চলতি বছরের শুরুতে রাজধানীর কুর্মিটোলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ মামলায় একমাত্র আসামি মজনুকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। ঢাকার সপ্তম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোছা. কামরুন্নাহার গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হওয়ার আগে এই মামলার অভিযোগ গঠন হওয়ায় পূর্বের আইনের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডই দেওয়া হয়েছে আসামি মজনুকে। সেই সঙ্গে বিচারক তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন, যা না দিতে পারলে তাকে আরও ছয় মাস জেল খাটতে হবে। ধর্ষণের পর ওই শিক্ষার্থীর মোবাইল নিয়ে গিয়ে এক নারীর কাছে বিক্রি করে দিয়েছিলেন মজনু, যা পরে র্যাব উদ্ধার করে। সে কারণে মামলায় ধর্ষণের পাশাপাশি ছিনতাইয়ের অভিযোগে দণ্ডবিধির ৩৯৪ ও ৪১১ ধারায় মজনুর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছিল। তবে আদালত ছিনতাইয়ের অভিযোগ থেকে আসামিকে খালাস দিয়ে বলেছে, মজনু ওই মোবাইল ছিনতাই করে নিয়েছিলেন কি না, তা প্রমাণিত হয়নি। খবর বিডিনিউজের।
রায়ের জন্য এদিন দুপুরে আদালতে হাজির করার পর মজনু ব্যাপক চিৎকার-চেঁচামেচি ও পুলিশ সদস্যদের গালাগাল শুরু করলে বিচারক সাংবাদিক ও উৎসুক আইনজীবীদের বাইরে যেতে বলে শুধু জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের এজলাসে থাকার অনুমতি দেন এবং পরে রুদ্ধদ্বার কক্ষে রায় ঘোষণা করা হয়। আসামির পক্ষে কোনো আইনজীবী না থাকায় ঢাকা জেলা লিগ্যাল এইডের রবিউল ইসলাম রবিকে এ মামলায় মজনুর পক্ষে মামলা পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। রায়ের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আদালত বলেছে, রাষ্ট্রপক্ষ যেভাবে সাক্ষ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করেছে, তাতে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। আর আসামি পক্ষের আইনজীবী হিসেবে আমি বলব, আসামি ন্যয়বিচার পাননি, তিনি উচ্চ আদালতে যেতে পারেন। রায়ের আগে মজনুর আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করলে এই আইনজীবী বলেন, সে নেচারালি এরকম। আজ অনেক লোক যখন প্রশ্ন করেছে, সে ধর্ষণ করেছে কি না সেই সুযোগ সে উল্টো পাল্টা আচরণ করেছে অস্বাভাবিক আচরণ করেছে। অন্যদিকে এই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি আফরোজা ফারহানা আহম্মেদ অরেঞ্জ বলেন, মজনুর ১৬৪ ধারার জবানবন্দি, ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন, মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে গ্রেপ্তার, ধর্ষণের শিকার শিক্ষার্থীর শনাক্তকরণ ও সাক্ষীদের সাক্ষ্যের মাধ্যমে আমরা আদালতকে সন্তুষ্ট করতে পেরেছি। তাই আদালত সন্তুষ্ট হয়ে আসামিকে এই আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। আমরা রাষ্ট্রপক্ষ এই রায়ে সন্তুষ্ট। তিনি বলেন, ওই শিক্ষার্থীকে ২০টি ছবি দেখানো হয়, তার মধ্যে মজুনর ছবিও ছিল। তিনি মজনুকেই ধর্ষক হেসেবে শনাক্ত করেছিলেন।
ধর্ষণের ঘটনার পর ক্যাম্পাসে বা বাড়িতে না ফিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষার্থী আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তত্ত্বাবধানে ছিলেন। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের অ্যডভোকেট আবদুর রশিদ বলেন, এরকম রায়ই আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম। যেহেতু, আগের আইনে অভিযোগ গঠন হয়েছে, ফলে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার সুযোগ ছিল না। আমরা ওই শিক্ষার্থীর পরিবারকে রায়ের কথা জানিয়েছি। তারা এই রায়ে সন্তুষ্ট।