ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম বিপ্লবী নাম কানাইলাল দত্ত। বিলেতি বস্ত্র বর্জনসহ স্বদেশী নানা কর্মকাণ্ডে স্থানীয়ভাবে নেতৃত্ব দিয়ে সাধারণ মানুষকে বিপ্লবের মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছিলেন তিনি। মাতৃভূমির মুক্তির লক্ষ্যে নিবেদিতপ্রাণ এই বিপ্লবী বীরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেয় ব্রিটিশরাজ। কানাইলাল দত্তের জন্ম ১৮৮৮ সালের ৩১ আগস্ট ভারতে, পশ্চিমবঙ্গের চন্দননগরে। কিশোর বয়স থেকেই বিপ্লবীদের সংস্পর্শে আসেন তিনি। বিপ্লবী দলের মুখপত্র ‘যুগান্তর’ সহ বিভিন্ন পত্রিকা, দেশে-দেশে স্বাধীনতাকামীদের বৈপ্লবিক আন্দোলনের ইতিহাস, তাঁদের জীবনচর্যা কানাইলালকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে। ‘যুগান্তর’ পত্রিকার পরিচালক বিপ্লবী চারুচন্দ্র রায়ের কাছে কানাইলাল অস্ত্র চালানো শেখেন, নেন বিপ্লববাদে দীক্ষা। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে যোগ দেওয়ার মাধ্যমে সক্রিয়ভাবে তাঁর রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়া। ১৯০৮ সালে হুগলি মহসিন কলেজ থেকে বি.এ পরীক্ষা শেষে কানাইলাল গোপন বিপ্লবী দলে যোগ দেন। পলাতক জীবনের এক পর্যায়ে সে বছরেরই ২ মে বাগবাজারের ১৫ গোপীমোহন দত্ত লেন থেকে গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। ৩০ এপ্রিল প্রফুল্ল চাকী ও ক্ষুদিরাম বসুর কিংসফোর্ড হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কানাইলাল, অরবিন্দ ঘোষ, বারীন্দ্র কুমার সহ আরো কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়। ঐ বাড়িতে ছিল বিপ্লবীদের জন্য অস্ত্র ও বারুদ। এ পরিস্থিতিতে বি.এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও রাজদ্রোহিতার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়ায় ব্রিটিশ সরকার তাঁকে ডিগ্রি প্রদানে বাধা দেয়। তবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ইংরেজদের বাধা উপেক্ষা করে কানাইলালকে বি.এ ডিগ্রি প্রদান করে। বন্দিরা আটক ছিলেন তদানীন্তন আলিপুর জেলে। এখানেই বন্দি ছিলেন এই মামলার আরেক আসামি নরেন্দ্রনাথ গোস্বামী – প্রাণ বাঁচাতে যিনি রাজসাক্ষী হয়েছিলেন। এই ঘটনায় বিপ্লবীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। ১৯০৮ সালের ৩১ আগস্ট দলপতির নির্দেশে কানাইলাল সত্যেন্দ্রনাথ বসুর সহায়তায় জেলের ভেতরেই নরেণ গোস্বামীকে হত্যা করে। বিচারে কানাইলালের ফাঁসির আদেশ হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে তিনি কোনো আপিল করেন নি। ১৯০৮ সালের ১০ নভেম্বর দৃঢ়চেতা, নির্ভিক এই বীর বিপ্লবীর ফাঁসি কার্যকর হয়।