বাঁশখালীতে আত্মসমর্পণ করেছে ১১ বাহিনীর ৩৪ জন জলদস্যু। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বাঁশখালী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপির হাতে অস্ত্র জমা দিয়ে তারা অনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। এসময় দেশি বিদেশি ৯০টি অস্ত্র ও ২ হাজার ৫৬ রাউন্ড গুলি জমা পড়ে।
র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মশিউর রহমান জুয়েলের সভাপতিত্বে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি শামসুল হক টুকু এমপি, বাঁশখালীর সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, কক্সবাজার-২ এর সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক এমপি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন, পুলিশের আইজিপি ড. বেনজির আহমেদ, র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার এবিএম আজাদ, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন, সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন র্যাব হেডকোয়ার্টারের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সুজয় সরকার। আত্মসমর্পণ করা জলদস্যুরা হল- আবদুল হাকিম প্রকাশ বাইশ্যা ডাকাত (৫২), আহমদ উল্লাহ (৪২), আবদুল গফুর (৪৭), ইউনুছ (৫১), নেজাম উদ্দিন ভাণ্ডারি (৪০), মাহমুদ আলী প্রকাশ ভেট্টা (৪৫), আব্দুর রহিম (৬৪), আব্দুশ শুক্কুর (২৮), ফেরদৌস (৫২), রেজাউল করিম (৪০) কামাল উদ্দিন (৪৭) মামুন মিয়া (২৭), আবু বক্কর সিদ্দিকী (৩১), বেলাল মিয়া (৩০) আবু বক্কর বাইশ্যা (২৯), সেলিম মিয়া (৩৪), আবদুল হাকিম বাক্কু (৩৫), রশিদ মিয়া (৩৬), আবদুল গফুর (২৯), পারভেজ (৩৩) সাহাদাত হোসেন দোয়েল (৪১), ইউনুছ (৫৬), ওবায়দুল্লাহ (৩৬), ইসমাঈল (২৪), তৌহিদ ইসলাম (৩৪), সাহাবুদ্দিন টুনু (৩২) দিদারুল ইসলাম পুতিক্যা (৩২), জসিম উদ্দিন (২৬) মিজানুর রহমান (২৩) মনজুর আলম (৪২), আমির হোসেন (৪৮), সাকের (৪০) নাছির (৫১) ও ইউনুছ (৪২)। এদের মধ্যে বাইশ্যা বাহিনীর ৩ জন, খলিল বাহিনীর ২ জন, রমিজ বাহিনী ১ জন, বাদশা বাহিনীর ৩ জন, জিয়া বাহিনীর ২ জন, কালাবদা বাহিনী ৪ জন, ফুতুক বাহিনীর ৩ জন, বাদল বাহিনীর ১ জন, দিদার বাহিনীর ১ জন, কাদের বাহিনীর ১ জন, নাছির বাহিনী ৩ জন ও অন্যান্য আরও ১০ জন রয়েছে। তাদের অধিকাংশই বাঁশখালী, চকরিয়া, মহেষখালী, কুতুবদিয়া ও পেকুয়া এলাকার বাসিন্দা। এসময় জমা দেওয়া অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে এলজি ৪১টি, থ্রি কোয়াটার এলজি ১৯টি, বিদেশি পিস্তল ১টি, রিভলবার ১টি, এসবিবিএল ৫টি, এসবিবিএল বন্দুক ১৬টি, ডিবিবিএল বন্দুক ১টি, ওয়ান শুটারগান ১টি, থ্রি কোয়াটার ওয়ান শুটারগান ১টি, এসবিবিএল ওয়ান শুটারগান ১টি, পাইপগান ১টি ও ২টি এয়ারগান। তাছাড়া বোরের গুলি উদ্ধার হয়েছে ৮৮৬ রাউন্ড এবং বোর রাইফেলের গুলি উদ্ধার হয়েছে ১ হাজার ১৭০ রাউন্ড।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি আইজিপি ড. বেনজির আহমেদ বলেন, যারা অপরাধ ছেড়ে দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। তিনি আরো বলেন, যারা গুজব ছড়িয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে চায় তাদের ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিঘ্ন ঘটাতে পারে এমন কোনো বিষয় চোখে পড়লে তা দ্রুত ৯৯৯-এ জানানোর আহ্বান জানান আইজিপি।
এসময় প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে মাদক ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে বলেছেন। তাই যারা অপরাধ করবে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাত থেকে রেহাই পাবে না। তবে যারা অপরাধ ও জলদস্যুতা ছেড়ে আলোর পথে আসবে তাদের কর্মসংস্থান ও মাথা উঁচু করে বাঁচার সুযোগ দেওয়া হবে। বিগত সময়ে যারা আত্মসমর্পণ করেছে তাদেরকে হত্যা ও ধর্ষণ মামলা ছাড়া অন্যান্য মামলাগুলো থেকে কিভাবে মুক্তি দেওয়া যায় সে ব্যাপারে সহযোগিতা করা হবে। অনুষ্ঠানে জলদস্যু বাইশ্যা বাহিনীর প্রধান মো. আবদুল হাকিম বাইশ্যা ও নেছার মাঝি বক্তব্য রাখেন।