড়িয়ে এক ভক্তকে চিৎকার করতে শোনা গেছে, ‘টি আমো অর্থাৎ আমি তোমাকে ভালোবাসি ডিয়েগো।’ কেবল এই এক ভক্তই নয়, সেখানে শ্রদ্ধা জানাতে আসা হাজারো ভক্তের মুখে এই একই চিৎকার, ‘তোমাকে ভালোবাসি ডিয়েগো।’ আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজ ইতোমধ্যেই দেশটিতে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন, ‘তুমি আমাদের বিশ্বের সর্বোচ্চ চূড়ায় নিয়ে গিয়েছো। তুমি আমাদের আনন্দ দিয়েছো। তুমি সবার থেকে সেরা। ধন্যবাদ আমাদের দেশে জন্মগ্রহণ করার জন্য। তোমাকে আমরা আজীবন মনে রাখবো।’
ম্যারাডোনাকে একনজর দেখার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল আর্জেন্টাইন সময় রাত ১টা ৩০ মিনিটে। প্রথমেই ম্যারাডোনাকে দেখে গেছেন প্রথম স্ত্রী ক্লদিয়া ভিয়াফোন ও দুই কন্যা দালমা ও জিয়ানিন্না। এরপর ১৯৮৬ বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্যরা এসে শ্রদ্ধা জানিয়ে গেছেন। সকাল ৬টায় বিদায় জানাতে কাসা রোসাদার দরজা সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। ধারণা করা হচ্ছে প্রায় ১০ লাখেরও বেশি মানুষ ম্যারাডোনার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বুয়েন্স আয়ার্সে উপস্থিত হয়েছেন। ইতোমধ্যেই কয়েক লাখ মানুষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন এই কিংবদন্তির প্রতি।
যেতে নাহি দিব হায়, তবু যেতে দিতে হয়।’ কিংবদন্তি দিয়েগো ম্যারাডোনাকে বিদায় দিতে কিছুতেই মন মানছে না ভক্ত-সমর্থকদের। তবু নিয়তির অমোঘ বিধান মেনে বিদায় বলতেই হবে। ভক্তদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে শেষবারের মতো এই ফুটবল জাদুকরকে যাতে ভক্তরা দেখতে পারেন, সেজন্য আর্জেন্টিনার বুয়েন্স আয়ার্সের প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেস কাসা রোসাদায় তিনদিনের জন্য রাখা হবে ম্যারাডোনার মরদেহ।