হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের প্রয়াত আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী জামায়াত-শিবিরের পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেছে দলটির একাংশ। গতকাল শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস রহমান হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শফীর শ্যালক মোহাম্মদ মঈনউদ্দিন এ অভিযোগ করেন। আল্লামা শফীকে ‘শহীদ’ উল্লেখ করে বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তি কার্যকরের দাবি জানানো হয়। লিখিত বক্তব্যে মোহাম্মদ মঈনউদ্দিন বলেন, শাপলা চত্বরে জামায়াত-শিবির, বিএনপির ফাঁদে পা না দেওয়ার পর থেকেই শফী হুজুরকে দুনিয়া থেকে বিদায় করার ষড়যন্ত্রের ফাঁদ পাতা হয়। গত ১৬ সেপ্টেম্বর কিছু ছাত্রকে উস্কে জামায়াত-শিবিরের লেলিয়ে দেওয়া ক্যাডার বাহিনীকে ব্যবহার করে মাদ্রাসা (হাটহাজারী মাদ্রাসা) অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। ওইদিন আল্লামা শফী অত্যন্ত অসুস্থ হয়ে পড়ার পর মাদ্রাসা থেকে বের করা হলে, রাস্তায় অ্যাম্বুলেন্স আটকে সময়ক্ষেপণ করে তাঁকে নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয় বলে দাবি করেন তিনি।
তিনি বলেন, ১৫ নভেম্বর হাটহাজারী মাদ্রাসায় হেফাজতে ইসলামের প্রতিনিধি সম্মেলন ডাকা হয়েছে। এই কাউন্সিলের মাধ্যমে অরাজনৈতিক কওমি সংগঠন হিসেবে হেফাজত ইসলামকে জামায়াত-শিবির, বিএনপির হাতে তুলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে দাবি করেন। আল্লামা শফীর পরিবারের পক্ষে এর প্রতিবাদ ও নিন্দা জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মইনুদ্দিন রুহী। এক প্রশ্নের জবাবে শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা যোগ দিয়েছেন স্বীকার করে তিনি বলেন, হেফাজত অরাজনৈতিক সংগঠন। রাজনৈতিক উচ্চাভিলাস ও রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য হেফাজতে ইসলাম নয়। মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্মের নাম হেফাজতে ইসলাম। এখানে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা এসে যোগ দিলেও তখন আমরা জ্ঞাত ছিলাম না।
তিনি বলেন, আমরা কোনো রাজনৈতিক দলের সিঁড়ি হতে চাই না। কোনো দলকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য হেফাজতে ইসলাম গঠন করিনি, কর্মসূচি দিইনি। কোনো দলকে ক্ষমতা থেকে নামানোর জন্যও হেফাজতে ইসলাম কর্মসূচি দেয়নি। আদর্শিকভাবে জামায়াত-শিবিরের সাথে আমাদের বিভেদ দীর্ঘদিনের।
বন্ধ দুই গণমাধ্যম খুলে দেওয়া নিয়ে নিজের আগের বক্তব্যের বিষয়ে মাওলানা রুহী বলেন, দেশের গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে কাজ করে আসছে। গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে কাজ করাতে বিশ্বাসী। কোনো গণমাধ্যম বন্ধ করা, গণমাধ্যমের কণ্ঠ রোধ করায় আমরা বিশ্বাস করি না। যেকোনো গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে প্রচারণা চালাবে। এটা তাদের নিজস্ব এখতিয়ার। কিন্তু জামায়াত-শিবিরের এজেন্ডা বাস্তবায়ন ও গণমাধ্যম খুলে দেওয়ার মধ্যে তফাৎ রয়েছে।
হেফাজতের বর্তমান শুরা কমিটিকে অবৈধ দাবি করে তিনি বলেন, বর্তমানে যারা আমির হতে চাচ্ছেন তারা শুরা কমিটির কথা বলছেন। আসলে হেফাজতে ইসলামে কোনো শুরা কমিটি নেই। একজন মহাসচিব নিজে হেফাজতের নেতৃত্বে আসার জন্য কাউন্সিলের ডাক দিয়েছেন।
তিনি দাবি করেন, হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটির সাথে আলোচনা করে কাউন্সিলের ডাক দেওয়া হয়নি। কেন্দ্রীয় কমিটির অধিকাংশ নেতাকে দাওয়াত করা হয়নি। দাওয়াত পেলে কাউন্সিলে যোগ দেবেন কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবৈধভাবে কাউন্সিল ডাকা হয়েছে। অবৈধ কাউন্সিলে যোগ দেওয়া সমীচীন মনে করছি না।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা সলিম উল্লাহ, মাওলানা সরোয়ার, মাওলানা আশ্রাব উদ্দিন, মাওলানা আতিক মোহাম্মদ, মাওলানা সরোয়ার আলম, মাওলানা মো. কাসেম, মাওলানা শামসুল হক, মাওলানা ওসমান কাসেমী ও মাওলানা মো. কাসেম।