নগরীর আগ্রাবাদে যুবলীগ কর্মী মারুফ চৌধুরী মিন্টু হত্যা মামলার অন্যতম আসামি রমজান আলী (২৫) বুঝতে পেরেছিলেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে হন্যে হয়ে খুঁজছে। এজন্য তিনি চট্টগ্রাম ছেড়েছিলেন ঘটনার পর দিন রাতেই। চেষ্টা করছিলেন সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে পালিয়ে যেতে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ট্র্যাকিং এড়াতে পরিবর্তন করেছিলেন ১৪টি মোবাইল সিম। শুধু তাই নয়, আইএমইআই নম্বর দিয়ে ধরে ফেলতে পারে ভেবে ৪টি মোবাইল ফোনও বদলেছেন রমজান ৫ম পৃষ্ঠার ৬ষ্ঠ কলাম
আলী। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি।
শেষ পর্যন্ত ডবলমুরিং থানা পুলিশের পাতা ফাঁদে ঠিকই ধরা পড়লেন তিনি। গতকাল মঙ্গলবার ভোর রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। যদি তাকে ধরা না যেত, তিনি আজই সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে পালিয়ে যেতেন। রমজান আলী নগরীর ২৮ নম্বর পাঠানটুলি ওয়ার্ড যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি ডবলমুরিং থানার কমার্স কলেজ রোডের মতিয়ারপুল এয়ার আলী মসজিদ এলাকার মো. আক্তারের ছেলে।
ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সদীপ কুমার দাশ আজাদীকে বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর চট্টগ্রাম থেকে পালিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে চলে গিয়েছিল রমজান। সেখানে ফেরিঘাট এলাকায় হোয়াইট হাউস নামে একটি হোটেলে সে অবস্থান করছিল। আশুগঞ্জ হয়ে আগরতলা সীমান্ত পার হয়ে ভারতে চলে যাওয়ার সব প্রক্রিয়া সে সম্পন্ন করেছিল। কিন্তু গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আমরা তাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। রমজানকে গ্রেপ্তারের পর হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত রক্তমাখা অবস্থায় কাঠের টুকরাটি উদ্ধার করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই অর্নব।
গ্রেপ্তার অভিযান চালানো ডবলমুরিং থানার এসআই অর্নব বড়ুয়া আজাদীকে বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পেরেছি, রমজান এবার যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এলাকায় আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চুর সঙ্গে নিজের নামে পোস্টার সাঁটায়। ঘটনার দুই দিন আগে মিন্টু ও আরো কয়েকজন রমজানের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে। এতে রমজান অপমানবোধ করে তাকে জবাব দেওয়ার পরিকল্পনা করে। পরে মিন্টুকে সুকৌশলে ডেকে নিয়ে মাথায় টেবিলের কাঠের খুঁটি দিয়ে আঘাত করে। পরদিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মিন্টুর মৃত্যু হলে এলাকা থেকে পালিয়ে যায় রমজান।
রমজান পুলিশকে আরো জানায়, মিন্টু যে মারা যাবে, এটা তারা বুঝতে পারে নি। যেহেতু আগের ঘটনায় তাদের গ্রুপের ছেলেদের মেরেছে, সেহেতু তাদের পরিকল্পনা ছিল মিন্টুকে মারধর করার। তাই ঘটনার পর সে এলাকাতেই ছিল। কিন্তু পরদিন মিন্টু মারা গেছে শোনার পর সে বুঝতে পারে তাকে যেকোনো মুহূর্তে ধরা পড়তে হতে পারে।
প্রসঙ্গত, যুবলীগ কর্মী মারুফ চৌধুরী মিন্টু মারা যাওয়ার ঘটনায় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও যুবলীগ নেতা নামধারী ক্যাডার মোস্তফা কামাল টিপু, রমজানসহ সাতজনের নামে ও অজ্ঞাতনামা দশ-বারোজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা হয়েছে। গত শনিবার রাত ১১টা নাগাদ ডবলমুরিং থানায় মামলাটি দায়ের করেন নিহতের বড় বোন রোজি চৌধুরী।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও বর্তমানে যুবলীগ নেতা নামধারী ক্যাডার মোস্তফা কামাল টিপুর অনুসারী হিসেবে এলাকায় পরিচিত রমজানসহ অন্যান্য আসামিরা। টিপু সাবেক কাউন্সিলর বাহাদুরের অনুসারী বলে জানা গেছে।