বাঁশখালীতে ১১ বাহিনীর ৩৪ জন জলদস্যু আত্মসমর্পণ করেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপির হাতে অস্ত্র জমা দিয়ে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি আত্মসমর্পণকারীদের সহযোগিতা করা হবে বলে আশ্বাস প্রদান করেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে মাদক ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে বলেছেন। তাই যারা অপরাধ করবে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাত থেকে রেহাই পাবে না। তবে যারা অপরাধ ও জলদস্যুতা ছেড়ে আলোর পথে আসবে তাদের কর্মসংস্থান ও মাথা উঁচু করে বাঁচার সুযোগ দেওয়া হবে। বিগত সময়ে যারা আত্মসমর্পণ করেছে তাদেরকে হত্যা ও ধর্ষণ মামলা ছাড়া অন্যান্য মামলাগুলো থেকে কিভাবে মুক্তি দেওয়া যায় সে ব্যাপারে সহযোগিতা করা হবে।
আইজিপি ড. বেনজির আহমেদ বলেন, যারা অপরাধ ছেড়ে দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। তিনি আরো বলেন, যারা গুজব ছড়িয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে চায় তাদের ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিঘ্ন ঘটাতে পারে এমন কোনো বিষয় চোখে পড়লে তা দ্রুত ৯৯৯-এ জানানোর আহ্বান জানান আইজিপি।
শিশুপাঠ্য একটি গল্পের উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। গল্পটির নাম সম্ভবত দস্যু নিজামের গল্প। নিজাম ডাকাতের কাছে প্রশ্ন করা হয়েছিল, এই পাপ কাজে কেন সে লিপ্ত? নিজামের জবাব, পরিবার পরিজনদের ভরণপোষণের জন্য সে এই পথ বেছে নিয়েছে। তাকে প্রশ্ন করা হয়, তুমি যাদের জন্য এই পাপ করছ, তারা কি তোমার পাপের ভাগিদার হবে? বাড়ি ফিরে গিয়ে তুমি তাদের কাছে জানতে চাও। নিজাম ডাকাত বাড়ি ফিরে একে একে সবার কাছে জানতে চাইলো, ডাকাতের পাপের ভাগিদার হতে পরিবারের কেউই রাজি কিনা! কিন্তু কেউ রাজি হয় না। অবশেষে নিজাম ডাকাতের বোধোদয় হয় এবং টাকাপয়সা লুণ্ঠন ছেড়ে দিয়ে সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। এ কাহিনি থেকে আমরা অবশ্যই একটা বার্তা পাই।
এ কথা ঠিক যে, মানুষের আচার-আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে মূল্যবোধ। মূল্যবোধ পরিবর্তনশীল। দেশ-কাল-পাত্রভেদে মূল্যবোধ ভিন্ন হতে পারে। সমাজের বিবর্তন হয়। এটা কালেরই নিয়ম। এই পরিবর্তন ভালো না মন্দ তা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। কিন্তু পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। বিবর্তন সব সময় আগের চেয়ে ভালো কিছু নিয়ে আসে তা কিন্তু নয়। মূল্যবোধ রাতারাতি অর্জন করা সম্ভব নয়।
ইদানীং সামাজিক অপরাধ যেভাবে ভয়াবহ আকার ধারণ করছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হয়ে পারা যায় না। সমাজের সব স্তরেই ছড়িয়ে পড়ছে একের পর এক বীভৎস ঘটনা। মনে হচ্ছে মানুষের পারিবারিক ও সমাজ জীবন থেকে একে অপরের প্রতি মায়া-মমতা উঠে যাচ্ছে। মূল্যবোধের সংকট ক্রমান্বয়ে ঘনীভূত হয়ে উঠছে।
খুন হচ্ছে যত্রতত্র। ধর্ষণ ও সহিংসতা এ সময়ের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। মানুষের নিরাপত্তা নেই। এই নিরাপত্তা নিয়ে বড়ই উদ্বিগ্ন সবাই। তুচ্ছ কারণে একজন আরেকজনকে হত্যা করছে। বন্ধুর হাতে বন্ধু খুন হচ্ছে। মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে গণপিটুনি দিয়ে নিরপরাধ মানুষ মারা হচ্ছে। ধর্ষণের শিকার হচ্ছে শিশু থেকে শুরু করে ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধাও। সামাজিক অপরাধের মাত্রা হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। পুঞ্জীভূত ক্ষোভ, হতাশা, মাদকের প্রভাব, সম্পদের লোভ, বিচার প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা, সুস্থ বিনোদনের অভাব, আয় বৈষম্য ও সমাজের নানা অসংগতিকে এসব সামাজিক অপরাধের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। একই সঙ্গে মূল্যবোধের অবক্ষয়কে বিশেষভাবে দায়ী করা হচ্ছে। সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, ইদানীং দেশে যে হারে সামাজিক অপরাধের ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে, এখনই যদি এ অবস্থা প্রতিরোধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া না হয় তবে তা মহামারির রূপ নেবে। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে সচেতন নাগরিক এমনকি জনসাধারণের মাঝে।
দুঃখজনক হলেও সত্যি বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান সামাজিক-রাজনৈতিক সন্ত্রাস ও অবক্ষয়ধর্মী পরিণাম ঘটেই চলেছে। দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ তুলনামূলক বিচারে গৌণ। হয়তো তাই অশুভ পরিণাম ক্রমবর্ধমান। ঘটনা কখনো বর্বরতা ও নৃশংসতায় চিহ্নিত। তখন ঘটনা বিশেষে সর্বোচ্চ প্রশাসন থেকে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তার প্রভাব পড়ে না ঘটনার সামগ্রিকতার ওপর। যারা অপরাধ ছেড়ে দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে, তাদের যথাযথ পরিচর্যা করা দরকার। তারা যদি সমাজে ভালোভাবে পুনর্বাসিত হয়, তাহলে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপিত হবে। তাদের দেখাদেখি অন্য অপরাধীরাও সুস্থ জীবনে ফিরে আসার প্রেরণা পাবে। উৎসাহিত হবে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায়।