একটি মৃত্যু ঘিরে রহস্য

টাইগারপাসে পাহাড়ের পাদদেশে হোটেল কারিগরের লাশ

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১৬ নভেম্বর, ২০২০ at ৯:৩১ পূর্বাহ্ণ

নগরীর খুলশী থানাধীন টাইগারপাস এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশ থেকে আবু হানিফ নামে ৪৫ বছর বয়সী এক হোটেল কারিগরের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। স্থানীয়দের কাছে খবর পেয়ে গতকাল রোববার দুপুর ১টার দিকে পেট্রোল পাম্পের বিপরীত স্থান থেকে এ মরদেহ উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছেন খুলশী থানার ওসি মোহাম্মদ শাহিনুজ্জামান।
তিনি আজাদীকে বলেন, লাশের গায়ে আঘাতের কোনো চিহ্ন নেই, তবে মুখে ফেনা আছে।
তিনি ব্যাটারি গলির কুদ্দুছের হোটেল নামে একটি হোটেলে দৈনিক চুক্তিতে কাজ করেন। খবর পেয়ে তার ভাই ও ভাতিজা এসেছেন। তাদের কোনো অভিযোগ নেই। তারা ময়না তদন্ত ছাড়াই মরদেহ নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেছেন। কিন্তু আমরা দিইনি।
টাইগারপাস এলাকায় তার মরদেহ পাওয়া এবং মৃত্যুর কারণ প্রসঙ্গে ওসি বলেন, আমরা সম্ভাব্য সব কারণ খতিয়ে দেখছি। তিনি নিজেও কোনো কারণে ওই পথ দিয়ে যেতে পারেন। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে সেখানে মৃত্যু হয়। আবার কেউ তাকে সেখানে নিয়ে যেতে পারে। সুতরাং ময়না তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার আগে আমরা কিছু বলতে পারছি না। তিনি জানান, আবু হানিফের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর সোনাপুর এলাকায়। তাঁর স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে আছে।
গতকাল দুপুরে ঘটনাস্থল টাইগারপাসে গিয়ে দেখা গেছে. সিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) বিজয় বসাক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছেন। টি-শার্ট ও জিন্স পরিহিত আবু হানিফের লাশ পোস্টমর্টেমের জন্য ভ্যান গাড়িতে করে মর্গে পাঠানো হচ্ছে।
এদিকে সংবাদ পেয়ে টাইগারপাস এলাকায় লাশ দেখতে ভিড় করে মানুষ। এছাড়া জনতার ভিড় দেখে ওই পথ দিয়ে চলমান যানবাহনগুলো কৌতূহলী হয়ে গাড়ি স্লো করে দেখার চেষ্টা করছিল কী হয়েছে। এতে করে যানজটের সৃষ্টি হয়। যানজট দেওয়ানহাট মোড় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। মানুষের ভিড় এড়াতে শেষ পর্যন্ত পুলিশকে তৎপর হতে হয়।
আবু হানিফের কর্মস্থল ব্যাটারি গলির কুদ্দুছের হোটেলে গিয়ে মালিক কুদ্দুছের দেখা মেলেনি। হোটেল ম্যানেজার মো. আজিম জানান, প্রেশার বেড়ে যাওয়ায় তিনি বিশ্রামে আছেন। আবু হানিফ তাদের হোটেলে প্রায় মাসখানেক ধরে দৈনিক ৩শ টাকা চুক্তিতে কারিগর হিসেবে কাজ করছিলেন জানিয়ে আজিম বলেন, শনিবার তার নাইট ডিউটি ছিল। শরীর খারাপ লাগায় রাতে আমি আগেভাগে বের হই। রাতে আবু হানিফের হোটেলে থাকার কথা। সকালে এসে দেখি হোটেল খোলা, অথচ সে নেই।
তিনি বলেন, সকাল ৯/১০টা পর্যন্ত তার দেখা না পাওয়ায় বাড়িতে ফোন দিই। তারাও কিছু জানে না। বারোটার দিকে এখানে থাকা তার ভাই ও ভাইপোকে জানাই। বেলা দুইটার দিকে খুলশী থানা থেকে জানতে পারি, হানিফের লাশ পাওয়া গেছে টাইগারপাসে। সে ওখানে কেন গিয়েছিল কিংবা কেউ তাকে ওখানে নিয়ে গিয়েছিল কিনা তা খোদা-ই জানেন। তবে ব্যাটারি গলিতে পরিচ্ছন্নতার কাজ করা একজন জানিয়েছে. তাকে গতকাল (শনিবার) রাতে কাজীর দেউড়ি মোড়ে দেখেছে। কেন এসেছে জানতে চাইলে হানিফ তাকে জানায়, মরিচ কিনতে এসেছে। রাস্তায় সিসিটিভি আছে, তার ফুটেজ দেখলে বোঝা যাবে সে কীভাবে টাইগারপাস গেছে।
আবু হানিফের ভাইপো মো. রাকিব জানান, চাচা দুবাই ছিলেন। সেখানে স্ট্রোক করায় দুই বছর আগে দেশে ফিরে আসেন। এখানেও একবার স্ট্রোক করেছিলেন। আমাদের মনে হচ্ছে তিনি অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন। অসুস্থ হয়ে টাইগারপাস গিয়ে মারা যাবেন কেন? জানতে চাইলে রাকিব বলেন, এটা তো ভাই পুলিশ ভালো বলতে পারবে। কিন্তু পুলিশ বলছে, লাশ পোস্টমর্টেম ছাড়া দেবে না। তার জন্যই অপেক্ষা করছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম থেকে সৌদি আরবে সরাসরি ফ্লাইট চান সুজন
পরবর্তী নিবন্ধবিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক অফিস করছেন সিভিল সার্জন কার্যালয়ে