উত্তরায় উপনির্বাচনের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মধ্যে একটি ফোনালাপের রেকর্ড সংসদে শোনালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সোমবার সংসদে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হারুনুর রশীদের বক্তব্যের পাল্টায় সরকার প্রধান ফোনালাপের রেকর্ডটি শুনিয়ে বলেন, বিএনপিই এই কাজ করে এখন আওয়ামী লীগের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার ঢাকা-১৮ আসনে উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণের মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে মোট ১১টি বাসে আগুন দেওয়া হয়। বাস পোড়ানোর জন্য বিএনপিকে দায়ী করেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা। অন্যদিকে বিএনপি নেতারা দাবি করেন, তাদের ফাঁদে ফেলতে ক্ষমতাসীনরাই বাস পুড়িয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
সোমবার সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় বিএনপির হারুন এই প্রসঙ্গ টেনে বলেন, বিএনপির নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যমূলকভাবে মামলায় জাড়ানো হচ্ছে। তিনি এই নাশকতার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজতে সংসদীয় কমিটি গঠনের দাবি জানান স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে। হারুন বলেন, ওই কমিটি গঠন হলে সাতদিনের মধ্যে জড়িতদের খুঁজে বের করা যাবে।
এরপর সংসদ নেতা শেখ হাসিনা দাঁড়িয়ে তার মোবাইল ফোন থেকে এক ফোনালাপের রেকর্ড সবাইকে শোনান। তাতে বাস পোড়ানোর ঘটনা নিয়ে এক ব্যক্তি ও এক নারীকে আলাপ ৫ম পৃষ্ঠার ৭ম কলাম
করতে শোনা যায়। নারী কণ্ঠ বলছিলেন, যুবদলের ছেলেরা বাসে আগুন দিয়েছে।
রেকর্ডটি শেষ হলে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হয়, উনি বিএনপির সংসদ সদস্য, আমার সামনের সিটেই উনাকে বসিয়েছি। বিভিন্ন সময় এমন এমন কথা উনি তোলেন। সবসময় আমরা উত্তরও দিই না। আজকে উনি যেভাবে কথাটা বললেন, উনার মনে হয় নিজেদের পার্টি সম্পর্কে তথ্যগুলো জেনে নিয়ে কথাগুলো বলা উচিত ছিল।
আগুন দেওয়ায় জড়িতদের ছবিও পেয়েছেন বলে সংসদে জানান প্রধানমন্ত্রী। এখন প্রযুক্তির কারণে সব জায়গায় সিসি ক্যামেরা আছে। হাতেনাতে ধরা পড়ে যাচ্ছে। কারা আগুন দিচ্ছে, ছবিও আছে আমার কাছে। সুযোগ থাকলে এখানে দেখাতে পারি। একটা মিছিল চলে যাওয়ার সাথে সাথে কটা লোক গিয়ে বাসে দিয়াশলাইয়ের কাঠি জ্বালিয়ে আগুন দিয়ে দিল। আমার কাছে ছবি আছে। রাস্তায় সিসি ক্যামেরা থেকে সেটা নেওয়া। নিজেরা আগুন-টাগুন দিয়ে পার্লামন্টে এসে সরকারের ওপর দোষ চাপান। উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানো এটা তাদের অভ্যাস।
নির্বাচনে কারচুপি নিয়ে বিএনপির অভিযোগের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আদৌ তারা নির্বাচন করে কি না? নির্বাচনে অংশ নেন। নমিনেশন নিচ্ছেন, যাচ্ছেন। কিন্তু তাদের না কাজ, না প্রচার কিংবা নির্বাচনের দিনে কোথাও একটা এজেন্টও ঠিকমত দেবে না। কোনো কিছু করবে না। মাননীয় স্পিকার আপনি যদি প্রতিটি উপ-নির্বাচন দেখেন, একটা সময়ের পর তারা নির্বাচন থেকে প্রত্যাহার করেই অমনি বলে, নির্বাচন ঠিক হচ্ছে না। আসলে জনগণের সমর্থন তারা হারিয়েছে অনেক আগেই। ২০০১ সালে চক্রান্ত করে ক্ষমতায় আসার পর।
তারপর থেকে যে সমস্ত ঘটনাগুলি ঘটিয়েছে, বিশেষ করে তাদের সন্ত্রাস, মানুষ খুন করা, নারী নির্যাতন থেকে শুরু করে এমন কোনো অপরাধ নাই ২০০১ সালে বিএনপি করে নাই। ১ অক্টোবর থেকে শুরু। হাজার হাজার মেয়েদের ওপর পাশবিক অত্যাচার, তারপর আসে অগ্নিসন্ত্রাস। জীবন্ত মানুষগুলোকে পুড়িয়ে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। এটাই তাদের আন্দোলন। মানুষ খুন করা। আবার ঢাকার দুটো সিটে নির্বাচন। একটা সিটে যখন নির্বাচন হচ্ছে, তখন কয়েকটা বাসে আগুন দেওয়া। তারা নিজেরা আগুন দিয়ে দোষ দিচ্ছে এটা নাকি সরকারি এজেন্ট!
