যুদ্ধোত্তর পাশ্চাত্যের কবিতায় অবিস্মরণীয় এক কবি প্রতিভা ডিলান টমাস। ইংল্যান্ডের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই কবি যুক্তরাষ্ট্রেও ছিলেন জনপ্রিয়। যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর কবিতার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়লে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী হন। ডিলান টমাসের জন্ম ১৯১৪ সালে লন্ডনের সোয়ানলি অঞ্চলের সমুদ্র উপকূলে। হৃদয় দিয়ে তিনি উপভোগ করেছেন প্রকৃতির পালাবদল। যা তাঁর কবিতার অনুষঙ্গ হয়েছে। তবে কেবল রোমান্টিকতার বৃত্তে আবদ্ধ থাকেন নি কবি। ১৯৩৪ সালে ২০ বছর বয়সে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘১৮টি কবিতা’ প্রকাশিত হলে কাব্যভুবনে তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। কবিতার পাশাপাশি চলচ্চিত্র ও বেতারের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন স্বল্প সময়। চিত্রনাট্য লেখা তাঁর কবিতায় যোগ করেছে ভিন্ন মাত্রা। ডিলানের কবিতার অনুষঙ্গ হয়ে এসেছে ব্যক্তি জীবনের বিভিন্ন স্মৃতি, জন্ম শহরের কথা, ভ্রমণ বৃত্তান্ত, রোমান্টিকতা এবং যুদ্ধ ও যুদ্ধ-বিরোধিতা। যুদ্ধ সব সময় তাঁকে বিব্রত, ব্যথিত ও বিপর্যস্ত করতো। যুদ্ধবিরোধী বেশ কিছু কবিতা লেখেন তিনি। তাঁর রচনা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় বিষয়বস্তুর বৈচিত্র্যে তা এক ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে। প্রকৃতি, প্রেম, রহস্য, নারী, মনস্তত্ত্ব, পরাবাস্তবতা, মৃত্যুচিন্তা – সব মিলিয়ে এক বৈচিত্র্যের সমাহার। ভাষাশৈলী, বাক্যনির্মাণ, চিত্রকল্প, প্রতীক তাঁর কবিতাকে অপূর্ব ব্যঞ্জনাময় করে তোলে। আর এই বহুমাত্রিকতার ফসল সনেট, মুক্তছন্দের কবিতা, গদ্য কবিতা প্রভৃতি। তাঁর রচনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য : ‘ডেথ অ্যান্ড এন্ট্রি লিরিক’, ‘আন্ডার মিল্ক উড’; কবিতা বিষয়ক গদ্য ‘কবিতা বিষয়ে কবি’; আত্মজীবনী ‘পোর্ট্রেট অব দ্য আর্টিস্ট অ্যাজ আ ইয়ং ডগ’ ইত্যাদি।
দারিদ্র্যের সাথে আজীবন লড়াই করেছেন কবি। মঞ্চনাটকের চিত্রনাট্য রচনা, বিবিসির সংবাদ বুলেটিন তৈরি, অনুষ্ঠান উপস্থাপনা ইত্যাদির মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করতে হয়েছে। ১৯৫৩ সালের ৯ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে প্রয়াত হন কবি ডিলান টমাস।