চন্দনাইশে যৌতুকের বলি হলেন এক সন্তানের জননী। তার নাম তাসনিম ইবনাত মীম (২১)। তার সংসারে আরহাম নামে ১৭ মাস বয়সী ১টি পুত্র সন্তান রয়েছে।
উপজেলার বরকল ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড আবদুল মজিদ মেম্বারের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। এ ব্যাপারে ভিকটিমের পিতা রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে চন্দনাইশ থানায় একটি এজাহার দায়ের করেছেন।
থানায় দায়েরকৃত এজাহারে জানা যায়, কাঞ্চনাবাদ ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড পশ্চিম এলাহাবাদ সুলতান সওদাগর বাড়ির রফিকুল ইসলামের কন্যা তাসনিম ইবনাত মীমের সাথে বরকল ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড আবদুল মজিদ মেম্বার বাড়ির মৃত আবদুল মজিদের পুত্র প্রবাসী বাবুল মিয়া প্রকাশ নাজিম উদ্দীনের সামাজিকভাবে গত ২০১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিয়ে হয়।
বিয়ের পর সুখেই চলছিল তাদের সংসার। ইতিমধ্যে তাদের সংসারে আসে একটি ফুটফুটে পুত্র সন্তান কিন্তু তাসনিম ইবনাত মীমের সুখ বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। পাঁচ লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে শুরু হয় তার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। তার স্বামী বিদেশ চলে যাওয়ার পূর্বেও স্ত্রীকে বলে যায় পাঁচ লাখ টাকা যৌতুকের দাবি পূরণ করা না হলে তার সাথে সংসার করা সম্ভব নয়।
এদিকে স্বামীর অনুপস্থিতিতেও তার শাশুড়ি ও দেবর মিলে চালাতে থাকে নির্যাতন।
সর্বশেষ গত ২ নভেম্বর গভীর রাতেও তার স্বামী মোবাইল ফোনে ভিডিও কল দিয়ে পাঁচ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে।
এসময় তিনি যৌতুকের টাকা দিতে পারবেন না বলার পর শাশুড়ি ও দেবর মিলে তাকে বেধম মারধর করার এক পর্যায়ে জোরপূর্বক মুখে বিষ ঢেলে দেন। সেই রাতে তাকে চিকিৎসাও দেয়া হয়নি।
বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে শ্বশুরপক্ষের লোকজন পর দিন ৩ নভেম্বর সকালে বমি ও ডায়রিয়া হয়েছে জানিয়ে তাকে বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দিয়ে পুনরায় বাড়িতে নিয়ে আসে।
গত ৪ নভেম্বর সকালে স্থানীয় লোকজন বিষয়টি মোবাইল ফোনে জানানোর পর নির্যাতনের শিকার মীমের পিতা রফিকুল ইসলাম ও মা ইয়াছমিন আকতার মেয়ের বাড়িতে গিয়ে তাকে আহত অবস্থায় দেখতে পান। এসময় তার শ্বশুরপক্ষের লোকজন পালিয়ে যায়।
মেয়ের মুখে নির্যাতনের কথা শুনে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় তাকে পুনরায় বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান তারা। সেখানে তার অবস্থার পরিবর্তন না হওয়ায় ঐইদিন রাতেই তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
সেখানে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় পরদিন গত ৫ নভেম্বর রাত ৮টার দিকে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
পরবর্তীতে ময়নাতদন্ত শেষে গত ৬ নভেম্বর চন্দনাইশ থানা প্রশাসনের সহায়তায় রাত ৮টার দিকে নামাজে জানাজা শেষে উপজেলার পশ্চিম এলাহাবাদের পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
এব্যাপারে নিহত তাসনিম ইবনাত মীমের পিতা রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে তার স্বামীসহ ৩ জনকে আসামী করে চন্দনাইশ থানায় একটি এজাহার দায়ের করেন।
চন্দনাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাসির উদ্দীন সরকারের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তিনি রিসিভ না করায় এ বিষয়ে তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।