সিআরবিতে প্রাইভেট হাসপাতালের নামে সেখানে দীর্ঘদিন ধরে বসবাসকারীদের উচ্ছেদ করার যে কোন প্রচেষ্টা মেনে নেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ রেলওয়ে শ্রমিক সংগঠনের নেতারা। নেতৃবৃন্দ বলেন, সিআরবি আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের সদর দপ্তর হিসাবে প্রতিষ্ঠিত। বর্তমানে এটি পূর্বাঞ্চলীয় সদর দপ্তর। এই ধরনের জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সদর দপ্তরের কাছাকাছি বেসরকারি প্রাইভেট হাসপাতাল ও কলেজ প্রতিষ্ঠিত হলে ভবিষ্যতে অনেক সমস্যার সৃষ্টি করবে। এটা কোনো অবস্থাতেই মেনে নেয়া যায় না। এই সিদ্ধান্ত পুণঃবিবেচনা করার দাবি জানিয়েছেন তারা। উল্লেখ্য, সিআরবি সাত রাস্তার মোড়ের বাম পাশে বিশাল পাহাড়ি ও সমতল ভূমি পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট মাল্টি স্পেশালিটি হসপিটাল ও ১০০ সিটের মেডিকেল কলেজ করার জন্য বরাদ্দ দিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ।
রেলওয়ের কর্মচারীদের নামে বরাদ্দকৃত হাসপাতাল কলোনীকে পরিত্যক্ত জায়গা দেখিয়ে সেখানে হাসপাতাল নির্মাণের নামে বসবাসরতদের উচ্ছেদ প্রচেষ্ঠার প্রতিবাদে গতকাল সোমবার সকালে সিআরবি সাত রাস্তার মোড়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে করে রেলওয়ের শ্রমিক সংগঠনগুলো।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, বিকল্প আবাসন ব্যবস্থা না করে সিআরবিস্থ রেলওয়ে হাসপাতাল কলোনীকে পরিত্যক্ত দেখিয়ে সেখানে বসবাসরতদের উচ্ছেদ করে প্রাইভেট হাসপাতাল করার প্রচেষ্টা রেলওয়ে কর্মচারীদের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। তারা বলেন, রেলওয়ে হাসপাতাল কলোনীতে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার কবর, শহীদ মিনারসহ অনেক পুরোনো মসজিদ ও মন্দির রয়েছে। এছাড়া বসবাসরতদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ বিল ও বাসাভাড়া বাবদ বিশাল অংকের রাজস্ব প্রতিবছর সরকারি কোষাগারে জমা হয়। এসব বৈধ বসবাসকারী কর্মচারীদের কাছ থেকে প্রাপ্য অর্থ ক্রমবর্ধমান হিসাবে ৪০ বছরের হিসাব করলে প্রকল্পের প্রাপ্য অর্থ থেকে কোন অংশে কম হবে না।
মানববন্ধনে শ্রমিক নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়ের অনেক পরিত্যক্ত জায়গা চট্টগ্রামেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। চট্টগ্রামস্থ কুমিরা রেলওয়ে বক্ষব্যাধি হাসপাতালটি অনেক আগেই পরিত্যক্ত। তাছাড়া মতিঝর্না এলাকায় অবৈধভাবে দখল করা রেলওয়ের জায়গাটি আদালত রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের জায়গা হিসাবে রায় দিয়েছেন, যা রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এখনও দখল নিতে পারেনি। ইতোপূর্বে রেলওয়ের বরাদ্দকৃত স্থানে ইউএসটিসি, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক হাসপাতাল, চক্ষু হাসপাতালসহ বহু প্রাইভেট সংস্থা গড়ে উঠলেও এতে রেলওয়ে কর্মচারীদের কোন স্বার্থ রক্ষা হয়নি। তাছাড়া ফয়স লেক এলাকায় কনকর্ড প্রতিষ্ঠানের সাথে লেক ভ্রমন পাসের চুক্তি হলেও রেলওয়ে কর্মচারীরা সে সুবিধা থেকে বঞ্চিত। বিভিন্ন এলাকায় বাংলাদেশ রেলওয়ের পরিত্যক্ত বাসা রয়েছে। সেগুলোর পিছনে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির জন্য প্রতিবছর রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কোটি টাকার উপর লোকসান হচ্ছে অথচ কোন রাজস্ব আদায় হচ্ছে না। তদুপরি বাসাসমূহ নানা বখাটে আর সন্ত্রাসীদের মাদকের আস্তানা হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। এসব স্থানেও প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালটির স্থান নির্ধারণ করা সম্ভব। নেতৃবৃন্দ পরিত্যক্ত স্থানে হাসপাতাল নির্মাণের জায়গা নির্ধারণের জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের প্রতি আবেদন জানান।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ রেলওয়ে শ্রমিকলীগের কার্যকরী সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা শেখ মো. লোকমান হোসেন, শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সবুর, বাংলাদেশ রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মোখলেচুর রহমান, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী রেলওয়ে শ্রমিক ও কর্মচারী দলের সাধারন সম্পাক এম আর মনজু, বাংলাদেশ রেলওয়ে এমপ্লয়ীজ লীগের সভাপতি আনোয়ারুল হক, বাংলাদেশ রেলওয়ে কারিগর পরিষদের সাধারন সম্পাদক এস কে বারী, বাংলাদেশ রেলওয়ে জাতীয় শ্রমিক পার্টি সাধারন সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান পিন্টু, বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতির সাধারন সম্পাদক মজিবুর রহমান, বাংলাদেশ রেলওয়ে শ্রমিক জোটের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক নুরুল ইসলাম ফারুকী, শ্রমিকলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম মামুন ও রেলওয়ে হাসপাতাল কলোনী বাসীর পক্ষে শান্তনু দাশ, ফুলিনা চৌধুরী, পরিমল, জিয়া উদ্দিন, আশরাফুল, এনায়েত হক, রাজু ঘোষ, শয়ন ঘোষ, আশীষ প্রমুখ।
মানববন্ধনে রেলওয়ে হাসপাতাল কলোনীবাসীসহ বাংলাদেশ রেলওয়ে শ্রমিকলীগ, বাংলাদেশ রেলওয়ে শ্রমিক ইউনিয়ন, বাংলাদেশ রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার কর্মচারী ইউনিয়ন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী রেলওয়ে শ্রমিক ও কর্মচারী দল, বাংলাশে রেলওয়ে এমপ্লয়ীজকলীগ, বাংলাদেশ রেলওয়ে কারিগর পরিষদ, বাংলাদেশ রেলওয়ে জাতীয় শ্রমিক পার্টি, বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতি, বাংলাদেশ রেলওয়ে শ্রমিকজোট, শ্রী শ্রী লোকনাথ সেবাশ্রম, রেলওয়ে মেডিকেল এসেসিয়েশন, শ্রী শ্রী রাঁধাকৃষ্ণ নিতাইগৌর বন্ধুকুঞ্জ আশ্রম, শুকতারা রেলওয়ে মুক্ত মহা স্কাউট ল, সৃজনী সংস ও সৃজনী মুক্ত রোভার দলসহ বিন্নি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহ অংশ গ্রহন করে।