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাননীয় স্পিকার আমরা ক্ষমতায় আছি। আমরা আগুন দিয়ে আমাদের সরকারের বদনামের ভাগীদার করব কেন? মানুষের জীবনের নিরাপত্তা দেওয়াটা আমাদের দায়িত্ব। বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, গোড়ায় গলদ। ক্ষমতায় এসেছে জিয়াউর রহমান হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্র করে। প্রত্যেক ঘটনা যদি দেখেন। তার ক্ষমতা দখলটাই হচ্ছে খুনের মধ্য দিয়ে। যে দলটির সৃষ্টি করে গেছে তারা খুন-খারাবি, অস্ত্রের রাজনীতি এটাই ভালো বোঝে। সন্ত্রাসের রাজনীতিভালো বোঝে। বাংলাভাই সৃষ্টি করা থেকে শুরু করে জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করা, দুর্নীতি করা, অর্থ পাচার করা, নানা ধরনের অপকর্ম করে গেছে। কোনো কারণ নেই এভাবে বাসে আগুন দিয়ে পোড়ানোর। তারা করল কেন? নির্বাচনটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে।
শেখ হাসিনা বলেন, হবে না কেন? দলের নেতা বানিয়েছে কাকে? খুনের মামলার আসামি, দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবার মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি, যে দেশ থেকে পলাতক, তাকে বানানো হলো ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। বাংলাদেশে বিএনপির এমন কোনো যোগ্য নেতা নেই যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হতে পারে। ফেরারি খুনের মামলার আসামি, অন্য দেশে থাকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান… তাদের নেত্রী তিনিও এতিমের অর্থ আত্মসাৎ মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। তারপরেও তাকে বাসায় থাকতে দেওয়া হয়েছে।
সংসদ নেতা বলেন, মাননীয় স্পিকার, সংসদ একটা পবিত্র জায়গা। আপনার মাধ্যমে বিএনপির সংসদ সদস্য কে বলব এভাবে এখানে অসত্য তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত না করাই ভালো। মানুষ এটা গ্রহণ করবে না, বিশ্বাস করবে না। আর এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডটা যেন বিএনপি বন্ধ করে, এটাই আমার আবেদন থাকবে।
করোনাভাইরাসে মানুষ এমনিতে কষ্টে আছে। সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখতে, মানুষকে সাহায্য করতে। সেখানে এই সুযোগেও তারা চাচ্ছে দুঃসময় কাজে লাগিয়ে সরকারকে বদনাম করা আর নিজেদের ফায়দা লুটতে চাচ্ছে। কী ফায়দা তারা লুটতে পারছে, আমি জানি না। মানু্ষ অন্ধ না। তারা জানে বোঝে। বিএনপির নেতাদের বোঝা উচিত। প্রযুক্তির কারণে অনেক কিছু তাড়াতাড়ি ধরা পড়ে যায়।