মাটির গুণ আর প্রাকৃতিক কারণে বোয়ালখালীর খেজুর রসের স্বাদ অন্যরকম। কিন্তু নানা প্রতিকূলতায় সেই ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসেছে। তবে আশার কথা হলো, এখানে বেসরকারি পর্যায়ে গড়ে উঠেছে কয়েকটি বাগান। স্থানীয় কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, খেজুরগাছ আবাদি জমির ক্ষতি করে না। সড়কপথ, পতিত জমি, ক্ষেতের আইল, পুকুরপাড়, বাড়ির আঙিনায় এই গাছ লাগানো যায়। এ নিয়ে কথা হয় পূর্ব গোমদন্ডী গ্রামের জাগের হোসেনের সাথে। তিনি বলেন, এই দুর্দিনে দুইটা খেজুরগাছ আগলে রেখেছি। কিন্তু গাছির অভাবে রস খেতে পারি না। রসের জন্য অপেক্ষায় থাকা শাকপুরা এলাকার আব্দুল মালেক বলেন, নাতি-নাতনিরা বেড়াতে আসবে জেনে রসের খোঁজে বের হয়েছিলাম। কিন্তু গাছি রস দিতে পারবে না বলায় বেকায়দায় পড়ে গেছি।
পোপাদিয়ার গাছি শুক্কুর বলেন, আগের মতো খেজুরগাছ না থাকায় এখন রসের রমরমা অবস্থা নেই। শীত এলে নিজের বাড়ির ২/৩টা গাছ শখের বসে কাটি। তার থেকে সামান্য যা পাই তা দিয়ে নিজেদের চাহিদা মেটাই।
একসময় বোয়ালখালী উপজেলার পথেঘাটে, মাঠে চোখে পড়ত সারি সারি খেজুরগাছ। অযত্নে ও অবহেলায় জন্মাত এসব গাছ। শীত এলেই খেজুরগাছ ঘিরে শুরু হতো নানা আয়োজন। শীতের শুরুতেই শত শত গাছি পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে দা তৈরি, দড়ি ও মাটির কলস কিনতেন। এছাড়া গাছ পরিষ্কারের ধুম পড়ে যেত। দড়ি, কোমরে পেঁচানো ধারালো দা ও কলস হাতে খেজুরগাছ কাটতে বিকালে গাছিরা ব্যস্ত সময় পার করতেন। আবার কাক ডাকা ভোরে ঠিল্লা (কলস) ভর্তি কাঁচা রস কাঁধে নিয়ে বাড়ি বাড়ি যেতেন। বৌ-ঝিরা রস জাল দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়তেন। পরে রস দিয়ে মুখরোচক নানা স্বাদের পিঠা পুলি, শিরনি ও পায়েস তৈরি হতো। ভোরে তৈরি হতো শীত পিঠা ও ভাপা পিঠা। হাড় কাঁপানো শীতে উনুনের পাশে বসে রস দিয়ে পিঠা খাওয়ার প্রতিযোগিতা চলত। আত্মীয়-স্বজন প্রতিবেশীসহ নতুন বেয়াই বাড়িতে লাই ভর্তি করে এসব পিঠা আর রস পাঠানোর দৃশ্য দেখে মন ভরে যেত।
বোয়ালখালীতে এখন খেজুর রসের জৌলুস আগের মতো নেই। খেজুরগাছ রক্ষায় উদ্যোগের অভাব ও নানা প্রতিকূলতায় কমে গেছে গাছের সংখ্যা। তবে আশার আশার কথা হলো, এখানে বেসরকারি পর্যায়ে গড়ে উঠেছে কয়েকটি বাগান। মৌসুমী খামার নামে একটা বাগানের কর্মচারী মইনুদ্দিন জানান, ব্যয়বহুল হলেও আমরা ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, আমাদের বাগানে প্রায় দেড়শ গাছ আছে। প্রতি গাছ থেকে প্রতিদিন ৪-৫ লিটার রস পাই। প্রতি লিটার রস ৮০ টাকা করে বিক্রি করি। বাজারে প্রচুর চাহিদা থাকলেও সরবরাহ দিতে পারি না। কারণ ঊৎপাদন খরচের দিক থেকে পোষায় না। স্থানীয় পর্যায়ে গাছি পাওয়া না যাওয়ায় অন্য জেলা থেকে গাছি ও কাজের লোক সংগ্রহ করতে হয়।