দেবকীকুমার বসু ছিলেন খ্যাতিমান চিত্রনাট্যকার ও পরিচালক। চলচ্চিত্রের জন্য কাহিনি রচনা এবং তা রূপায়নে আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ ঘটিয়ে তিনি এই অঙ্গণে বিশিষ্ট জন হয়ে ওঠেন। আজ তাঁর ১২০তম জন্মবার্ষিকী।
দেবকীকুমার বসুর জন্ম ১৮৯৮ সালের ২৫শে নভেম্বর বর্ধমানে। ছাত্রাবস্থায় তিনি বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব শিশির কুমারের সাহচর্য লাভ করেন। এ সময় ভারতে চলছিল ব্রিটিশবিরোধী অসহযোগ আন্দোলন। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ দেবকীকুমার গান্ধীজীর ডাকে সাড়া দিয়ে জাতীয় আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। বেশ কিছুকাল ‘শক্তি’ নামে একটি দেশাত্মবোধক সাপ্তাহিক সম্পাদনা করেছেন। চিত্রজগতে তাঁর প্রবেশ বিখ্যাত চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব ধীরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের হাত ধরে। ‘ফ্রেম অ্যান্ড ফ্লেশ’ ছবির মাধ্যমে দেবকী আত্মপ্রকাশ করেন চিত্রনাট্যকার হিসেবে। নির্বাক ছবি ‘অপরাধী’র কাহিনিকার, চিত্রনাট্যকার এবং পরিচালক ছিলেন তিনি। এই ছবিতেই অন্তর্দৃশ্য গ্রহণে প্রথম কৃত্রিম আলোর ব্যবহার করা হয়। তবে বিপুল খ্যাতি আসে নিউ থিয়েটার্স থেকে ‘চণ্ডিদাস’ রূপায়ণের পর। ১৯৩২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই ছবিতে দেবকীকুমার নানা ধরনের আধুনিক কলাকৌশল প্রয়োগ করেন।
১৯৩৫ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া ফিল্ম কোম্পানিতে যোগদানের সুযোগ আসে তাঁর। এখানে নির্মাণ করেন হিন্দি ছবি ‘সীতা’ এবং দ্বৈভাষিক ছবি ‘সোনার সংসার’। সে বছরই সীতা ভেনিসে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বিশেষ স্বীকৃতি অর্জন করে। দেবকীকুমার মুম্বাইতে নিজ গ্রামে একটি চলচ্চিত্র প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে এবং স্বাধীনভাবে তিনি যেসব চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন তার মধ্যে পুরাণ ভকত, মীরাবাঈ, নর্তকি, সাপুড়ে, মেঘদূত, কবি, রত্নদ্বীপ, পথিক, চিরকুমার সভা সহ আরো অনেক ছবি রয়েছে। রবীন্দ্রনাথের চারটি কবিতা অবলম্বনে ভারত সরকারের প্রযোজনায় তিনি নির্মাণ করেন ‘অর্ঘ্য’। জীবদ্দশায় এটিই তাঁর শেষ ছবি। মঞ্চ নাটকের উপযোগী কাহিনিকে তিনিই প্রথম চলচ্চিত্রে রূপ দেন। ১৯৭১ সালের ১৭ নভেম্বর এই চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বের জীবনাবসান ঘটে।