মহানগরীতে নিবন্ধিত সিএনজি টেক্সির বাজারমূল্য বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। নিবন্ধন ফিসহ একটি নতুন সিএনজি টেক্সিতে ব্যয় হয় ৪ লাখ টাকা। কিন্তু নিবন্ধিত ওই টেক্সির দাম বাজারে ১৪ লাখ টাকা। সেই হিসেবে নগরীতে নিবন্ধিত ১৩ হাজার টেক্সির মুল্য ৫২০ কোটি টাকা হলেও বাজারমূল্য ১৮২০ কোটি টাকা। এতে ‘হাওয়ায় লাভ’ হচ্ছে ১৩শ কোটি টাকা। দিনে দিনে বাড়ছে এই মূল্য। অভিযোগ উঠেছে, জেলা এলাকায় অনিয়ন্ত্রিতভাবে নিবন্ধন হয়ে এলেও চট্টগ্রাম মহানগরীতে চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল টেক্সি নিবন্ধন দিয়েছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)। ফলে মহানগরীতে অবৈধ টেক্সির দৌরাত্ম্য বেড়েছে। এতে সরকার রাজস্ব হারালেও অবৈধ গাড়ির চাঁদাবাজির টাকা চলে যাচ্ছে কতিপয় দুর্নীতিবাজ ট্রাফিক পুলিশ, থানা পুলিশ ও নামসর্বস্ব শ্রমিক-মালিক সংগঠনের নেতাদের পকেটে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিআরটিএর উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, সরকারি নীতিমালার কারণে চট্টগ্রাম মেট্রো এলাকায় ১৩ হাজারের বেশি টেক্সির নিবন্ধন দেওয়ার সুযোগ নেই। মন্ত্রণালয় চাইলে আরো টেক্সি নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তখন বিআরটিএ থেকে নতুন করে রেজিস্ট্রেশন দেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সূত্রে জানা যায়, ২০০১ সাল থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে ১৩ হাজার করে ২৬ হাজার সিএনজি টেক্সি নিবন্ধন দেয় বিআরটিএ। এসব গাড়ির মেয়াদকাল নির্ধারণ করা হয় ১৫ বছর করে। যে কারণে পরিবেশগত ক্ষতির প্রভাবমুক্ত হতে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ইতোমধ্যে ঢাকায় নিবন্ধিত ১৩ হাজার টেক্সি ইতোমধ্যে স্ক্র্যাপ করে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। চট্টগ্রামে ২০০১, ২০০২ ও ২০০৩ মডেলে প্রস্তুতকৃত এমন সাড়ে পাঁচ হাজার টেক্সি ২০১৮ ও ২০১৯ সালে প্রতিস্থাপন সম্পন্ন হয়। করোনার কারণে মেয়াদোত্তীর্ণ অবশিষ্ট টেক্সির স্ক্র্যাপকরণ প্রায় ১০ মাস বন্ধ ছিল। আগামীকাল ১৬ নভেম্বর থেকে পুনরায় স্ক্র্যাপকরণের কাজ শুরু করছে চট্টগ্রাম বিআরটিএ। ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত টানা চার দিন ৪শ টেক্সি ধ্বংস করা হবে। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে প্রায় সাড়ে তিন হাজার পুরনো টেক্সি স্ক্র্যাপ করা হবে। স্ক্র্যাপকৃত এসব টেক্সির মালিকদের অনুকূলে নতুন কেনা গাড়ির নিবন্ধন দেবে বিআরটিএ।
সিএনজি টেক্সির মালিক, শ্রমিক ও বিআরটিএর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রাম ও ঢাকা মহানগরীতে টেক্সি নিবন্ধনের জন্য নির্ধারণ করে দেওয়া আছে। কিন্তু জেলাগুলোর জন্য সিলিং নির্ধারণ করে দেওয়া নেই। এতে দুই মহানগরীতে দিন দিন টেক্সির চাহিদা বেড়েছে। নগরীতে নতুন টেক্সি নিবন্ধনের সুযোগ না থাকায় চাইলেও কেউ নতুন করে বিনিয়োগ করতে পারছেন না। যে কারণে বিনিয়োগকারী বেশি থাকায় একেকটি গাড়ির দাম কয়েক গুণ বেড়ে গেছে।
চট্টগ্রাম সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম খোকন আজাদীকে বলেন, বর্তমানে মেট্রো নিবন্ধিত সিএনজি টেক্সির শুধু নম্বর (ডকুমেন্ট) বিক্রি হচ্ছে ৭-৯ লাখ টাকায়। মেট্রোপলিটন এলাকায় ১৩ হাজার টেক্সিকে নিবন্ধন দেওয়ার সিলিং নির্ধারণ করেছে। যে কারণে চাহিদা থাকলেও নতুন করে নিবন্ধন দিচ্ছে না বিআরটিএ। এতে নগরীতে নিবন্ধিত গাড়িগুলোর দাম বেড়েই চলেছে।
তিনি বলেন, নিয়ম রয়েছে নিবন্ধন নিশ্চিত করে কোম্পানিগুলোকে গাড়ি বিক্রি করতে হবে। কিন্তু তা মানা হচ্ছে না। আবার ট্রাফিককে মাসোহারা দিয়ে নগরীতে জেলায় নিবন্ধিত গাড়ি, বিভিন্ন জেলা থেকে আসা প্রাইভেট গাড়ি ও নিলামের গাড়িগুলো চলছে। এতে সরকার রাজস্ব হারালেও দুর্নীতিবাজ পুলিশ, ট্রাফিকরা লাভবান হচ্ছে।
চট্টগ্রাম অটোরিকশা-অটোটেম্পো শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. হারুনুর রশীদ আজাদীকে বলেন, জেলা এলাকায় এলোপাতাড়ি নিবন্ধন দেওয়া হচ্ছে। এখন মানুষ টেক্সি কিনে বিপাকে পড়েছে। অনিবন্ধিত নতুন একটি টেক্সি প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা। কিন্তু এক বছর চালানোর পর দুই লাখ টাকাও বিক্রি হচ্ছে না। অথচ এখন নতুন করে যেসব গাড়ির নিবন্ধন দেওয়া হচ্ছে, সেগুলো ১৪ লাখ থেকে সাড়ে ১৪ লাখ টাকায় হাতবদল হচ্ছে। অথচ নিবন্ধনসহ সব মিলিয়ে একটি টেক্সির দাম ৪ লাখ টাকার কম। একটি গাড়িতেই লাভ ১০ লাখ টাকা।
তিনি বলেন, জেলাতে চাহিদা না থাকলেও ইতোমধ্যে প্রায় ৪০ হাজার টেক্সি নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। অনিবন্ধিত টেক্সির সংখ্যাও অনেক। অথচ মেট্রো এলাকায় চাহিদা থাকলেও সিলিং বাড়ানো হচ্ছে না। যে কারণে অনিয়ন্ত্রিতভাবে নিবন্ধিত টেক্সিগুলোর দাম বাড়ছে।
বিআরটিএ চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপ-পরিচালক মো. শহীদুল্লাহ আজাদীকে বলেন, কোভিডের কারণে বেশ কয়েক মাস বন্ধ রাখার পর আমরা পুরনো সিএনজি টেক্সি স্ক্র্যাপকরণ শুরু করেছি। সোমবার থেকে প্রতিদিন একশ করে স্ক্র্যাপ করা হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার জন্য কম সংখ্যক গাড়ি স্ক্র্যাপ করা হচ্ছে।