এই সমাজ মানুষের সৃষ্টি। বিভিন্ন নীতিমালা,নিয়ম অলিখিত ভাবে যখনই মানুষের প্রয়োজন হয়েছে সেই অনুসারেই প্রভাবশালী কিছু মানুষ তা সৃষ্টি করে নিয়ম বলে তাবৎ মানুষের উপর চাপিয়ে দিয়েছে। আর মানুষ এই অলিখিত নিয়মনীতি ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে। এসব সমাজনীতি খেয়াল করলে দেখা যায় অধিকাংশই নারীদের জন্য তৈরি ও পুরুষদের পক্ষে। এই শতাব্দীতে এসেও দেখা যায় অধিকাংশ সামাজিক নিয়ম জেন্ডার বৈষম্য দোষে দুষ্ট। তখন কি মনে প্রশ্ন জাগে না কেন এবং কোন মঙ্গলের কারণে সমাজে এসব নিয়ম ও নীতিমালা প্রণয়ন করে নারীদের একতরফা মানতে বাধ্য করা হয়েছে? আদৌ কি এসব নিয়ম পালনে কোন মানুষের প্রতি সুবিচার করা হয় নাকি অবিচার?
সমাজের নিয়মানুযায়ী বিধবা বিবাহ সমীচীন তো নহে ই বিধবারা নাকি সাজ-সজ্জায় পরিপাটি হয়ে থাকাও অনুচিত। সে যে বয়সের বিধবাই হোক না কেন। কিন্তু একজন পুরুষের বেলায় তার কোন প্রয়োজন হয় না। বরং সে স্বাধীন তার জীবন -যাপনে। পুন:বিবাহে। পূর্বে হিন্দু সমাজে বিধবাকে বাধ্য করা হতো সাদা থান কাপড় পরিধানে, নিরামিষ ভোজনে এবং একাহারে । তাকে বঞ্চিত করা হয় সকল প্রকার মাঙ্গলিক কাজ হতে। এখন শিক্ষিত পরিবারে এসব নিয়ম কিছুটা শিথিল হলেও বেশিরভাগ পরিবারে আজও বাধ্য করা হয় পালন করতে। অথচ বিপত্নীক পুরুষের সেই নিয়মাবলীর বালাই নেই। শুধু নারী বলেই কি সমাজ ধর্মের নামে এইসব অপ্রয়োজনীয় নিয়ম সৃষ্টি করে নি? মধ্যবয়সী নারীরা ও সাজ-গোজের বাহুল্য দেখাতে পারবে না। তাদের প্রমাণ করতে হবে তারা মধ্যবয়সী। নাহয়তো সমাজে নিন্দনীয়। ছেলে-মেয়ে বিয়ে দিয়েছে তেমন দম্পতিরা যে বয়সের হোক না কেন জীবন যাত্রায় যা বয়স তার চেয়েও যদি বেশি ভাব করতে না পারে এবং উল্টা যদি তারুণ্যের চাঞ্চল্য ধরে রাখতে চায় তাহলে চরম সমালোচিত ও নিন্দনীয় । খেলাধুলাতেও ভাগ করে দেওয়া হয় জেন্ডার। ছোটবেলা থেকেই এই বৈষম্য মনে গেথে দিলে সেই পুরুষরা নারীদের সম্মান দিতে শিখবে কিভাবে তা ভেবে দেখেছে কি? এমন আরও অনেক বৈষম্যমূলক নিয়ম এই সমাজে একটা নারী ছোট বেলা থেকেই পার করতে করতে জীবনের শেষ পরিণতিতে পদার্পণ করে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে বর্তমান সময়ে শিক্ষিত পরিবারের মানুষদের মাঝে ও এমন অপ্রয়োজনীয় সামাজিক নিয়ম পালনের পক্ষে কঠোর মনোভাব পোষণ করতে দেখা যায়। অনেক সময় তারা নিয়মের ব্যতিক্রম দেখলে অন্যের সমালোচনা করতে গিয়ে স্ববিরোধী বক্তব্য রাখে। চিন্তা করেনা যে সমস্ত নিয়ম মানুষের ভালো ও মঙ্গল বয়ে আনে না, মানসিক শান্তি প্রদান করে না সেসব নিয়মের কি প্রয়োজন আছে আদৌ? তা কি অমানবিক আচরণ হয় না? মানুষের চিন্তা ও মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে পারলে ন্যায়, অন্যায়, উচিত, অনুচিত বোধ সহজেই বিচার করতে সক্ষম হয় মানুষ। নিয়ম মানা হোক, প্রথা হোক যুক্তি দিয়ে বিচার ও বিবেচনা করেই।এবং কখনো তা একতরফা যেন না হয় যাতে কেউ বৈষম্যের শিকারে পরিণত হয়।
সেজন্য দরকার সার্টিফিকেট অর্জনের সাথে সাথে মানসিক উৎকর্ষ সাধন। একটা মন অন্ধকারে নিমজ্জিত রেখে প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রী অর্জন করলেই উদার মনোভাবের হবেনা। আত্মশুদ্ধি সবচেয়ে বড় প্রয়োজন নিজের মনের প্রসারতা বৃদ্ধির জন্য। এধরনের মানুষের জন্যই সমাজে বৈষম্য এবং উন্নতির ক্ষেত্রে এক পা এগোয় তো দুপা পিছায়।