দৈনিক আজাদীর পর পর দুদিনের প্রকাশিত প্রতিবেদনে সহজে অনুমান করা যায় যে চট্টগ্রামে করোনা পরিস্থিতি অবনতির দিকে। সাধারণ মানুষের ভেতরে যেন আতঙ্ক ছড়িয়ে না পড়ে, তার জন্য গণমাধ্যম সতর্ক পদক্ষেপ গ্রহণ করছে, তাও স্পষ্টত বোঝা যায়। তবে সঠিক চিত্র তুলে ধরতেও তারা পিছ পা নন। ১৭ নভেম্বর প্রকাশিত হয় ‘রোগী বাড়ছে হাসপাতালে, করোনার সংক্রমণ ফের ঊর্ধ্বমুখী মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার তাগিদ’ শীর্ষক সংবাদ। ১৮ নভেম্বর প্রকাশিত হয় ‘করোনার প্রকোপ বাড়ছে’ শীর্ষক সংবাদ। এতে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ফের বাড়ছে। গত বেশ কয়েকদিন টানা শতাধিক সংখ্যায় করোনা সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছে চট্টগ্রামে। রোববার করোনা সংক্রমিত শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮১ জনে। ১ হাজার ৫৬টি পরীক্ষাকৃত নমুনায় ১৭.১৪ শতাংশের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে এদিন। হিসেবে রোববার শনাক্তের এই হার গত তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় হাসপাতালগুলোতেও করোনা রোগীর চাপ বাড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে বেসরকারি হাসপাতালগুলো করোনা রোগীতে ভরপুর। বেশ কয়টি হাসপাতালের করোনা ব্লকে ঠাঁই নেই অবস্থা। একটি শয্যাও খালি নেই।
পত্রিকান্তরেও এ ধরনের তথ্য প্রকাশিত হয়; তাতে বলা হচ্ছে, দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়ার প্রবণতা দেখা দিয়েছে। পরীক্ষা অনুপাতে শনাক্তের হার বাড়ছে। একজন থেকে একাধিক জনের মধ্যে সংক্রমিত হওয়ার আর-নট রেটও (ভাইরাসের রিপ্রোডাকশন রেট) বেড়েছে। এমনকি করোনায় বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। অথচ সংক্রমণকে নিয়ন্ত্রণে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগে চরম শৈথিল্য চলছে। এসব কর্মকাণ্ডের কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় অগ্রগতি নেই। বিশেষ করে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে মানুষের মধ্যে তীব্র অনীহা দেখা দিয়েছে। সর্বশেষ সরকারের নেওয়া ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ কর্মসূচি মাঠপর্যায়ে তেমন কোনো বাস্তবায়ন নেই। এমন পরিস্থিতিতে ‘বিপজ্জনক’ বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে তাঁরা এখনই এ বাড়াকে অতটা তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন না।
করোনা রোগীর চাপ বাড়লেও চট্টগ্রামে আগের মতো অসহায় পরিস্থিতি সৃষ্টির শঙ্কা নেই বলে মনে করেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা। তাঁরা বলছেন- প্রথম দিকে বেসরকারি হাসপাতালগুলো রোগী ভর্তি না নেয়ায় রোগীদের এক প্রকার অসহায় পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। এখন কিন্তু এমন অবস্থা নেই। সব বেসরকারি হাসপাতালই করোনা রোগীদের কম-বেশি চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে। সংক্রমণের প্রথম দিকে ডাক্তার-নার্সসহ সংশ্লিষ্ট সকলের মাঝে এক ধরনের আতঙ্ক ছিল। যা এখন অনেকটাই কেটে গেছে। এছাড়া করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা নিয়ে আগে ডাক্তাররা দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন। এখন সে দ্বিধাটাও কেটে গেছে। বলা যায়-করোনা রোগীদের চিকিৎসায় ডাক্তাররা এখন অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী।
করোনা মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। এ ধরনের ভয়ের পরিস্থিতি ও অনিশ্চয়তা মানুষকে স্বার্থপর করে তোলে বলে সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন। তাঁরা বলেন, এটা মানবিক প্রবৃত্তি। ফলে করোনাকাল ও সংক্রামক রোগের এই পরিস্থিতি সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে, এটা অস্বাভাবিক নয়। তবে এই যে একটা বিশেষ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে মানুষ যাচ্ছে, এ নিয়ে যে সামাজিক গবেষণা হওয়া প্রয়োজন, সেটা আমাদের দেশে হচ্ছে না। আমাদের কাছে কোনো তথ্য-উপাত্ত বা পরিসংখ্যান নেই। ফলে সামাজিকভাবে এই পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করা কঠিন। করোনা পরিস্থিতি আমাদের মধ্যে কিছু আচরণগত পরিবর্তন এনেছে। আমরা এখন অনেক কিছুই নিয়ম মেনে করছি। সামাজিক অনুষ্ঠান এড়িয়ে চলছি। পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর দিচ্ছি। খুব বিপদে না পড়লে বা সামান্য অসুখ-বিসুখে হাসপাতালে যাচ্ছি না। নানা কিছু নিয়ে একধরনের সন্দেহ-অবিশ্বাসের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আসলে আমাদের মধ্যে একধরনের ভয় ঢুকে গেছে। এই পরিস্থিতি থেকে দ্রুত ও সহজে আমাদের পরিত্রাণ মিলবে না।
সংক্রমণের উর্ধ্বমুখী হারই বলে দিচ্ছে এরইমধ্যে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু সাধারণ মানুষকে যেন কোন ভাবেই সচেতন করা যাচ্ছে না। মানুষ না মানছেন স্বাস্থ্য বিধি, না পড়ছেন মাস্ক। কিন্তু শীতে এই সংক্রমণ আরো আশঙ্কাজনকভাবে বাড়তে পারে। যার কারণে এখনই সতর্ক হওয়ার বিকল্প নেই। করোনার সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে অবশ্যই মাস্ক পড়ার পাশাপাশি সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মানার তাগিদ দিয়েছেন স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা।