করোনার দ্বিতীয় ঢেউ বৃদ্ধি পাওয়ায় রোগীর ধকল সামলাতে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে বেড বাড়ানো হচ্ছে। আজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নতুন ভবনে ত্রিশ বেডের নতুন করোনা ইউনিট চালু করছে। গত দুদিন ধরে এই হাসপাতালে একজন কোভিড রোগীও ভর্তি করার সুযোগ ছিল না। বেশ কয়েকজন রোগী ফেরত দেয়ার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বেড বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে।
সূত্র জানায়, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হানার সাথে সাথে বাড়তে শুরু করেছে রোগী। প্রতিদিনই বিপুল সংখ্যক মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। এদের বেশির ভাগই নিজের ঘরে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হচ্ছেন। আবার বিভিন্ন ধরনের শারীরিক জটিলতা রয়েছে এমন বহু রোগী সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। চট্টগ্রামে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে প্রায় ১২শ রোগী ভর্তির সুযোগ রয়েছে। আইসিইউ সুবিধা রয়েছে আশিটির মতো। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে চিকিৎসা প্রশাসন অস্থির না হলেও সংকট উঁকি দিতে শুরু করেছে। শীতের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে রোগীর সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে বলেও আশংকা প্রকাশ করা হয়েছে। গতকাল একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দৈনিক আজাদীকে বলেন, সুস্থ সবল বহু মানুষই উপসর্গহীন করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। যারা নিজেরাও জানেন না যে তিনি করোনায় আক্রান্ত। তিনি কোনো আইসোলেশনে না গিয়ে ইচ্ছেমতো ঘোরাঘুরি করছেন। অন্যদের আক্রান্ত করছেন। এ ধরনের উপসর্গহীন করোনা রোগী নিজের পরিবার পরিজন এবং সমাজের জন্য হুমকি হয়ে উঠছে। পরিবারের বৃদ্ধ বাবা মা কিংবা অন্য আত্মীয় স্বজন আক্রান্ত হচ্ছেন উপসর্গহীন রোগীদের দ্বারা।
সাম্প্রতিক সময়ে মৃত্যুহার বাড়ছে উল্লেখ করে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. শেখ ফজলে রাব্বি আজাদীকে বলেন, বয়স্ক মানুষ বেশি মারা যাচ্ছেন। করোনায় বর্তমানে যারা মারা যাচ্ছেন তাদের প্রত্যেকের বয়সই ৫০-এর উপরে। এতে শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে এমন মানুষগুলো বড় হুমকিতে রয়েছেন। করোনা রোগী বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে চট্টগ্রামের মা ও শিশু হাসপাতালের ১১০ সিটের পুরোটাই ভর্তি হয়ে গেছে। এর মধ্যে ৮০ জন রোগী করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে, ২০ জন কেবিনে, ৪ জন করোনার জন্য নির্ধারিত আইসিইউতে, ৬ জন এইচডিইউতে ভর্তি রয়েছেন। এতে মা ও শিশু হাসপাতালে গত দুদিন ধরে কোনো করোনা রোগী ভর্তি করা সম্ভব হয়নি। গত দুদিনে অন্তত দশজন করোনা রোগীকে ফেরত পাঠাতে হয়েছে।
বিষয়টি উদ্বেগের উল্লেখ করে মা ও শিশু হাসপাতাল পরিচালনা পর্ষদের ট্রেজারার মোহাম্মদ রেজাউল করিম আজাদ গতকাল আজাদীকে জানান, করোনা ওয়ার্ডে সিট খালি না থাকায় রোগী ভর্তি করাতে পারছি না। তাই দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে গত দুদিনে আরো ত্রিশটি বেড তৈরি করেছি। আমাদের হাসপাতালের নতুন ভবনের চার তলায় একটি আলাদা ইউনিটে ত্রিশজন করোনা রোগী ভর্তি করতে পারব। আজ থেকে নতুন ওই ওয়ার্ডে করোনা রোগী ভর্তি করা হবে।
সিভিল সার্জন ডা. শেখ ফজলে রাব্বি দৈনিক আজাদীকে বলেন, পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। শুধু করোনার জন্যই নয়, করোনাকে ভয় না করার যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সেটি বেশি উদ্বেগের। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি থাকার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, প্রস্তুতি আছে। কিন্তু ইচ্ছে করে কেউ যদি আক্রান্ত হতে চায় তাহলে তাদের ঠেকাবো কিভাবে? তিনি পাঁচটি মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে মাস্ক ব্যবহারের পরিমাণ বাড়ছে উল্লেখ করে বলেন, এভাবে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে তো মাস্ক পরানো সম্ভব নয়। নিজের ভালো যদি নিজে না বুঝে তাহলে সরকারের কীই বা করার আছে? জনসচেতনতার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। সামনের দিনগুলো আরো খারাপ হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য তিনি সমাজের সর্বস্তরের মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।